ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ভেন্যু জটিলতায় এ বছরও হচ্ছে না বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ১১:২৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

ভেন্যু জটিলতায় এ বছরও হচ্ছে না বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব

মনোয়ার হোসেন ॥ সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয় রাঙিয়ে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। দেশের শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের নবজাগরণের বার্তাবহ উৎসবটি একটানা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। রাত জাগানিয়া বিপুল শ্রোতা-দর্শকের উপস্থিতির সঙ্গে সময়ের ব্যাপ্তি ও শিল্পীর অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতাসরে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উৎসবের সব অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে বনানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে। ২০১৭ সালে ষষ্ঠতম আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ধানম-ির আবাহনী মাঠে। এরপর ২০১৮ সালে এসে থমকে যায় সপ্তমবারের আসর। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উৎসব আয়োজনে বিরত থাকে আয়োজক কর্তৃপক্ষ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। আর এ বছর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও উৎসব ভেন্যু বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পাওয়ায় অনুষ্ঠিত হবে না বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৯। আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বাতিল করা হয়েছে আয়োজন। এ বিষয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ২৮ নবেম্বর থেকে সপ্তমবারের মতো পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল। আয়োজনের সকল প্রস্তুতিও আমরা সম্পন্ন করেছিলাম। দেশ-বিদেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে যোগাযোগসহ উৎসবের চূড়ান্ত পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু উৎসবের ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পাওয়ায় এবছরও অনুষ্ঠিত হবে না উৎসব। আর্মি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে ভেন্যু বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ২১ অক্টোবর তারা চিঠির মাধ্যমে ভেন্যুর ছাড়পত্র না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানায়। এই পরিস্থিতিতে আমরা উৎসব বাতিলের সিদ্ধান্ত করতে বাধ্য হই। এদিকে উৎসব আয়োজনে দুই শতাধিক দেশী-বিদেশী শিল্পী ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। চূড়ান্ত মুহূর্তে উৎসব না হওয়ার খবরে এই শিল্পীরা মর্মাহত হয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশী শিল্পীরা দেশের শ্রোতা-দর্শকের সামনে উপস্থিত হতে না পারায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ২০১৭ সালে সর্বশেষ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ধানম-ির আবাহনী মাঠে। কিন্তু বর্তমানে ওই মাঠের উন্নয়ন কাজ চলায় সেখানেও উৎসব আয়োজন করা সম্ভব নয়। অন্য কোন স্থানেও এ ধরনের বৃহৎ পরিসরের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বিদেশী শিল্পীরা ভেন্যু হিসেবে আর্মি স্টেডিয়ামকে নিরাপদ মনে করেন। আক্ষেপের সুরে এই সংগঠক বলেন, উৎসবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দারুণ সমাদৃত হয়েছিল। সুনাম বয়ে এনেছে দেশের জন্য। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের নবজাগরণের বারতা দিয়েছিল এই উৎসব। দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের দিকপালরা রাঙিয়ে তুলেছেন এই উৎসব। এদেশের বিপুলসংখ্যক শ্রোতার উপস্থিতি এবং সারারাত ধরে গান শোনার প্রবণতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন উৎসবে অংশ নেয়া ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের ওস্তাদ, প-িত ও বিদুষীরা। অন্যদিকে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের মনীষীদের সামনাসামনি দেখার এবং তাদের পরিবেশিত অনবদ্য কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত এবং নৃত্য পরিবেশনা তুমুলভাবে উপভোগ করেছেন এদেশের শ্রোতা-দর্শকরা। বিশেষ করে উৎসবে আগতদের একটা বড় অংশ ছিল তরুণ প্রজন্ম। উৎসবের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশী শিল্পীদের অংশগ্রহণের হার ও পরিবেশনার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই এ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ শিল্পী গানে, বাদ্যে ও নৃত্যে তাদের কুশলতা পরিবেশন করেছেন মঞ্চে। এ উৎসবের দেশের সংস্কৃতি ভুবনে আমরা নতুন করে একটি পথরেখা তৈরি করেছিলাম। এ কারণে আমাদের চাওয়াটি হচ্ছে, অন্য কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারী সংস্থার মাধ্যমেও যেন উৎসবটি আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। ২০১২ সালে সূচনা হওয়া উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব শুরুতে তিন দিনের হলেও শ্রোতার ভাললাগা ও ভালবাসার সুবাদে পরবর্তীতে আসরটি গড়ায় পাঁচ দিনে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের বিপুলসংখ্যক শ্রোতা উপভোগ করেছেন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গীতাসরটি। তাই এবছর এ উৎসব বাতিল হওয়ায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আফসোস করেছেন অনেকেই। তেমনই একজন আগা তৌফিক আলম। ২০১২ সাল থেকে প্রতিটি উৎসব উপভোগকারী এই শ্রোতা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর এই উৎসবটির অপেক্ষায় থাকি। টানা ছয়টি উৎসব উপভোগ করেছি। সুর-তাল আর লয়ের খেলায় মোহাচ্ছন্নভাবে কেটে গেছে সন্ধ্যা থেকে ভোর। যান ও জনজটের যান্ত্রিক এই শহরে এই উৎসবটি আমার কাছে ধরা দিয়েছিল একখ- প্রশান্তির পরশ হিসেবে। শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের সুরের আবেশে কেটে যেত মন ভাল করা পাঁচটি রাত। কিন্তু গত বছর থেকেই বঞ্চিত হই সেই আনন্দ থেকে। এ বছরও তেমনটাই ঘটছে। মঙ্গলবার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, আগামী ২৮ নবেম্বর থেকে পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের সপ্তম অধিবেশন আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। প্রতিবারের মতো এবছরও গোড়ার দিকে পাঁচ দিনব্যাপী সারা রাতের অনুষ্ঠানের জন্য আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দের জন্য সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে আবেদন করা হয়। জুলাই মাসের মধ্যে ভারতের প্রথম সারির উচ্চাঙ্গসঙ্গীতশিল্পী এবং বাংলাদেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়। বড় পরিসরের এই উৎসব আয়োজনের জন্য নিরাপত্তা, যাতায়াত সুবিধা এবং মানুষ জমায়েতের জন্য উপযুক্ত আর্মি স্টেডিয়ামের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ২০১৯ সালের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
×