ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফের টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা

খোলস পাল্টে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এখন আনসার আল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১:২১, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

খোলস পাল্টে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এখন আনসার আল ইসলাম

গাফফার খান চৌধুরী ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এখন আনসার আল ইসলাম নামে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। খোলস পরিবর্তন ছাড়া জঙ্গী সংগঠনটির কোন কিছ্ইু পরিবর্তন হয়নি। দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য আবারও টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা করছে জঙ্গী সংগঠনটি। সৃষ্টির পর থেকেই জঙ্গী সংগঠনটি জামায়াত-শিবিরের সহায়তা পাচ্ছে। ভোলায় ফেসবুক মেসেঞ্জারে মহানবী (সা) নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষে চার জনের নিহত হওয়ায় সারাদেশে চলমান উত্তেজনাকে কাজে লাগাতে চায় জঙ্গী সংগঠনটি। সম্প্রতি পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সংগঠনটির আট সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে জামায়াত-শিবিরের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদে একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে থাকে। ঘটনাটি শুরু হয় ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করার সূত্রধরে। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়। সেই মঞ্চে যোগ দেন মুক্তমনা, প্রগতিশীল লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে এত মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে এবং সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে জামায়াত-শিবিরের সরাসরি মদদে একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন, বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা ও ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্র হেফাজত সমর্থক মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেটের সুবিদবাজারে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, ঢাকার খিলগাঁওয়ে ব্লগার নীলাদ্রী চ্যাটার্জী নিলয়, পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন (এলএলএম) কোর্সের ছাত্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নাজিম উদ্দিন সামাদ, ঢাকার লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল (৫০), লেখক এবং ব্লগার প্রকৌশলী তারেক রহিম (৪২) ও রন দীপম বসুকে (৪০) হত্যাচেষ্টা, একই দিন রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে (৪০) গলা কেটে হত্যা, কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু তন্ময় হত্যার ঘটনা ঘটে। সূত্রটি বলছে, প্রতিটি হত্যাকা-ের পর পরই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে দায় স্বীকার করে বিবৃতি আসে। আর সেই বিবৃতিকে সমর্থন করে আইএসের নামেও বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ পুলিশের ওপর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনার পরও আইএসের নামে বিবৃতি প্রকাশিত হয়। এমন বিবৃতি একটি গোষ্ঠীর তরফ থেকে আইএসের নামে দেয়া হয়। মূলত আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হত্যাকা-ের পর আনসারুল্লাহ নামে বিবৃতি প্রকাশের জেরে ব্যাপক অভিযান চলতে থাকে। এজন্য তারা নাম পরিবর্তন করে ফেলে। তারা আনসার আল ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আনসার আল ইসলামই হচ্ছে মূল সংগঠন। তবে হত্যাকা-ের পর যাতে প্রকৃত সংগঠনটির নাম প্রকাশ না পায় এজন্য তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে বিবৃতি প্রকাশ করত। যাতে মূল সংগঠন আড়ালেই থেকে যায়। কিন্তু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে। সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে জঙ্গী সংগঠনটির তৎপরতা কম ছিল। সম্প্রতি নানা ইস্যুতে তারা আবার সক্রিয় হচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট ঢাকা। তারা ঢাকায় বড় কিছু ঘটিয়ে সারা দুনিয়ায় তাক লাগিয়ে দিতে চায়। যাতে আইএস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনুদান দিয়ে। আইএসের বিশ্বস্ততা অর্জন করতেই মারাত্মক ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর চেষ্টা করছে আনসার আল ইসলামের জঙ্গীরা। গত ১০ অক্টোবর রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে জঙ্গী সংগঠনটির চার সদস্য গ্রেফতার হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের হাতে। গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সদস্য জোগাড় করার পর গ্রেফতারকৃতরা তাদের সুন্দরবন ও বান্দরবানে নিয়ে যেত। সেখানে তাদের কথিত ‘জিহাদী প্রশিক্ষণ’ দেয়া হতো। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ঢাকায় এনে টার্গেট কিলিং ও নাশকতা চালানোর জন্য দলের তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া হতো। এরপর গত ২১ অক্টোবর ঢাকার গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকা থেকে র‌্যাব জঙ্গী সংগঠনটির আরও সদস্যকে গ্রেফতার করে।
×