ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হেফাজত ফের শাপলা চত্বরে যেতে চায়

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

হেফাজত ফের শাপলা চত্বরে যেতে চায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় হেফাজতের নেতারা দোষীদের শাস্তি না হলে আবারও শাপলা চত্বরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ভোলার ঘটনায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা। সমাবেশের সময় দৈনিক বাংলা মোড় থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমাদের কাছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সম্মান অনেক বেশি। দোষীদের শাস্তি না হলে আমরা আবারও শাপলা চত্বরে যাব। সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর আমির আল্লামা নূও হোসেন কাসেমী বলেন, আল্লাহর নবীর সঙ্গে যারা বেয়াদবি করেছে, তাদের জনতা কষনও মেনে নেবে না। যারা আল্লাহর নবীর মান ইজ্জত রক্ষা করতে পারে না তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। তিনি বলেন, একটি আইন করতে হবে যে আইনে আল্লাহ্ তা’য়ালা ও নবী-রাসূলগণের কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হবে। এই আইন না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন চলবে। নূর হোসেন কাসেমী বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ। হেফাজতে ইসলাম শান্তিতে বিশ্বাসী, সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। আমরা দেশের শান্তি রক্ষা করতে চাই। তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব, কিন্তু কোনভাবেই আল্লাহ্র হাবিবের সঙ্গে করা বেয়াদবি মেনে নেয়া হবে না। তিনি বলেন, যদি দোষীদের শাস্তি না হয় তাহলে আমরা বসে থাকব না, আঙ্গুল চুষব না। এ সময় সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন কাসেমী। সেগুলো হচ্ছে, ভোলায় পুলিশের মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারদের অবিলম্বে মুক্তি, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও ভোলার এসপিকে প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশ থেকে ইস্কনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। হেফাজতের ঢাকা মহানগর নেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নবীপ্রেমিকদের ওপর অত্যাচার প্রথম নয়। যারা আমার এই ভাইদেও মেরেছে তাদের বিচার যদি না হয় তাহলে আরেকটি শাপলা চত্বরের মতো ঘটনা ঘটবে। এদিকে সমাবেশ চলাকালে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। সমাবেশে তারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে কটূক্তিকারী ও ভোলার সংঘর্ষের বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সঙ্গে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। গত রবিবার ফেসবুক মেসেঞ্জারকে কেন্দ্র কওে ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানান, তাদের মধ্যে দু’জনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো ছিল। ওই ঘঁনায় ভোলার অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। রবিবার রাতে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন এ মামলা করেন। অপরদিকে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্য মারাত্মক জখম হন। আক্রমণকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত এক পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ থেকে একজন কওে মোট চারজন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীতে পুরো ঢাকা অচল কওে দেয় হেফাজতে ইসলাম। তারা রাজধানীর মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংসলীলা চালায়। তবে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের কৌশলি ভূমিকা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহসী অভিযানে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর থেকে জানান, আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তিকারী ইসকন সদস্য বিপ্লব চন্দ্র শুভকে গ্রেফতার ও ভোলায় পুলিশের গুলিতে হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে গাজীপুরে মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে বাদ জোহর গাজীপুর মহানগরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের রাজবাড়ি রোড হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সামনের গেটে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে হেফাজতের নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক তৌহিদী জনতা অংশ নেয়। সমাবেশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বক্তব্যকালে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তিকারী উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সদস্য বিপ্লব চন্দ্র শুভকে গ্রেফতার করে তার মৃত্যুদ- শাস্তি দাবি করেন। এছাড়া অবিলম্বে জাতীয় সংসদে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তিকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- আইন প্রনয়নের দাবি জানান। এছাড়া নেতৃবৃন্দ ভোলার ঘটনায় হাজার হাজার তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। বক্তারা অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
×