ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জেদ্দায় চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত

একনেকে ৪৬৩৬ কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

একনেকে ৪৬৩৬ কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা দিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়াও বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রসহ সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য ৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৩ হাজার ১৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জেদ্দা শহরে এবং শহরের বাইরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাজের পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য যাওয়া বাংলাদেশীদের সহায়তা ও ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টিও এ প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রী। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের এই প্রকল্পটি ২০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী চ্যান্সারি ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের কাছ থেকে ১৫৪ কাঠা আয়তনের দুটি প্লট কেনা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিনটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মূল চ্যান্সারি ভবনটি হবে তিনতলা বিশিষ্ট, যার আয়তন হবে ছয় হাজার ৩৫৪ বর্গমিটার। এছাড়া ছয় হাজার ৬০ বর্গমিটার আয়তনের একটি অফিসার্স আবাসিক ভবন এবং ছয় হাজার ৩০০ বর্গমিটারের স্টাফ আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চ্যান্সেরি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ডিজাইন ও পরামর্শকসহ সবাই একসঙ্গে গিয়ে যেন সমন্বয় করে কাজ করে, যাতে প্রকল্পটি কোনভাবে অগোছালো না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই কমপ্লেক্স প্রবাসীদের, তাই তারা যেন এখানে ফ্রি এক্সসেস পায়, পানি পায়, টয়লেট সুবিধা পায়। যে কোন বাংলাদেশী ওখানে গিয়ে যেন ভালভাবে বসতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সৌদি আরবে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের কনস্যুলেটগুলোর মধ্যে জেদ্দা অন্যতম বৃহৎ একটি কনস্যুলেট। বর্তমানে এখানে প্রায় ১১ জন কর্মকর্তা এবং ৪০ জনের বেশি স্টাফ কর্মরত রয়েছেন। এই কনস্যুলেটের কার্যক্রম একটি ভাড়া করা ভবন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এ রকম ভাড়া করা একটি ভবনে সৌদি আরবের মতো বৃহৎ জনশক্তির বাজারে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেবা দেয়া ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর কনস্যুলেট ভবন, অফিসার ও স্টাফ কোয়ার্টার এবং হলরুমের ভাড়া বাবদ প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়াও একনেক সভায় বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি ৭৬ টাকা। এর মধ্যে বিশ^ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ৩১৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি ১০ কোটি টাকা সরকারী তহবিল থেকে যাবে। এই প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় সাইক্লোন সেন্টারগুলো হবে বহুমুখী ব্যবহারের জন্য। এগুলো স্কুল হিসেবেও ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব সাইক্লোন সেন্টারের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে সংযোগ সড়ক তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য স্থায়ী রিজারভার এবং স্টোর রুম থাকতে হবে, যাতে দুর্যোগকালে প্রয়োজনীয় জিনিস স্টোর রুমে রাখা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মান্নান বলেন, অপচয় দুর্নীতির চেয়েও ভয়ঙ্কর। কেননা দুর্নীতি হলে তো ধরা যায়; কিন্তু অপচয়ের ব্যয় তো নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অপচয় হচ্ছে সময়। তাই অপচয় রোধ করে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প জনবলসহ প্রক্রিয়াকরণ ও অর্থায়নের ধাপ যাতে কমানো যায় সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এখন থেকেই কাজ শুরু করব। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রকল্পগুলোর মধ্যে বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি ৭৬ টাকা। সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া চাষাঢ়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদানাইল-আদমজী ইপিজেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এ্যান্ড রেফারেল সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের পঞ্চম দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোন ব্যয় বাড়ানো হয়নি। যেহেতু প্রকল্পটি পঞ্চমবার সংশোধন করা হয়েছে তাই এটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। জমি নিয়ে মামলা থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
×