ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলিয়ান ব্রুনোর চার গোলে টেরেঙ্গানুর দাপুটে জয়

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২২ অক্টোবর ২০১৯

ব্রাজিলিয়ান ব্রুনোর চার গোলে টেরেঙ্গানুর দাপুটে জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তির জানান দিয়ে দিল মালয়েশিয়ান ক্লাব টেরেঙ্গানু এফসি। মঙ্গলবার বিকেলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে ‘বি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ভারতীয় ক্লাব চেন্নাই সিটি এফসিকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে কোচ নাফুজি বিন জারিনের দল। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গোল উৎসবের ম্যাচে টেরেঙ্গানুর হয়ে পাঁচ গোলের মধ্যে হ্যাটট্রিকসহ একাই চারটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ব্রুনো সুজুকি। দলের অপর গোলটিতেও অবদান রাখেন তিনি। অনুমিতভাবেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এই তারকা। ১৯৯০ সালের ২০ মে ব্রাজিলের সাওপাওলোর পাশ্ববর্তী শহর পারা’র কাস্টানহালে জন্ম নেয়া এই ফুটবলার বর্তমানে স্বপরিবারে জাপানের নাগরিক। ছয় বছর আগে তিনি জাপানের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার ক্লাব টেরেঙ্গানুতে অতিথি হিসেবে খেলছেন টেরেঙ্গানু টু ক্লাব থেকে। এ্ই ক্লাবটিও মালয়েশিয়ান সুপার লীগে খেলে থাকে। চার গোল করার পর সাংবাদিকদের ব্রুনো বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের প্রথম চার গোল। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ। এজন্য আমি আমার সতীর্থ, কোচ, টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ প্রথম মিনিট থেকেই ম্যাচটি উপভোগ্য হয়ে উঠে। দু’দলের নান্দনিক ফুটবলশৈলিতে মুদ্ধ হয়েছেন মাঠে উপস্থিত দর্শকরা। দুর্দান্ত খেলা টেরেঙ্গানু ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে অসাধরণ সংঘবদ্ধ আক্রমণে গোল করে এগিয়ে যায়। মাঝমাঝ থেকে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লি টাক পাঠিয়ে দেন ডান পাশে ব্রুনোকে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এই ফরোয়ার্ড বাড়িয়ে দেন ডান দিকে। চলতি বলতে কোনাকুনি শটে গোল করেন মিডফিল্ডার মোহাম্মদ রহমত বিন মাকাসুফ (১-০)। ১৬ মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হয় চেন্নাইয়ের। ডি বক্সের মাথা থেকে অধিনায়ক পেড্রো জ্যাভিয়ের মাঞ্জি ক্রুজের শট তালবুন্দী করেন টেরেঙ্গানু গোলরক্ষক মোহাম্মদ ইলহাম। ২৪ মিনিটে টেরেঙ্গানুর রক্ষণভাগের ভুলে সমতা ফেরায় চেন্নাই। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক লি টাকের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন জাপানী মিডফিল্ডার কাটসুমি ইউসা (১-১)। ৩৪ মিনিটে এগিয়ে যায় চেন্নাই। গোলটি রীতিমতো প্রতিপক্ষকে উপহার দেন মালয়েশিয়ান ক্লাবটির গোলরক্ষক। চেন্নাইয়ের ফরোয়ার্ড মাশহুর শেরিফ টেরেঙ্গানুর বক্সে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন। এরপর বলটি তালবুন্দী করতে পারেননি টেরেঙ্গানুর গোলরক্ষকও। তার ছোয়া লেগে কর্ণার হতে যাচ্ছিল। কিন্তু কর্নার বাঁচাতে যাওয়া গোলরক্ষকের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে জালে জড়িয়ে দেন মাশহুর শেরিফ (২-১)। এর পর শুরু হয় ব্রুনোর জাদু। তার নৈপূন্যে ৩৮ মিনিটে সমতা ফেরায় টেরেঙ্গানু। চেন্নাইয়ের ডি বক্সের মধ্যে চারজন বল আদান-প্রদান করে দৃষ্টিনন্দন গোল আদায় করেন। প্রথমে কামাল আজিজি বল দেন রহমতকে। এই মিডফিল্ডারের কাছ থেকে বল পান সানজার শাকমেদভ। তার ক্রসে নিচু হেডে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ব্রুনো (২-২)। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে আবারও এগিয়ে যায় টেরেঙ্গানু। এবার বামপ্রান্ত থেকে বল নিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন ব্রুনো (৩-২)। বিরতির পরপরই এবং ৫২ মিনিটে দু’টি সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয় চেন্নাইয়ের। প্রথমে ফরোয়ার্ড পেড্রো মাঞ্জি ক্রুজ ও পরেরবার ডিফেন্ডার রবার্টো সুয়ারেজের শট সাইডপোস্ট ঘেষে বাইরে যায়। ৫৬ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হয় টেরেঙ্গানুর। চেন্নাইয়ের রক্ষণভাগের ভুলে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে ডি বক্সে ঢুকে শট নেন মোহাম্মদ ইসমাইল। এই মিডফিল্ডারের শট গোলরক্ষক নাউজেট গার্সিয়া কর্ণারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন। দুই মিনিট পর জোড়া গোলদাতা ব্রুনোর পাসে বারপোস্টের উপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন ফরোয়ার্ড সানজার শাকমেদভ। ৭০ মিনিটে আবারও ব্রুনো-ঝলক। ডানপ্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার ডেসি মার্সেলের পাস পেয়ে বুলেট শটে বল জালে জড়িয়ে দেন পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা এই ফরোয়ার্ড (৪-২)। এর ফলে টুর্নামেন্টের প্রথম হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন ব্রুনো। ৮১ মিনিটে চেন্নাইয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ব্রুনোই। এবার ডানপ্রান্ত দিয়ে বদলি মিডফিল্ডার নুর সরকারের বাড়ানো ক্রসে প্লেসিং শটে জাল কাঁপান বর্তমানে জাপানের নাগরিক ব্রুনো (৫-২)। ৮৮ মিনিটে ডি বক্সে সাঞ্জির হাতে বল লাগলে পেনাল্টি পায় চেন্নাই। স্পট কিক থেকে গোল করে ব্যবধান ৫-৩ করেন চেন্নাইয়ের ফরোয়ার্ড পেড্রো ক্রুজ। ম্যাচে টেরেঙ্গানু তিনটি গোলই চেন্নাইকে একপ্রকর ‘উপহার’ দিয়েছে! কেননা ভারতীয় ক্লাবটি সবগুলো গোলই গোলই পেয়েছে টেরেঙ্গানুর রক্ষণভাগের ভুলে।
×