ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শৃংখলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শাও নোটিস, এসএ গেমসের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় টিটি তারকা মাহবুব

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২২ অক্টোবর ২০১৯

শৃংখলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শাও নোটিস, এসএ গেমসের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় টিটি তারকা মাহবুব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) ত্রয়োদশ আসর। আংশগ্রহণকারী সাত দেশের একটি বাংলাদেশ। মোট ২৮টি ক্রীড়া ইভেন্টের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নেবে বাংলাদেশ। তার একটি হচ্ছে টেবিল টেনিস (টিটি)। লাল-সবুজরা এই ইভেন্ট থেকে ভাল কিছুর প্রত্যাশা করছে। এজন্য কয়েক মাস ধরে ঢাকার পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে আবাসিক ক্যাম্প চলছে বাছাই করা টিটি খেলোয়াড়দের নিয়ে। কিন্তু ক্যাম্প শুরুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এমন কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বর্ণপদক তো দূরের কথা, এই ইভেন্ট থেকে নুন্যতম তাম্রপদক পর্যন্ত অর্জন করতে পারবে কি না বাংলাদেশ টিটি দল, এ নিয়ে আছে ঢের সংশয়! একে একে আসা যাক বিগত কয়েক মাসে টিটি ক্যাম্পে কি কি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমেই সর্বশেষ ঘটনার কথাই বলা যাক। ছুটি শেষে ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে নড়াইলে সংবাদ সম্মেলন করা, সতীর্থদের উস্কানি দেয়া, এসএ গেমসের ক্যাম্পে থাকার পরও কোর্টে জল ঢেলে অনুশীলনের ক্ষতি করা ... এমন বেশকিছু গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারণ দর্শাও নোটিস দেয়া হয়েছে জাতীয় টিটি তারকা খেলোয়াড় খোন্দকার মাহবুব বিল্লাহকে। ১৯ অক্টোবর এ নোটিস দেয়া হয় বলে জানান টিটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গীর আলম। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, অনেকই আশঙ্কা করছেন মানস-সেতু-রুমীর পর এবার ক্যাম্প থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন মাহবুবও। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এসএ গেমসের জন্য খেলোয়াড়দের দুই বেলা অনুশীলন বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এই নিয়ম না মানায় ইতোমধ্যেই টিটির ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন ৫ বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরী, ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন সালেহা খাতুন সেতু এবং চারবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমানে দেশের শীর্স র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড় মৌমিতা আলম রুমী। তবে ছুটি শেষে ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে সেতু ও রুমির জন্য নড়াইলে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন মাহবুব বিল্লাহ। ফেডারেশনের অভিযোগ, ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বেশ কিছু অসত্য তথ্য দিয়েছেন মাহবুব। যেখানে বলা হয়েছে সেতু ও রুমীকে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়েছে ফেডারেশন। অথচ বিওএ’র কঠোর নির্দেশনা না মানাতেই তারা বাদ পড়েছেন। এমনকি তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্র থেকেও দু’বেলা অনুশীলনের অনুমতি আনতে পারেননি সেতু ও রুমী। তাই তারা নিয়মমাফিক বাদ পড়েছেন। তাছাড়া ছুটি শেষে মাহবুবের ক্যাম্পে যোগ না দেয়াটাও ছিল শৃংখলা পরিপন্থী। ফেডারেশন কৃর্তক শোকজ লেটারে আরও লেখা আছে- লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উল্লেখ করেছিলেন সেতু ও রুমীকে সহ-সভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীর ও সদস্য এটিএম শামসুল আলম সাহেবের চাপে বাদ দেয়া হয়েছে। যা আপত্তিকর ও অন্যায় কথা। কারণ ফেডারেশন চালিত হয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক। অভিযোগে জানা যায়, আরেক নারী টিটি খেলোয়াড় সাদিয়া রহমান মৌকে বিশেষ সুবিধা দেন বলেও এটিএম শামসুল আলমের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন মাহবুব। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, ‘একজন ভাল খেলোয়াড়তো একটু সুবিধা বেশি পেতেই পারেন। এবারের বাছাইয়ে নারীদের মধ্যে এক নম্বর হয়েছে মৌ। এতে তো কোন অন্যায় দেখি না।’ অভিযোগে আরও জানা যায়, বাছাই খেলতে চাওয়ায় রহিমা আক্তারের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন মাহবুব। শোকজ পাওয়ার পরদিনই অনুশীলন কোর্টে জল ঢেলে রাখেন তিনি! ছয়বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নের এমন ঘটনায় বিরক্ত হয়ে আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হয় ফেডারেশন। পল্টন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসে বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে দিয়ে যান এবং মাহবুব তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চান। এর আগেও শৃংখলাভঙ্গের দায়ে দু’বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মাহবুব। আট মাস পর অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়েই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন মাহবুব। এভাবে শৃংখলাভঙ্গ করতে থাকলে একদিন হয়তো টিটি থেকেই হারিয়ে যাবেন তিনি!’ অবশ্য কোর্টে জল ঢালার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেননি মাহবুব, ‘ম্যাট পরিস্কার করতে গিয়ে হয়তো জল কিছুটা বেশি ছিল। আর এতেই চটেছেন সবাই।’ এ মাসের শুরুতেই নিয়ম না মেনে ক্যাম্প না করায় মানস ও সালেহাকে এসএ গেমসের ক্যাম্প থেকে বাদ দেয়া হয়। বাদ পড়ে তারা লিগ্যাল নোটিস পাঠান ফেডারেশন বারাবর। এরপর ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন রুমী। তিনি সর্বশেষ ২০১৬ এসএ গেমসের তাম্রপদকজয়ী। তার আগে নারী দলের বাছাই শেষে টিটি ক্যাম্পে ঘটে অনাকাক্সিখত ঘটনা। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে এদিন মারামরিতে লিপ্ত হন রুমী ও জাতীয় দলের আরেক তারকা সোনম সুলতানা সোমা! মানস ও সালেহার লিগ্যাল নোটিসের জবাব দু’দিনের মধ্যে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফেডারেশন তিন সপ্তাহ সময় নেয়। এর আগে আগস্টের শেষ সপ্তাহে টিটি ক্যাম্পে নানা অনিয়ম চলায় ক্ষুব্ধ হন টিটি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। উষ্মা প্রকাশ করেন বিওএ’র কর্তারাও। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তারা টিটির ক্যাম্প পরিদর্শনও করেন। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে কয়েকজনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মানস এক লিখিত চিঠিতে বলেছিলেন ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার হিসেবে চট্টগ্রামের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসক হিসেবে রয়েছি। তাই দীর্ঘদিন ক্যাম্পে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। ফলে আমাকে বিগত সময়ের মতো সিলেকশন নির্বাচনী খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক।’ কিন্তু ফেডারেশন মানসের সেই কথা রাখেনি। এক্ষেত্রে তারা বিওএর নির্দেশনার বাইরে যেতে পারবে না বরে সাফ জানিয়ে দেয়। জুলাইয়ের ওই সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ টেবিল টেনিস প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে মানস টিটি ফেডারেশনে অস্থিরতা-অচলাবস্থা চলার জন্য সরাসরি দায়ী করেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খোন্দকার হাসান মুনিরকে। মানসদের সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মুনিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচরিতা, খেলোয়াড়দের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক বিষিয়ে দেয়া, ক্যাম্পের নামে খেলোয়াড়দের দিয়ে খালি কাগজে সই নেয়া,খেলোয়াড়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সেটা শোধ করতে টালবাহানা করাসহ আরও অনেক ধরনের অভিযোগ করেন। সবশেষে তারা মুনিরের অপসারণ দাবি করেন। তবে পরদিন মুনির তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেন। তিনি সংবাদমাধ্যমে তার যে বক্তব্য পেশ করেন, সেটার আবার তীব্র প্রতিবাদ জানায় টিটি প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন। এখন টিটিতে যে অবস্থা চলছে, তাতে শেষ পর্যন্ত আরও কি অঘটন ঘটে, মাহবুব শেষ পর্যন্ত বাদই পড়েন কি না, তা নিয়েই শঙ্কিত ক্রীড়াপ্রেমীরা।
×