ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসেছে, সেতুর ২২৫০ মিটার দৃশ্যমান

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২২ অক্টোবর ২০১৯

পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসেছে, সেতুর ২২৫০ মিটার দৃশ্যমান

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে বসে গেছে। এতে সেতুটি ২২৫০ মিটার দৃশ্যমান হল। ৪-ই নম্বর এই স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে (প্রশাসনিক মাদারীপুর জেলা) সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে স্থাপন করা হয়। পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে নিয়ে যায় তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন। দুই পিলারের মধ্যবর্তী সুবিধাজনক স্থানে এনে ভাসমান ক্রেনটিকে নোঙর করা হয়। এরপর পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায় রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিং এর উপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীরা স্প্যানটি মঙ্গলবার বসাতে সক্ষম হন। সূত্রে আরো জানা যায়, বর্ষা মৌসুম ও নাব্যতা সংকটের কারণে ৩ মাসের বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতুতে কোনো স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়নি। ড্রেজিং করেও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যাচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হলেও নাব্যতা সংকট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ড্রেজিং করে পলি অপসারণ করেও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছিল না। নাব্য সঙ্কটের কারণে ১৫তম স্প্যানটি বসাতে বিলম্ব হচ্ছিল। অনবরত ড্রেজিং করে স্প্যানবাহী জাহাজটি যথাস্থানে যাওয়ার জন্য পানির গভীরতা তৈরি করে স্প্যানটি মঙ্গলবার স্থাপন করা হয়। এছাড়া আরও চারটি স্প্যান কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে ও একটি চর এলাকায় ২৮ নম্বর পিয়ারের কাছে মোট ৫টি স্প্যান সম্পূর্ণ রেডি অবস্থায় রাখা আছে। এ স্প্যানগুলো অল্প সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হবে। এর আগে সোমবার সকালে জাজিরা প্রান্তের চর এলাকা থেকে '৪-ই' স্প্যানকে ভাসমান ক্রেনের মাধ্যমে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের সামনে নোঙর করে রাখা হয়। পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ড্রেজিং করেও স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। পলি অপসারণ করার ১-২ ঘণ্টা পরেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছে নদীর তলদেশ। ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন বহন করে আনতে নাব্যতা সংকট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুর আরও ৫টি স্প্যান প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে স্প্যানগুলো বসাতে দেরি হচ্ছে। সেতুর ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ নম্বর পিলারের ওপর চারটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে চলতি বছরের মধ্যে। সর্বশেষ ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর বসে ১৪ নম্বর স্প্যান ৩ সি। এদিকে চীন থেকে পদ্মা সেতুর কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও একটি স্প্যান পৌঁছেছে। এটা নিয়ে সেতুর মোট ৩১টি স্প্যান কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে পৌঁছাল। ৪-এ স্প্যানের অংশগুলো এখন জাহাজ থেকে খালাস করা হচ্ছে। আরও চার-পাঁচদিন সময় লাগবে পুরো স্প্যান খালাস করতে। এসব তথ্য জানিয়ে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানান, মোট ৪১টি ট্রাস বা স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়া সাইটে এসেছে ৩১টি। এর মধ্যে ১৫টি স্প্যান পিয়ারে স্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে, রেলওয়ে স্ল্যাব এর জন্য ২৯৫৯ টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাব প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে ২৮৯১ টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব আগামী নভেম্বরে তৈরি শেষ হবে। রেলওয়ে স্ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে ৩৬১টি। অন্যদিকে ২৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেক স্ল্যাব এর মধ্যে ১৫৫৩ টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৫৪ টি স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি(এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
×