ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার ঘটনা

ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচী কাল

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২২ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচী কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলার ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলছে বিএনপি। দলটি বলছে পুলিশ এই ঘটনা আগেই জানত। সময় পেয়েও তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। উল্টো প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও পৈশাচিকতায় চারজনের প্রাণ গেছে। পুলিশের এমন নিষ্ঠুরতা ক্ষমার অযোগ্য। ভোটারহীন সরকারের দুঃশাসনে মানুষের জীবনের মূল্য পশুপাখির চেয়েও কমে গেছে। একটি বুলেট খরচ না করে অনেক বড় ঘটনা তারা সামাল দিয়েছে। অথচ কোন ঘটনা ঘটলেই পুলিশ অসহিষ্ণু আচরণ শুরু করেছে। তাদের বিক্ষোভ করতে দিলে কি সরকারের পতন হয়ে যেত? সোমবার এই ঘটনার প্রতিবাদে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা এই অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় পুলিশের পৈশাচিকতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিবাদে কর্মসূচী দিয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারাদেশে জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করবে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোলায় প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করতে দিলে সরকারের কি পতন হয়ে যেত? সরকারের কিসের এত ভয়। কাদের প্রতি ভয়। ঘটনার শুরু শুক্রবার। ঘটনার পরে পুলিশের ব্যাখ্যায় মনে হয়, তারা পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানত। তাহলে এত সময় পেয়েও সামাল দিতে পারল না কেন। এর কারণ, সরকার ও পুলিশের কাছে মানুষের কোন মূল্য নেই। আমরা মনে করি, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভোলাকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, অনাদিকাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এই দেশ। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা বা কারো ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করা অমাদের ঐতিহ্যে নেই। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন সুকৌশলে ভোলার মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সরকার ও প্রশাসনের মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তারা দুঃখ প্রকাশ না করে হত্যাকা-ের পক্ষে সাফাই গাইছেন। সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- জনগণকে যারা অবজ্ঞা করে তাদের পরিণতি শুভ হয় না। জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। যথেষ্ট হয়েছে। ভোলার গণহত্যার বিচার করতে হবে। ভোলার জনগণের দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেকোন ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করলে মানুষের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা নতুন কিছু নয়, এটাই স্বাভাবিক। ভোলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য জড়ো হয়েছিল, এটি তো কোন অপরাধ নয়। কোন ভাংচুর করেনি, কারও ক্ষতি করেনি। প্রতিবাদ করা কী অন্যায়? তারা কী কোন দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল? তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহিতা করতে হয় না বলেই সামান্য কিছুতেই নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। তিনি ভোলায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে উল্লেখ করেন। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরী আরা সাফা। প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু মন্তব্য করেছেন, সরকার এতিম হয়ে গেছে। এই সরকার এমন একটি সরকারে পরিণত হয়েছে, যাদের জনগণের সমর্থন নেই। সরকারের সঙ্গে কেউ নেই। সরকারের হাতে আছে কিছু আমলা, কিছু বাহিনীর লোকজন আছে যারা দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘গণতন্ত্রহীনতা ও অবরুদ্ধ বাক স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, এই সরকার একটা সমস্যা তৈরি করে। আবার ওই সমস্যাকে পত্রিকার পেছনের পাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর পানি দিয়েছেন। তার হৃদয় বড়। কিন্তু আমরা তিস্তার পানির জন্য হাহাকার করি। আমাদের জন্য কি ভারত মানবিক হতে পারে না? তিনি বলেন, বিএনপি কখনও ভারতবিরোধী ছিল না। বিএনপি ভারতবিরোধী কথা বলে না। বিএনপি জাতির স্বার্থের জন্য কথা বলে। ড্যাবের সভাপতি ডাঃ হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দেন।
×