ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরেক কম্পিউটার বিপ্লব আসছে

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২২ অক্টোবর ২০১৯

আরেক কম্পিউটার বিপ্লব আসছে

কম্পিউটার বিপ্লব ইতোমধ্যে আমাদের জীবনে এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বলা হচ্ছে পরিবর্তন আমরা আর কি দেখেছি, এ তো হচ্ছে সবে শুরু। পরিবর্তনের প্রথম পর্বটি ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন কম্পিউটিং ব্যবস্থা সরকার ও বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর হাতে আসে। দ্বিতীয় পর্বে কম্পিউটিং ব্যবস্থা ডেস্কটপ পিসি, ল্যাপটপ এবং অতি সম্প্রতি স্মার্টফোনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসে। তৃতীয় পর্বে কম্পিউটারাইজেশন কলকারখানা ও টুথব্রাশ থেকে শুরু করে পেসমেকার পর্যন্ত কম্পিউটার নয় এমন সমস্ত কিছুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়ে সুফল ও কুফল দুই-ই বয়ে নিয়ে আসবে। আর সেটাই হবে আরেক কম্পিউটার বিপ্লব। কম্পিউটারের ম্যাজিকটা হলো যে কাজগুলো ছিল এককভাবে আমাদের মস্তিষ্কের যেমন গণনা করা, তথ্য প্রক্রিয়াজাত করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সেই কাজগুলো করার সক্ষমতা এখন মেশিনকে দেয়া হয়েছে। সামনে এমন এক বিশ্বকে দেখা যাবে যেখানে এই ম্যাজিকটা হবে সর্বত্র বিরাজমান। সংখ্যাতীত ছোট ছোট চিপ ইমারত, শহর-নগর, কাপড় চোপড় এমনকি আমাদের শরীরের ভেতরে গেঁথে দেয়া হবে এবং এর সবকিছুই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর সুবিধার কোন সীমা-পরিসীমা থাকবে না, মাইক্রো চিপযুক্ত কাপড় ওয়াশিং মেশিনকে বলে দিতে পারবে কিভাবে ধোলাই করতে হবে। স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রাফিক লাইটগুলোতে প্রতীক্ষার সময় কমবে এবং নগরীর মধ্য দিয়ে গাড়িগুলোর চলাচলের ব্যবস্থা উন্নত হবে। মাইক্রো চিপের ব্যবহার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মৌলিক চালিকাশক্তি উৎপাদনের উন্নতি ঘটাবে। যেমন ফ্যাক্টরির রোবটের ডাটার সহায়তায় এলগরিদম পূর্বাভাস দিতে পারবে কখন মেশিন বিকল হবে এবং সেটা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণের সময় বলে দেবে। ইমপ্ল্যান্ট করা সেন্সরের সাহায্যে খামারের প্রাণীগুলির রোগ-ব্যাধির আগাম লক্ষণ জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা যাবে। সমষ্টিগত এসব সুফল আরও সুগভীর পরিবর্তন আনবে। নিজের সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে কম্পিউটারাইজড বিশ্ব তার অধিবাসীদের সব ধরনের জিনিসকে সংখ্যায় প্রকাশ করা ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ করে দেবে যা আগে ছিল অনুমাননির্ভর ও অযথাযথ। একেই বলা হয় ইন্টারনেট অব থিংগস (আইওটি)। বিগত শতাব্দীতে বিদ্যুত অন্তত পক্ষে ধনী বিশ্বের ভোক্তা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বজনীনভাবে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যখন যেখানে প্রয়োজন সেগুলো পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। বিদ্যুত এনার্জির ক্ষেত্রে যা করেছিল আইওটির লক্ষ্য হচ্ছে তথ্যের ক্ষেত্রে সেই কাজটি করা। খরচও কমে যাবে আইওটির পেছনে মোট ব্যয় ২০২১ সাল নাগাদ ৫২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। তবে ২০২৫ সাল নাগাদ আইওটির অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিবছর ১১.১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ আইওটি ডিভাইসগুলোর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ ট্রিলিয়ন। তার অর্থ কম্পিউটারচালিত নেটওয়ার্কগুলো ডিভাইসগুলোকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে সেই মানুষের সংখ্যাকে ওগুলো ছাড়িয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে এদের সংখ্যানুপাত দাঁড়াবে প্রতি একের জায়গায় ১০০। অন্যান্য জিনিসে কম্পিউটার যুক্ত করার ধারণাটি নতুন কিছু নয়। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র, জেট ফাইটার ও চাঁদে মানব বহনকারী বিলিয়ন ডলারের নভোযানে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো সবই আগের যুগের। প্রথমে কম্পিউটার ছিল এতই ব্যয়বহুল যে সেগুলো ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হতে হতো। তবে সেই খরচ ক্রমাগত ও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। আজকের কম্পিউটেশনের খরচ ১৯৭০- এর দশকে যা ছিল তার প্রায় ১০ লাখ ভাগের এক শ’। ওই সময় মাইক্রোপ্রসেসর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্তিসাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে এক মেগাবাইট ডাটা সংরক্ষণের খরচ হতো প্রায় ৯ হাজার ২০০ ডলার (আজকের মূল্যে ৮৫ হাজার ডলার) এখন সেই খরচ দশমিক ০০০০২ ডলার। পরিচালন ব্যয়ও হ্রাস পেয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত শক্তি দিয়ে কম্পিউটংয়ের ক্ষমতা মোটামুটি ১০ হাজার কোটি গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার অর্থ চিপ, এমনকি ব্যাটারিচালিত চিপও ১৯৭০- এর দশকের সুপার কম্পিউটারের তুলনায় ভাল কাজ করতে পারে। স্মার্টফোনে এখন ক্ষুদ্রাকৃতির ক্যামেরা থেকে গাইরোস্কোপ ও এক্সেলরোমিটার পর্যন্ত সবকিছুই থাকে। এই স্মার্টফোনের বদৌলতেই আজ ক্ষুদে সেন্সরের খরচ কমে আসছে। আইওটিতে যে ধরনের সেন্সর ব্যবহৃত হয় তার গড় খরচ ২০০৪ সালের ১.৩০ ডলার থেকে ২০১৪ সালে নেমে এসেছে ০.৬০ ডলারে। গত কয়েক দশকে এই ধারাগুলো এয়ারলাইন ও মোটরগাড়ির রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে। এগুলো এখন ডানা বা চাকাসংবলিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। এই ধারাগুলো ওয়াশিং মেশিন ও স্মোক এ্যালার্ম, থেকে শুরু করে থার্মোস্ট্যাট এবং মানবদেহের ভেতরে স্থাপন করা মেডিক্যাল ডিভাইসগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। লুমি নামে এমন এক সেন্সর উদ্ভাবিত হয়েছে যা লাগানো থাকবে ডিসপজেবল ন্যাপিতে। এর দ্বারা বাচ্চার ঘুমের প্যাটার্নের ওপর নজর রাখা হবে এবং যখনই বাচ্চার ন্যাপি বদলানোর প্রয়োজন হবে স্মার্টফোনের দ্বারা বাবা-মাকে জানিয়ে দেয়া হবে। আইওটি সৃষ্টি করার জন্য এক ট্রিলিয়নের কিছু বেশি সস্তা কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে। এগুলোর একে অপরের সঙ্গে সংযোগ সাধনের উপায়ও বের করতে হবে। টেলিকমের ডাটার খরচ কম্পিউটিংয়ের ডাটার চেয়ে বেশি। কিন্তু উন্নততর প্রযুক্তির বদৌলতে সেই খরচও কমে গেছে। ১৮৬০ সালে নিউ ইয়র্ক থেকে নিউ অর্লিয়েন্সে ১০ শব্দের একটি টেলিগ্রাম পাঠানোর খরচ ছিল ২.৭০ ডলার যা আজকের মূল্যমানে ৮৪ ডলার। আজকের দিনে প্রতি সেকেন্ডে মেগাবাইটে গতির পরিমাপ করা হয় এক মেগাবাইট মোটামুটিভাবে ২৭০০টি দশ শব্দের টেলিগ্রামের সমান। প্রতি সেকেন্ডে বেশ কয়েক মেগাবাইটের সংযোগ গতি মাসে সামান্য কিছু ডলার খরচ করে অর্জন করা যায়। টেলিযোগাযোগ সস্তা হয়ে যাওয়ায় তা ছড়িয়ে পড়েছে। এক তথ্যে জানা যায় যে ২০১৮ সালে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর ৫১.২ শতাংশের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল যা ১০ বছর আগের তুলনায় ২৩.১ শতাংশ বেশি। এখন আসল কাজের ব্যাপারটা হলো ১ ট্রিলিয়ন কম্পিউটারের জগত যত রকমের ডাটা বা তথ্য-উপাত্ত উৎপাদন করবে তার সবই সংগ্রহ করা এবং সেগুলোকে অর্থবহ করে তোলা কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার আধুনিক কৌশলগুলো বিপুল পরিমাণ কাঁচা বা অশোধিত তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বের করে আনার ক্ষেত্রে চমৎকারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। নতুন ব্যবসার আকর্ষণে প্রলুব্ধ হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। মাইক্রোসফট, ডেল, ইনটেল ও হুয়াওয়েইর মতো বিশাল বিশাল কম্পিউটার ফার্মগুলো কলকারখানাগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য অবকাঠামো সরবরাহ করে, ডাটা সংগ্রহে সেন্সর এবং সেগুলো বিশ্লেষণে কম্পিউটিং শক্তি যুগিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কম্পিউটারাইজ করার কাজে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গৃহ থেকে শুরু সবকিছুর কম্পিউটাররাইজেশন এক বিশাল ব্যাপার। এর জন্য কয়েক দশক লেগে যাবে। তবে এই নতুন কম্পিউটার বিপ্লব যেখান থেকে যাত্রা শুরু করবে তা হলো গৃহ। আগে যেসব জিনিস চলচ্চিত্রের কাল্পনিক ব্যাপার ছিল প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এখন তা সত্য হয়ে উঠছে। গৃহ থেকে শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অনেকগুলোর অস্তিত্ব ইতোমধ্যে রয়ে গেছে। ক্রেতারা এখন ঘরে ব্যবহারের জন্য স্মার্ট লাইট বাল্ব কিনতে পারে। যেমন ফিলিপস কোম্পানির তৈরি হুয়ে যা ফোন বা ভয়েসের সাহায্যে অফ-অন করা এবং হাজার রকম টোন ও শেড সৃষ্টি করা যেতে পারে। লাইট বাল্ব ছাড়াও ভোক্তারা ভয়েসের দ্বারা উইন্ডো ব্লাইন্ড, রোবটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং হার্টরেট, মুভমেন্ট ও ঘুমের প্যাটার্নের হদিস পাবে এমন ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারবে। ওয়াই-ফাইযুক্ত ও ক্যামেরা সজ্জিত ফ্রিজের ভেতর কি আছে না আছে তা বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে আপনি দেখে নিতে পারবেন। স্মার্ট ডোর বেলে নজরদারির ক্যামেরা ও মোশন ডিটেক্টর থাকে। এগুলোর ব্যবহারকারীরা চাইলে ফোনের সাহায্যে দরজার তালা খুলে আগন্তুকদের ভেতরে ঢুকতে দিতে পারবেন। জানা গেছে ২০১৯ সালে নানা ধরনের ৮৩ কোটি ৩০ লাখ স্মার্ট গৃহ সরঞ্জাম বিক্রি হবে এবং এই সংখ্যাটা ২০২৩ সালে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াবে। স্মার্ট গৃহও এখন কল্পনা থেকে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বেন উড নামে এক আইটি গবেষক তাঁর বাড়িটিকে বাস্তুবিকই স্মার্ট হোমে পরিণত করে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। বাড়িটিতে আছে কণ্ঠস্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লাইটিং ব্যবস্থা, জানালা খোলা ও বন্ধের ব্যবস্থা, রুমে রুমে উষ্ণায়ন ব্যবস্থা, ফোন নিয়ন্ত্রিত স্পিকার এবং ক্যামেরা সজ্জিত এমন দরজা যা বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে লক করা ও খুলে দেয়া যাবে। বেশ কিছু নামী-দামী ও স্টার্টআপ কোম্পানি এখন স্মার্ট হোম তৈরির জন্য এগিয়ে এসেছে। এই সেদিন পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল যে স্মার্ট হোম ফোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফোন বের করে নেয়া, সেটি আনলক করা, এ্যাপে চাপ দেয়া, তারপর লাইট জ্বালাতে সেটি ব্যবহার করা ঢের বেশি জটিল ও বিরক্তিকর ব্যাপার। তার চেয়ে সোজা হেঁটে এসে বোতাম টেপাই ভাল। কিন্তু বাস্তবে ফোন নয় এখন ভয়েসই হলো এযাবতকালের সবচেয়ে সুবিধাজনক ইউজার ইন্টারফেস। এ্যামাজনের এলেক্স ও গুগলের হোম- এই দুই নামী প্রতিষ্ঠানের স্মার্ট-স্পিকার পণ্যগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী স্মার্ট হোম সরঞ্জামগুলোর তুলনায় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। গত বছর ৭ কোটি ৮০ লাখ স্মার্ট স্পিকার বিক্রি হয়েছে যা ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। স্মার্ট অফিস ভবন বাড়িকে তো স্মার্ট হোম বানানো যাচ্ছেই, এমনকি অফিসকেও করা যাচ্ছে। জার্মান কোম্পানি সিমেন্স ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ডের জাগ শহরে তার অফিসগুলোকে এইভাবে তৈরি করেছে। অন্যান্য স্থানেও কর্পোরেট ভবনগুলোকেও স্মার্ট অবকাঠামোয় পরিণত করা হচ্ছে। এসব হাইটেক ভবনগুলোতে সেন্সর ও কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ব্যবস্থা হচ্ছে। পূর্বাভাস আছে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বা কর্পোরেট অফিসে ইন্টারনেট অব থিংগস বা আইওটির ব্যবহার ২০২৩ সাল নাগাদ ভোগ্যপণ্যের আইওটি ব্যবহারকেও ছাড়িয়ে যাবে এবং এক্ষেত্রে স্মার্ট কর্পোরেট ভবনই সর্বাগ্রে এগিয়ে থাকবে। কি থাকবে ওতে, থাকবে কম্ফি নামের একটি এ্যাপ যা ফোনের সাহায্যে ব্যবহার করে শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের অফিসের তাপমাত্রা ও আলোর মাত্রা কমাতে-বাড়াতে পারবে। এ্যাপ দিয়ে ক্যাফেটারিয়ার লাঞ্চ মেন্যু ব্রাউজ করা যাবে, মিটিং রুম বুক করা যাবে, যে কোন রক্ষণাবেক্ষণ কাজের প্রয়োজন দেখা দিলে তার সঙ্কেত দেয়া যাবে। যেমন ধরুন মনিটর ভেঙ্গে গেছে সেটা বদলানো দরকার। এসব ভবনে অসংখ্য সেন্সর ছাড়াও থাকবে ইনাফ্রারেড ক্যামেরা, ব্লুটুথ ও ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক। এগুলো ব্যবহারের ফলে এনার্জি ব্যবহার ৩৮ শতাংশ বাঁচবে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ শতাংশ বাড়বে বলে এক তথ্যে জানা গেছে। পানির দামে মাইক্রোচিপ আসছে ‘প্লাস্টিক আর্মপিট’ নামে এমন ধরনের মাইক্রোচিপ যার থাকবে ইলেকট্রনিক নাক এবং এর সাহায্যে এটি পরিবেশের ঘ্রাণ ও রসায়ন টের পাবে। এই চিপ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে সার্থকভাবে যুক্ত করা যাবে এবং সেগুলোর অনেক বৈশিষ্ট্য তখন পাল্টে যাবে। গত বছর বিশ্বে প্রায় ২৬ কোটি পিসি বিক্রি হয়েছে আর স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। নতুন উদ্ভাবিত স্বল্প শক্তির মাইক্রোপ্রসেসর স্মার্টফোন থেকে টেলিভিশন পর্যন্ত সবকিছুতেই ব্যবহার করা যাবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বে কম্পিউটারের সংখ্যা ১ ট্রিলিয়ন দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই চাহিদা মেটানোর উপযোগী পিচ তৈরি করার একটা চেষ্টা হলো প্লাস্টিক আর্মপিট। এর লক্ষ্য হচ্ছে এমন ধরনের শক্তপোক্ত অথচ বাঁকানো যায় এমন কম্পিউটার বিপুল সংখ্যায় তৈরি করা যেখানে থাকবে সেন্সর এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার সক্ষমতা। এমন একটি চিপের দাম পড়বে দশমিক ০১ ডলারেরও কম। প্লাস্টিক আর্মপিটের চিপ শুধু যে অত্যধিক সস্তা হবে তাই নয় এটির ব্যবহার যথেষ্ট সহজও হবে। এতে থাকবে বেশ কিছু সেন্সর মেশিন, লার্নিং প্রসেসর এবং সেগুলোর ইন্টারফেস। এসব কিছুই একটা পাতলা প্লাস্টিকের ফিল্মে তৈরি করা হবে। প্লাস্টিক আর্মপিটের যে ডেমোনেস্ট্রশন মডেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটি ব্যাটারি থেকে শক্তিপ্রাপ্ত। ভবিষ্যতে ব্যাটারি বাদ দিয়েও এটা শক্তি পেতে পারবে। একটা স্মার্টফোন চিপের কাছে ধরলে চিপকে প্রাণসঞ্চারিত করার মতো বিদ্যুত শক্তি তাতে সঞ্চালিত হতে পারবে। মোদ্দা কথায় বলতে গেলে ইন্টারনেট অব থিংগস (আইওটি) আমাদের জীবনকে বদলে দিতে যাচ্ছে। আইওটি মানেই হচ্ছে সেলফোন, গাড়ির ইলেকট্রনিক সাজসরঞ্জাম ও স্মার্ট সেন্সর যেগুলো তারবিহীন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। এই ডিভাইসগুলোতে রয়েছে এমন সেন্সর যা ডাটা সংগ্রহ করতে পারে এবং সেইসঙ্গে রয়েছে এমন সফটওয়্যার যা সেই সব ডাটাকে ক্লাউডে আপলোড করতে কিংবা সংযুক্ত অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে সরাসরি ডাটা বিনিময় করতে পারে। সেন্সর, ডাটা স্টোরেজ, ইন্টারনেট ও এনালাইটিকগুলো অধিকতর দ্রুত গতির, সস্তা, উন্নততর এবং একত্রে আরও বেশি সমন্বিত হওয়ার ফলে ব্যবহারীরা যেমন উন্নততর সিদ্ধান্ত নিতে এনালাইটিকগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারবে তেমনি এই আইওটি ডিভাইসগুলো আমরা কিভাবে বসবাস করব, গাড়ি চালানো, গবাদিপশুর খামার করব ও চাষাবাদ করব সেগুলোসহ আমাদের জীবনের নানান দিকের ওপর তাৎপর্যমলূক প্রভাব ফেলবে। সারা বিশ্বে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক লোক শহরে চলে আসছে। ফলে পানি ও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব, পরিবেশ দূষণ, যানজট ও অপরাধও বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি ভবনে ও সড়কে সেন্সর বসিয়ে সরকার নগরীর ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল বিশ্লেষণ করে সেগুলো মোকাবেলার ব্যবস্থা করতে পারবে। সিঙ্গাপুরের দৃষ্টান্তই ধরা যাক। সেখানে ত্রিমাত্রিক জিওস্প্যাশিয়াল ডাটার বদৌলতে সরকার নগরীর প্রতিটি স্থানের বিস্তারিত চিত্র পেয়ে থাকে যার সাহায্যে নগর পরিকল্পনাকারীরা বন্যা, জ্বালানি ও পানির ব্যবহার, যানজট ও রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাবের মতো ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। সামগ্রিকভাবে আইওটিভিত্তিক নগরীগুলো সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন এবং নাগরিকদের জীবন মানের উন্নয়কে অধিকতর দক্ষ ও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তুলতে ডাটা ও প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×