ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংঘর্ষ ॥ আহত ৫

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২১ অক্টোবর ২০১৯

  মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংঘর্ষ ॥ আহত ৫

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত পাঁচ। রবিবার বেলা বারোটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকাল থেকে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের একটি ফেসবুক লেখা নিয়ে বিভিন্ন মহলের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তিনি মধুর ক্যান্টিনে গেলে ওই লেখার জবাব চেয়ে হুঁশিয়ারিও দেন নেতারা। তবে হামলার আগেই ছাত্রদল ঢাবি শাখা সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে তার কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই। সংবাদ সম্মেলন শেষে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে গেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন ডাকসু নির্বাচনে জিয়া হলের ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তারেক হাসান মামুন, শাহজাহান শাওন, মামুন খান ও ওবায়দুল্লাহ নাঈম। তারা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। তারা বলেন, মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন শেষে তাদের দিকে তেড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী স্লোগান দেয়া শুরু করে, ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আরও স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রদলকে এ ধরনের স্লোগান না দেয়ার নিষেধ করে। ছাত্রদলকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলে সেসময় দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের ওপর হামলা করছে বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। মূলত ঘটনার সময় মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন ছিল। পরে তারা হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। এখানে ছাত্রলীগের কোন দায় নেই। রবিবার বেলা এগারোটায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বলেন, আমার কোন ফেসবুক আইডি নেই। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষোলোটি আইডি চালু রয়েছে। এজন্য তেজগাঁও থানায় আমি জিডি করেছি। ওসব একাউন্টের কোন লেখার দায়ভার আমি নেব না। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কিছু অত্যুৎসাহী নেতা তার ফেসবুক হ্যাক করে এসব অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। শনিবার সকাল হতে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক একাউন্টের পরিচিতি লেখা সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ এবং ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’। এছাড়া আবরারের ছবি তিনি নিজের কভার ফটোতে দেন, যেখানে লেখা আছে, ‘ভারতবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীন বাংলার প্রথম শহীদ আবরার।’ ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-কে সমর্থন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার অপরাধে ছাত্রদলকে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। রবিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চ নেতারা এ ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি-ছাত্রদল ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এরা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ওদের নীতি-আদর্শ এক ও অভিন্ন। ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রমাণ করে ওরা কখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। ওরা পাকি ভাবধারায় বিশ্বাসী। ‘ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক মন্তব্য সংবিধান পরিপন্থী’ দাবি করে তিনি বলেন, এরা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে জানান তারা। এ ধরনের বক্তব্যের জন্য শ্যামলকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে অন্যথায় তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে গণধোলাই দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে তারা তিন দফা দাবি জানান। এগুলো হলো শ্যামলকে অবিলম্বে গ্রেফতার, জামায়াত-বিএনপি-শিবির-ছাত্রদলের রাজনীতি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বন্ধ ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
×