ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেকনাফে সাঁড়াশি অভিযান

পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের রোহিঙ্গা ডাকাতদের গুলি

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০১৯

পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের রোহিঙ্গা ডাকাতদের গুলি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে পুলিশ ও রোহিঙ্গা ডাকাত দলের মধ্যে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা আবারও গুলি ছুড়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা (রোহিঙ্গা জঙ্গী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র অবস্থায় হামলে পড়তে পরোয়া করছে না। আশ্রয় ক্যাম্পে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশও মানছে না তারা। সক্রিয় দুটি সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা যখন তখন তেড়ে আসছে। শনিবার ভোরে টেকনাফ থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে সন্ত্রাসী দলের কোন রোহিঙ্গাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের আস্তানায় গড়ে ওঠা কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর অগ্নিসংযোগ ও গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, শালবাগান ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সম্প্রতি যুবলীগ নেতা ফারুককে গুলি করে হত্যা করেছিল। জানা গেছে, শনিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত সহকারী পুলিশ সুপার নাহিদ আদনান তাহিয়ান ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন গহিন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালায়। সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ বিশেষ অভিযানে গেলে রোহিঙ্গা ডাকাতরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ১৫-২০ রাউন্ড পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তারা দুর্গম পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। এর পর পুলিশ রোহিঙ্গা ডাকাত দলের আস্তানায় সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এসময় ৩-৪টি ঝুপড়ি ঘর আগুনে পুড়িয়ে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের দায়িত্বরত আইসি মনিরুল ইসলাম জানান, টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র ডাকাত, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে না। পাশাপাশি ওইসব অপরাধীে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর আগে ৮ অক্টোবর দিনদুপুরে পুলিশ ও ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছিল। ৮ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি জায়গায় শীর্ষ ডাকাত জাকির ও সেলিম গ্রুপের সদস্যরা অবস্থান করছে বলে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। এসময় ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। ওইদিনই শীর্ষ ডাকাত মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে হত্যা শেষে লাশ পাহাড়ে গুম করা হয়েছে বলে গুজব রটানো হয়। তবে এ পর্যন্ত জঙ্গী সেলিমের কথিত লাশ পওয়া যায়নি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আলইয়াকিন এবং আরএসও গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময় হয় প্রায় সময়। রোহিঙ্গারা ওই দু’গ্রুপকে আলইয়াকিন ও আরএসও হিসেবে চেনে। আলইয়াকিনের শীর্ষ সমন্বয়ক আবদুল হাকিম, মৌলবি শফিক, আবু সিদ্দিক আরমান (সৌদি আরব) ও মোঃ সেলিম (ঢাকা) এবং আরএসও গ্রুপের মধ্যে মৌলবি ইদ্রিস, আয়াছ, হাফেজ হাসিম, হাফেজ জাবের, মৌলবি ইয়াছিন, আবদুর রহিম নিজ নিজ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সন্ত্রাসী কর্মকা- দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা প্রশাসনের ওপর গুলি চালাতেও ভয় পায় না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানান, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী কয়েক রোহিঙ্গা জঙ্গী সন্ত্রাসী কর্মকা-, হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করে যাচ্ছে। ক্যাম্পে ডাকাত তথা আরাকান বিদ্রোহী দলের সক্রিয় সদস্যরা হচ্ছে যথাক্রমে জাকির, সেলিম, কামাল, আমান উল্লাহ, মোহাম্মদ হামিদ, হামিদ মাঝি, খায়রুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, নেছার, সাইফুল ওরফে ডিবি সাইফুল, রাজ্জাক, বুলু ওরফে বুইল্যা, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম। ইদানীং তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় অসহায় রোহিঙ্গারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাঝি জানায়, আরাকান বিদ্রোহী দলের সদস্যরা দিনেদুপুরে সাধারণ মানুষ ও পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্যও পাহাড়ের ভেতর থেকে গুলিবর্ষণ করে থাকে। শুক্রবার রাতেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক কর্মকর্তা জানান, জাদিমুড়ায় ২৬-২৭ নম্বর ক্যাম্প দুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকবার ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালাতে গিয়ে ডাকাত দলের হামলার মুখে পড়েছেন তারা। অভিযানের সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল ডাকাত ও সন্ত্রাসী দলের সক্রিয় রোহিঙ্গা সদস্যরা।
×