ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘরে ইসমাইল চৌধুরীর একক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 জাদুঘরে ইসমাইল চৌধুরীর একক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যালারিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে কলাপাতা বেষ্টিত ফুলের ছবি। পাশেই রয়েছে অন্য একটি গাছের পাতা। তার ডালে বসে আছে পাথী। ফুলসহ পদ্মপাতা, নারকের গাছসহ বিভিন্ন গাছের পাতা, ফুল, ফল, পাখীর ছবি নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে থেকে শুরু হয়েছে শিল্পী ইসমাইল চৌধুরীর ‘রিদম অব ন্যাচার’ শীর্ষক একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাতীয় জাদুঘর ও ইসমাইল-সুজুকি আর্ট গ্যালারি। শুক্রবার বিকেলে শিল্পীর ৪৩তম একক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোকলোরবিদ বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রধান এটাচি মি. মাচিকো ইয়ামামুরা ও বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সমালোচক ও লেখক অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহম্মদ। সঅনুষ্ঠানের শুরুতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী সদ্য প্রয়াত কালিদাশ কর্মকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রদর্শনী উপলক্ষে শিল্পী ইসমাইল চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন শিল্পীর মা মিসেস সাহিদা বেগম। স্বাগত ভাষণ দেন জাদুঘরের সচিব আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, অত্যন্ত সময়োপযোগী এ প্রদর্শনী, যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে প্রকৃতির ছন্দ। আমরা সত্যিকার অর্থে প্রকৃতির ছন্দ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের প্রকৃতিকে অনুসরণ করার কথা কিন্তু তা যদি না করি প্রকৃতিও আমাদের ওপর বিরূপ আচরণ করবে। এ প্রদর্শনী দেখে আমরাও প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলায় উদ্ভূত হবো। অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ বলেন, শিল্পী ইসমাইল জাপান থেকে চিত্রকর্মের ডিগ্রী অর্জন করেছেন। জাপানে ইসমাইলের কি সম্পর্ক এবং জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পের কি সম্পর্ক এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাপান এবং বাংলাদেশ এই দুই দেশের শিল্পের রসায়নে ইসমাইলের এই প্রদর্শনী। মূলত দুই দেশের প্রকৃতিকে তুলে এনেছেন এই চিত্রকর্মে। তিনি বলেন, প্রকৃতির মুগ্ধতার সঙ্গে আণুবীক্ষণিক পর্যালোচনার নিখুঁত সম্পর্ক তুলে ধরেছেন শিল্পী তাঁর শিল্পকর্মে। তার ছবিতে আছে হিলিস্ক্যাপ, আছে কোষ বিভাজন যেগুলো আমরা সচারাচর দেখি না। তার ছবির ভাষা পড়তে সময় লাগে, গাম্ভীর্যটা আছে তার কর্মে। এক অন্যরকম সুখের পরশ আছে তার ছবিতে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, আজকের এই প্রদর্শনী অনেক বেশি আলোকিত হয়েছে বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রধান এটাচি মি.মাচিকো ইয়ামামুরা উপস্থিত হয়েছেন বলে। খুবই আকর্ষণীয় আজকের এই প্রদর্শনী। শৈল্পিক অর্থের ব্যাপকতা মুগ্ধ করেছে আমাকে। প্রকৃতির কথা ছবিগুলোতে এমনভাবে তিনি তুলে ধরেছেন, মনে হচ্ছে যেন ছবি কথা বলছে, বুকের ভেতরে স্নিগ্ধটার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ অতিথি বক্তব্যে এটাচি মি. মাচিকো ইয়ামামুরা বলেন, অনেক শুভকামনা ও অনেক অভিনন্দন শিল্পী ইসমাইল চৌধুরীকে তাঁর এই অসাধারণ প্রচেষ্টার জন্য। তিনি সুজুকিতে পড়াশুনা করেছেন। সুজুকি অত্যন্ত সুন্দর একটা শহর। আমার জন্মও সুজুকিতে। ইসমাইল চৌধুরী নিপুণ দক্ষটার সঙ্গে প্রকৃতিকে তুলে ধরেছেন। শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, শিল্পী তার ক্যানভাসে প্রকৃতির বিভিন্ন দিককে তুলে ধরেছেন। প্রত্যেকটা ছবি কথা বলে। ছবির ভাষা যখন সবাই বুঝতে পারে তখনই শিল্পীর সার্থকতা আসে। আমি লক্ষ্য করেছি, প্রাচ্যের আবহাওয়া পুরোপুরি তার চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন। সভাপতির বক্তব্যে মোঃ রিয়াজ আহম্মদ বলেন, ইসমাইল-সুজুকি আর্ট গ্যালারির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকৃতি নিয়ে ভিন্নমাত্রিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। একজন শিল্পী কথা বলে তার চিত্রকর্মে। ছবির ভাষা বুঝতে হলে আমাদের গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। মূলত শিল্পীর প্রকৃতি নিয়ে উপলব্ধি তুলে ধরেছেন তার চিত্রকর্মে। প্রদর্শনী চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এবং প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×