ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পী কালিদাস কর্মকার আর নেই

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 শিল্পী কালিদাস  কর্মকার  আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমকালীন চিত্রকলার খ্যাতিমান শিল্পী কালিদাস কর্মকার (৭৩) আর নেই। তিনি শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার দুপুরে ইস্কাটনে নিজ বাসার বাথরুমের ভেতর হঠাৎ পড়ে যান শিল্পী। অনেকক্ষণ পর তাকে অচেতন অবস্থায় বের করে আনা হয়। তৎক্ষণাৎ তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে, আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিপত্নীক কালিদাস কর্মকারের দুই মেয়ে কঙ্কা কর্মকার ও কেয়া কর্মকার আমেরিকায় থাকেন। খবর শুনে তারা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। তারা দেশে আসার পর কালিদাস কর্মকারের শেষকৃত্যের বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া প্রয়াতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রবিবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে নেয়া হবে। পরে তার মরদেহ বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে। তার আগে মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। কালিদাস কর্মকারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পী তার চিত্রকর্মে আবহমান বাংলার স্বরূপ প্রকাশের পাশাপাশি নিরীক্ষাধর্মী শিল্পকর্মের জন্য শিল্পীমহলে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, তার (কালিদাস কর্মকার) কর্ম নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে শিল্পীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হার্টএ্যাটাক বলে জানা গেছে। ল্যাবএইড হাসপাতালের একজন ডিউটি ম্যানেজার সাংবাদিকদের জানান, বিকেল ৩টার দিকে কালিদাস কর্মকারকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। শিল্পীর ছোট ভাই প্রশান্ত কর্মকার সাংবাদিকদের জানান, কালিদাস কর্মকার ইস্কাটনের বাসায় গোসল করতে গিয়ে পড়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ কোন সাড়া না পেয়ে সেখানে থাকা এক বন্ধু নিচে খবর দেন। পরে বাথরুমের দরজা খুলে তাকে বের করা হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় ল্যাবএইড হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছার ঘণ্টাখানেক আগেই মারা গেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বরেণ্য শিল্পী কালিদাস কর্মকার। সমকালীন শিল্পীদের অন্যতম কালিদাস কর্মকার। আধুনিক ইউরোপীয় ঘরানার শিল্পী তার নিরীক্ষা কাজের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। ফেলোশিপ নিয়ে ফ্রান্স, ভারত, জাপান, পোল্যান্ড, কোরিয়া, আমেরিকাসহ কিছু দেশে অবস্থান করেন তিনি। এ সময় আধুনিক চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান অর্জন করেন। এ্যাক্রেলিক, গোয়াশ, কোলাজ, ওয়াশি, মেটাল কোলাজ, ড্রইং, ডিজিটাল লিথো, মিশ্র মাধ্যমের বিভিন্ন চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছেন তিনি। বাইরে থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করলেও, হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত ছিল সবসময়। ক্যানভাসে তা বারবারই ফুটে ওঠেছে। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির বৃহৎ পরিসরে তার একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। চারুকলায় অবদানের জন্য সরকার ২০১৮ সালে এই শিল্পীকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। এছাড়া শিল্পকলা পদকসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী। দেশ-বিদেশে আয়োজিত শিল্পী কালিদাসের একক চিত্র প্রদর্শনীর সংখ্যা এ দেশের চারুশিল্পীদের মধ্যে সর্বাধিক। দেশ-বিদেশে এ শিল্পীর ৭১টি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে কাজ করে আসছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি বহু আন্তর্জাতিক দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক সম্মান লাভ করেছেন। কালিদাস কর্মকার ১৯৪৬ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে ১৯৬৩-৬৪ সালে চিত্রকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে কলকাতার গবর্নমেন্ট কলেজ অব ফাইন আর্টস এ্যান্ড ক্রাফট থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে শিল্পের ভেতর বাহির বুঝতে, আত্মস্থ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান তিনি। দর্শনার্থীদের চোখের সামনে হাতে রং মেখে সঙ্গীতের তালে তালে ছবি এঁকে সবাইকে অবাক করে দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা ছিল তার। বড় ক্যানভাস ও ডিটেইল কাজের জন্য সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে সব সময়ই আলোচিত ছিলেন তিনি।
×