ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 কেরানীগঞ্জে  কিশোর গ্যাং  আতঙ্ক

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ হয়ে অপরাধ জগতের গ্যাংয়ের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেক কিশোর। তুচ্ছ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধে। এসব ‘কিশোর গ্যাং’ চক্রে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ভিড়ছে। অনেকে স্কুল কলেজের গন্ডি পেরুনোর আগেই বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত হচ্ছে। পাড়ামহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এরা। কিশোর গ্রুপের সদস্যরা পাড়ামহল্লায় দলবেঁধে ঘোরে, স্কুল কলেজের সামনে আড্ডা দেয়। মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা, দলবেঁধে মাদকসেবন, আধিপত্য বিস্তার, ব্যাল্কমেইলিং, চাঁদাবাজি, টিক-টক ভিডিও, নাইট পার্টি, পশ্চিমা সংস্কৃতিসহ চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এতে করে পুরো কেরানীগঞ্জের পাড়া-মহল্লাগুলোতে আতঙ্কের আরেক নাম হচ্ছে কিশোর গ্যাং । চলতি মাসে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যার অভিযোগ। তবে কিশোর গ্যাংয়ের কতটি গ্রুপ রয়েছে তার কোন তথ্য নেই পুলিশের কাছে। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকা- প্রকাশের পর বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। কিশোরদের কর্মকা-ের উপর দৃষ্টি রাখছে স্থানীয় প্রশাসন। জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে কথা কাটাকাটির জের ধরে কালিগঞ্জ থেকে ইয়াসিন শেখ নামে এক কিশোরকে ধরে নিয়ে যায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। আগানগর ইউনিয়নের গুলশান সিনেমা হলের পেছনে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ফেলে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর ইয়াসিন শেখের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীর বাবা কবির শেখ ১২ কিশোরের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পুলিশ ৫ কিশোরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে চুনকুটিয়া কাচারীপাড়া এলাকায় একদল কিশোর দলবেঁধে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা ছুরিকাঘাতে অন্তর ম-ল নামে একজনকে হত্যা এবং অভি সরকার নামে এক যুবককে আহত করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মামলা করার পর ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার শুভাঢ্যা, আগানগর, জিনজিরা ইউনিয়নে কিশোরদের অপরাধ কর্মকা- বেশি। কিছু থেকে কিছু হলেই লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ও মারধর শুরু হয়ে যায়। এসব ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় রাজজনৈতিক নেতাদের ছত্র-ছায়ায় তারা আধিপত্য বিস্তার করে নানা রকম অপরাধ কর্মকা- ঘটায়। তাদের বেপরোয়া অত্যাচারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করতে গেলে ঝামেলা আরও বাড়ে। অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ এসব বিষয়ে কাউকে আটক করলে, রাজনৈতিক নেতারা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিশোরদের গ্যাং চক্রে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, ইন্টারনেট আসক্তি ও মাদক সেবন কিশোর গ্যাং কালচারের প্রধান কারণ। পিতামাতার উচিত সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কার সঙ্গে মিশছে? এসবের খবর নেয়া। তাকে পরিবেশ উপযোগী আচরণ শিক্ষা দেয়া। কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রামানন্দ সরকার বলেন, কিশোর গ্যাং আছে কি নেই তা বলতে পারব না। তবে কিশোর অপরাধী আছে।
×