ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ ম্যাচে ড্র করলেই স্বাগতিক বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

শেষ ম্যাচে ড্র করলেই স্বাগতিক বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম আসরে ভিন দেশে অংশ নিয়ে তৃতীয় হওয়া। এবার নিজ দেশে দ্বিতীয় আসরে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় ফুটবল দলের কথা। চার দেশের অংশগ্রহণে উয়েফা অনুর্ধ-১৬ ডেভেলপমেন্ট টুর্নামেন্ট বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। শুক্রবার টুনামেন্টের দ্বিতীয় দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইউরোপের দেশ ফ্যারো আইল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় কুড়িয়ে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়েছিল ১-০ গোলে। লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের মোট ৬টি খেলা। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জনকারী দল হবে চ্যাম্পিয়ন। এই আসরে অংশ নিচ্ছে আরও দুই দেশ- মালদ্বীপ এবং কম্বোডিয়া। উভয় দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেস থেকে ছিটকে গেছে আগেই। এর আগে গত বুধবার টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে শুভসূচনা করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। তারা ২-০ গোলে হারিয়েছিল কম্বোডিয়াকে। বিজয়ী দলের মইনুল ইসলাম মঈন জোড়া গোল করে। শুক্রবারের ম্যাচেও জয়ের নায়ক সেই মঈনই, এবারও সে করেছে জোড়া গোল। অপর গোলটি পিয়াস আহমেদ নোভার। রবিবার টুর্নামেন্টের শেষ দিন। ওই দিন বাংলাদেশ যদি মালদ্বীপের সঙ্গে জিতে গেলে তো কোন কথাই নেই, আর নুন্যতম যদি ড্রও করে, তাহলেও হেসেখেলেই শিরোপা জিতে যাবে। ২ ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে তারা। সমান ম্যাচে ফ্যারো আইল্যান্ড ১ জয় ও ১ হারে (প্রথম ম্যাচে তারা হারিয়েছিল মালদ্বীপকে, ১০-৩ গোলে) ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে। পুরো খেলায় দাপটের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপ এবং কম্বোডিয়া ১ ম্যাচ খেলে ১ হারে কোন পয়েন্ট পায়নি। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় তিনে আছে মালদ্বীপ আর তলানি কম্বোডিয়া (এই পরিসংখ্যান শুক্রবার মালদ্বীপ-কম্বোডিয়া ম্যাচের আগ পর্যন্ত)। শুক্রবারের সন্ধ্যা। খেলা শেষ হতেই হতবিহবল হয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে ফ্যারো আইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলাররা। তারা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না, ইউরোপের দেশ হয়ে তারা কিনা হেরে গেছে এশিয়ার একটি দেশের কাছে! আর ওদিকে তো পাগলের মতো মাঠ দাপিয়ে উল্লাস করে বেড়াছে রর্বার্ট মার্টিন রাইলসের শিষ্যরা। যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে তারা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এক পা এগিয়ে গেল তারা। একটু পরেই পরাজিত দল নিজেদের সামলে নিয়ে গ্যালারির দর্শকদের প্রতি হাততালি দিয়ে মাঠ ছাড়ার উদ্যোগ নেয়। দর্শকরা প্রাণখুলেই তাদের অভিবাদন জানালে দারুণ খুশি হয় ফ্যারো আইল্যান্ডের ফুটবলারা। তারা এগিয়ে যায় গ্যালারির দিকে। আগ্রহী দর্শকদের সঙ্গে করমর্দন করে। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ভুলে যায় হারের দুঃখ। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত শক্তি হচ্ছে ইউরোপ। কারণ তারাই সবচেয়ে বেশিবার (১৯ বারের মধ্যে ১০ বার, বাকি ৯ বার লাতিন আমেরিকা) ফিফা বিশ^কাপের শিরোপা জিতেছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে দুর্বল শক্তি হচ্ছে এশিয়া। সঙ্গত কারণেই তাদের সঙ্গে ইউরোপের শক্তির ফারাকটা অনেক বেশি। তবে বিশ^ ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্রত্যাশা-এই ব্যবধানটা যেন ক্রমশ কমে আসে এবং প্রতিটি মহাদেশই যেন ফুটবলে সমশক্তির হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে খেলাটি হবে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে একমাত্র ফিফা বিশ্বকাপ এবং কনফেডারেশন্স কাপ ছাড়া নিয়মের কারণে অন্যান্য বৈশ্বিক ফুটবল টুর্নামেন্টে ইউরোপের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর মোলাকাত হয় না। এটারও বিকল্প বের করে ফেলেছে ফিফা। সিনিয়র পর্যায়ে না হলেও জুনিয়র বা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তারা ঠিকই একটা সমাধান বের করেছে। সেটা হচ্ছে ইউয়েফার অর্থায়নে অনুর্ধ-১৬ বালক টুর্নামেন্ট (আয়োজনে এএফসি)। টুর্নামেন্টের নিয়ম হচ্ছে প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন দেশে চারটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আসরটি। তিনটি দল থাকবে এশিয়ার, বাকি দলটি হবে ইউরোপের। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় এই আসর। ভেন্যু ছিল থাইল্যান্ড। তাতে অংশ নিয়েছিল মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সাইপ্রাস এবং বাংলাদেশ বিপক্ষে। ইউরোপের দল সাইপ্রাস হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন, আর বাংলাদেশ হয়েছিল তৃতীয়। ওই প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর মালদ্বীপকে হারিয়েছিল ১০-০ গোলে। তবে সাইপ্রাসের কাছে হেরেছিল ৪-০ গোলে। এবার লাল-সবুজদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শুক্রবার ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোলের খাতা খুলতে পারতো বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার সাইফুল ইসলাম সাঈদের ক্রস প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে হেড করে মঈন। বল চলে যায় পোস্টের বাইরে। ২৭ মিনিটে লিড নেয় লাল-সবুজরা। অধিনায়ক জনি শিকদারের ক্রস করে ডান দিক থেকে। মঈনের লাফিয়ে ওঠা চমৎকার হেড গোলরক্ষক হান্স জ্যাকাপ এগিয়ে এসে পাঞ্চ করেও রুখতে পারেনি (১-০)। ৩০ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ক্রস থেকে জনির হেড। গোররক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারে রক্ষা করে। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়েছিল বাংলাদেশই (৭০ শতাংশ)। ৫০ মিনিটে বা প্রান্ত দিযে আক্রমণ করে বাংলাদেশ। মঈন বক্সে ঢুকে পড়ে বা পায়ের জোরালো শট নেয়। গোররক্ষক পাঞ্চ করে কর্নারে রক্ষা করে। ৭৩ মিনিটে সমতায় ফেরে ফ্যারো আইল্যান্ড। ফ্রি কিক পায় তারা। বদলী মিডফিল্ডার হেইনির লম্বা-উড়ন্ত ফ্রি কিক বক্সের ভেতরে পেয়ে যায় অরক্ষিত ফ্যরো ডিফেন্ডার মৌরটিস। আয়েশ করে সেকেন্ড পোস্টে হেড নেয় সে। বাংলাদেশ গোলরক্ষক মেহেদী হাসান অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখলো, গোল (১-১)! ৭৯ মিনিটে আবার এগিয়ে গিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ফ্যারো আইল্যান্ডের এক ডিফেন্ডারের ভুলে বল পায় সদ্য বদলী ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ নোভা। সুযোগটা কাজে লাগায় সে। ডান পায়ের গড়ানো প্লেসিং শটে বল জারে জড়ায় (২-১)। ইনজুারি সময়ে (৯০+২ মিনিট) মাঝমাঠের সামনে থেকে নোভার লম্বা থ্রু পাসের বল ধরে এক ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে মঈন। বিপদ বুঝে গোলরক্ষক এগিয়ে আসে। তাকে কাটিয়ে পোস্ট ফাঁকা পেয়েও বল পোস্টে মারেনি মঈন। ততক্ষণে পোস্টে গিয়ে পজিশন নিয়ে ফেলেছে আরও দুই ডিফেন্ডার। শঙ্ক ছিল মেসি স্টাইলে কাটিয়ে গোল করার এই প্রচেষ্টা না জানি আবার মাঠে মারা যায় মইনের। কিন্তু সে আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে ঠিকই বল পোস্টে পাঠিয়ে শঙ্কা দূর করে দলের জয় নিশ্চিত করে মঈন (৩-১)। এরপর ফ্যারো আইল্যান্ড বল সেন্টার করার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দোনেশিয়ান রেফারি ইউদি নুরচায়া খেলা শেষের বাঁশি বাজান।
×