ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করছে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করছে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্কের ওপর নজর রাখতে বিটিআরসি ‘মনিটরিং সিস্টেম’ স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এই সিস্টেম চালু হলে গ্রাহক সেবার মান ও মোবাইল অপারেটরদের আয়ের হিসাব সহজেই জানতে পারবে বিটিআরসি। অপারেটরদের কলড্রপের টাকাও ফেরত দিতে হবে গ্রাহকদের। সিস্টেমের মাধ্যমে ডেটা ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ, কল ডিটেইল রেকর্ড সংরক্ষণ হবে। তখন আর গ্রাহক প্রতারণার শিকার হবেন না। মনিটরিং সিস্টেম চালু করার জন্য ইতোমধ্যে বিটিআরসি ৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছে। এখান থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়া হবে। উদ্দেশ্য, গ্রাহকদের ভাল সেবা নিশ্চিত করা। এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কলড্রপ একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও চরম বিরক্ত। তিনি কলড্রপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি আগারগাঁও থেকে বেইলি রোড পর্যন্ত আসতে ৮ বার কলড্রপ হয়েছে। আমি বিটিআরসিকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছি, যে কোন মূল্যে কলড্রপ বন্ধ করতে হবে। কোয়ালিটি অব সার্ভিস অনুমোদন হয়েছে। এখন এই সার্ভিসের মাধ্যমে অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। মন্ত্রী বলেন, কলড্রপের কারণ হচ্ছে একটি অপারেটরের যতটুকু স্পেকট্রাম থাকা দরকার তা তাদের নেই। আমরা অপারেটরদের কম দামে স্পেকট্রাম দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা তা নেয়নি। তাদের হাতে যে পরিমাণ স্পেকট্রাম আছে তাতে এই বিপুলসংখক গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তারা নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য কয়েক বছর ধরে কোন বিনিয়োগই করেনি। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোন অপারেটর কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে না পারে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা অনেক সুযোগ অপারেটরদের দিয়েছি। কিন্তু তারা কোন সুযোগ না নিয়ে শুধু নিজেদের ব্যবসার কথাই চিন্তা করে যাচ্ছে। বেনিয়াদের মতো টাকা লুটে নিচ্ছে। গত বছর অপারেটররা ৫৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। অথচ সরকারের সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওনা, সেটা দিচ্ছে না। ব্যবসা করতে হলে দেশের আইন মানতে হবে। সরকারের টাকা তাদের দিতেই হবে। নেটওয়ার্ক মনিটরিং করার বিষয়ে টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসি মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন কাজ শীঘ্রই চালু হবে। কারণ, বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গত আগস্টে টেন্ডারের মাধ্যমে ৫ টি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। এখান থেকেই যে কোন একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে। গ্রাহক স্বার্থে কাজটি কমিশন দ্রুতই বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম (টিএমএস) স্থাপনের জন্য অনেক আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে এতদিন কাজটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য বিটিআরসি গত বছর দরপত্র আহ্বান করে। এতে দেশী-বিদেশী মোট ১৭ টি দরপত্র জমা পড়ে। এখান থেকে শর্টলিস্ট করে ৫ টি কোম্পানিকে রাখা হয়েছে। এই ৫ কোম্পানিকে বিটিআরসি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে যোগ্য। তাদের পরবর্তী কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা কাগজপত্র জমা দিলে আরও শর্টলিস্ট করে একটি কোম্পানিকে কাজটি দেয়া হবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত এ ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন অপারেটররা সেবা এবং আয় সম্পর্কিত হিসাব পর্যবেক্ষণের জন্য টিএমএস সংযোজনে কোম্পানি নিয়োগের প্রাথমিক ধাপ শেষ করেছে কমিশন। গত বছরের ডিসেম্বরে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হলে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ১৭ আবেদন জমা পড়ে। এখান থেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী ৫ টি কোম্পানিকে যোগ্য মনে করেছে বিটিআরসি। ওই ৫ কোম্পানির মধ্যে থেকেই একটি কোম্পানিকে মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক নজর রাখার কাজ দেয়া হবে। নিযুক্ত কোম্পানি কোন্ অপারেটরের নেটওয়ার্ক কেমন, কোন্ অপারেটরের কলড্রপ কত ইত্যাদি বিষয় বিটিআরসির কাছে রিপোর্ট আকারে জমা দেবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সীমাহীন কলড্রপে গত মাস ধরে মোবাইল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। বিটিআরাসি মোবাইল অপারেটরদের বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও কলড্রপ কমছে না। সবশেষ আদালত কলড্রপের বিষয়ে নির্দেশ দিলেও ওই নির্দেশ অপারেটররা মানছে না। কলড্রপের ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর আগে আপারেটদের এই নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। কিন্তু অপারেটররা ক্রমাগত বিটিআরসির নির্দেশ উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তারা গ্রাহকের কলড্রপের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ১ কোটি ৯০ লাখ মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। অপারেটররা দিনে কলড্রপ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, তারা ১৭টি আবেদনের মধ্য থেকে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই শেষে ৫ কোম্পানি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। কাজটি দ্রুতই কোন একটি কোম্পানিকে দেয়া হবে। বাছাই করা এসব কোম্পানিকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের বাছাই শেষে আর্থিক প্রস্তাব দেয়ার জন্য বলা হবে। নতুন সিস্টেম স্থাপিত হলে তখন অপারেটরগুলোর সঙ্গে কমিশনের রাজস্ব সংক্রান্ত হিসাবের পার্থক্য কমে আসবে এবং অডিট জটিলতাও কবে যাবে।
×