ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতে আড়াই বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগ আসছে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

বিদ্যুতে আড়াই বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগ আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে বিদ্যুত উৎপাদনে আড়াই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সৌদি আরবের এ্যাকোয়া পাওয়ার। এর আগে এ্যাকোয়া ১১ দেশে বিনিয়োগ করেছে। প্রায় ত্রিশ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি বলছে একক কোন দেশে এটি তাদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার এ জন্য ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি। সই হওয়া এমওইউতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের যে কোন স্থানে একটি তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপ করবে এ্যাকোয়া। সম্ভাব্যতা জরিপের ভিত্তিতে কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হবে। দেশের কক্সবাজারের মহেশখালী অথবা পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুত হাবে এই সম্ভাব্যতা জরিপ চালানো হবে। কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে এমওইউতে বলা হয়েছে কেন্দ্রটি বিল্ড ওন অপারেট ভিত্তিতে আইপিপি হিসেব নির্মাণ করা হতে পারে। অন্যদিকে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও নির্মাণ করা হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ধারণ হবে সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ হওয়ার পর। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এ্যাকোয়া পাওয়ারের চেয়ারম্যান মোহম্মদ আবু নাইয়ান বলেন, বিনিয়োগই সৌদি আরবের মূল লক্ষ্য নয়। তারা চাইছেন সৌদির নাগরিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করুক। বাংলাদেশ সৌদির নাগরিকদের সেই সুযোগ করে দেয়াতে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদির রক্ষণশীলতা ভেঙ্গে নব জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। এখন সৌদি আরব তেল সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে নানা খাতে নিজেদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আর এ্যাকোয়া পাওয়ার তাদের ওয়েবসাইটে বলছে বিদ্যুত উৎপাদন এবং পানি পরিশোধনে কাজ করছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ হতে চলেছে ১২তম দেশ যেখানে তারা বিনিয়োগ করতে আসছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের পাশাপাশি তাপ বিদ্যুত এবং এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন করে কোম্পানিটি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। আমরা যখন গত নবেম্বরে সৌদি সফর করি তখন সৌদি বাদশা বলেছিলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য পিআইএফ (পাবলিক ইনভেস্ট ফান্ড) টিম পাঠাব। এক বছরের কম সময়ে তিনি তার কথা বাস্তবায়ন করেছেন। উপদেষ্টা বলেন, এনার্জি হচ্ছে অর্থনীতির চালিকা শক্তি। বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য এসেছে এই খাতে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে তিনি জানান। সমঝোতা স্মারকে সই করেন পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ এবং এ্যাকোয়ার চেয়ারম্যান মোহম্মদ আবু নাইয়ান। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, উন্নত দেশে পরিণত হতে গেলে আমাদের আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। সৌদির এই বিনিয়োগে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। এর আগে বাংলাদেশে সৌদির আল ফানাহ নামে একটি কোম্পানি ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত স্থাপনে চুক্তি করেছে। তবে এটাই সৌদির বড় বিনিয়োগ। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহিদুজ্জামান সরকার, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। এর আগে অবশ্য একই ধরনের দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এরমধ্যে একটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মার্কিন জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই) -এর সঙ্গে পিডিবি সমঝোতা করেছে। অন্যটি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এর সঙ্গে জার্মান সিমেন্স সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সমঝোতা অনুযায়ী জিই ও পিডিবি মহেশখালীতে এবং এনডব্লিউপিজিসিএল ও সিমেন্স পায়রাতে কেন্দ্র দুটি নির্মাণ করবে। দুুটি কেন্দ্রেরই অর্ধেক মালিকানা থাকবে সরকারের হাতে। এখানে মোট সাত হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে।
×