ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের;###;গবেষণায় সাফল্য

নদীনালার দূষিত তরল শিল্পবর্জ্য শোধন করবে অনুজীব

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

নদীনালার দূষিত তরল শিল্পবর্জ্য শোধন করবে অনুজীব

শাহীন রহমান ॥ দেশের নদী-নালাগুলোতে পতিত দূষিত তরল শিল্পবর্জ্য শোধন করবে অনুজীব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দূষিত তরল বর্জ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ওই বর্জ্য ভেঙ্গেই তাদের পুষ্টি সংগ্রহ করে থাকে। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্প বর্জ্য থেকে শুরু করে দূষিত হয়ে পড়া নদী-নালা খাল-বিলের পানি শোধন করা সম্ভব হবে। গবেষণা দ্বারা এটি প্রমাণ করেছেন গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও এ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট বিভাগের বিজ্ঞানীরা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ডায়িং কারখানা। এসব কারখানার দূষিত বর্জ্য গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে তৈরি নর্দমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে এই বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব এই চিন্তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও এ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এসএম রফিকুজ্জামান দূষিত বর্জ্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। তিনি জানান, ড্রেন থেকে ডায়িং কারখানার নীল রঙের পানি ল্যাবে নিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাটি এবং দূষিত বর্জ্যে বাস করে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া ডায়িং কারখানা থেকে সংগৃহীত পানির মধ্যে রেখে দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টায় দেখা গেল পানির নীল রং আর নেই। নীলের পরিবর্তে স্বচ্ছ পানির রং ফিরে এসেছে। এরপর তিনি এই ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে অতি দূষিত পানি নিয়ে পরীক্ষা করেন। বিশেষ করে পানির নিচের অংশে যেসব হ্যাভি মেটাল থাকে সেগুলো পরিশোধনের জন্য পরীক্ষা চালান। এক পর্যায়ে দেখতে পান পানির নিচে অংশ জমে থাকা হ্যাভি মেটাল আর নেই। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হ্যাভি মেটাল ভেঙ্গে সেখান থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করায় পানি সম্পূর্ণ পরিষ্কার রূপ ধারণ করেছে। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণায় অণুজীব ব্যবহারে পানি দূষণমুক্ত হওয়ায় এখন এর ব্যবহারিক দিক নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। অচিরেই এই গবেষণায় সাফল্য পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন। বলেন, মাটি এবং দূষিত বর্জ্যরে মধ্য থেকে সংগৃহীত বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই গবেষণা করা হয়েছে। ফিশারিজ এবং এ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম রফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে অনুজীবের মাধ্যমে বর্জ্যজল শোধন বর্তমান দূষণ থেকে উত্তরণের জন্য একটি টেকসই সমাধান দিতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে একটি অনুজীব বর্জ্যজল শোধনাগার তৈরি দেশের জন্য একান্তই প্রয়োজন। তা যেমন অর্থনৈতিক দিক থেকে সাশ্রয়ী। অপরদিকে পরিশোধিত পানি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যাবে। গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞানীরা জানান, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কেমিক্যাল নির্ভর পরিশোধনকে পুরোপরি নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এই বিবেচনা থেকেই বিভাগের গবেষণাগারে পরীক্ষামূলকভাবে অনুজীবের সাহায্যে বর্জ্যজল পরিশোধনের চেষ্টা করা হয়। এতে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া যায়। তারা বলেন, যে কোন ধরনের বর্জ্য পানীয়র মধ্যে এক ধরনের অণুজীব বাস করে। সেই অনুজীবগুলো সেই বর্জ্য ভেঙ্গেই তাদের পুষ্টি বা খাবার সংগ্রহ করে। সঠিক (অপটিমাইজেশনের) নিখুঁত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব অনুজীব দ্বারা এই ধরনের দূষিত তরল বর্জ্য শোধন করা সম্ভব। একই সঙ্গে তারা কলকারখানার দূষণরোধে অণুজীব বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন। বলেন, পরিকল্পিত অনুজীব বর্জ্যজল শোধনাগারটি শুধু নিরাপদ পানির উৎসই হবে না, সহজ স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বর্তমান পরিশোধন প্লান্টগুলোর তুলনায় খরচ বাঁচবে ৮০ শতাংশ। ড. এসএম রফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে আরও বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি ব্যবহারের জন্য গবেষণা হচ্ছে। এমনকি শিল্পকারখানায় ব্যবহারের ওপর এখন জোর দেয়া হচ্ছে। আমাদের গবেষণাগারেও এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকৃতিতে থাকা অনুজীবগুলো বিষাক্ত বর্জ্য ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় পানিও শোধন করা যায়। এই অনুজীব প্রকৃতিতেইে পাওয়া যায়। তবে তিনি অনুজীব বর্জ্যজল শোধনাগারের স্থাপত্য নক্সা বা এটি স্থাপন ও পরিচালনা খরচের বিষয়ে বলেন, এই বিষয়টি এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। তবে সাধারণ যে ইটিপি শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার চেয়ে এটির খরচ অনেক কম হবে। তিনি বলেন, অনুজীবগুলো দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আবার দেশের প্রকৃতিতে থাকা অনুজীবগুলো ব্যবহারও করা যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘অনুজীব বর্জ্য শোধানাগারে পরিশোধিত পানি দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে জলজ জীববৈচিত্র্য এবং পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয়ে যেমন নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদি পানির উচ্চতাও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই প্ল্যান্টের পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা যাবে সেচ কাজে, গৃহস্থালি কাজে ও পানীয় হিসেবে। তারা বলেন, অনুজীব পরিশোধিত পানিতে জৈবিক এসিডের উপস্থিতির কারণে তা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। কলকারখানার দূষিত বর্জ্যরে কারণে রাজধানীকে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা এবং ধলেশ্বরী করুণ দশায় পরিণত হয়েছে। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর জন্য হাজারীবাগ ট্যানারির কারখানাগুলো সাভারে সরিয়ে নেয়া হলেও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটেনি। বরং এর প্রভাবে নতুন করে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হচ্ছে। নদী দূষণের মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর চারপাশে ঘিরে থাকা শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য শোধন ছাড়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে বুড়িগঙ্গা নদীকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা পরিবেশগত বিপর্যস্ত এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গার দূষণ এতই বাড়ছে যে, এক কিলোমিটার দূর থেকেই এর তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ নাকে এসে লাগছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে এর পাশে বসবাসকারী সাধারণ জনগণ। পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এসব কলকারখানার বেশিরভাগের বর্জ্য শোধনাগার নেই। আবার যেসব কারখানার বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে খরচের ভয়ে তারা সেটি পরিচালনা করেন না। বিশেষ করে পরিবেশ অধিদফতর থেকে যখন কোন অভিযান পরিচালনা করা হয় তখনই দেখানোর উদ্দেশে বর্জ্য শোধনাগার চালু রাখেন। বাকি সময় তারা ইটিপি বন্ধ করে রাখেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পকারখানার ইটিপি চালাতে অধিক ব্যয়ের কারণেই মূলত এর মালিকরা বেশিরভাগ সময় ইটিপি বন্ধ রাখেন। এক রিপোর্টে দেখা গেছে, শিল্পকারখানায় কেমিক্যাল বর্জ্য শোধন প্লান্ট স্থাপনেই ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। এসব প্ল্যান্টে প্রতি কিউবিক মিটার পানি শোধন করতে ব্যয় হয় ২৪ টাকা। তারা বলছেন, বর্জ্য শোধন প্লান্টগুলোর যন্ত্রপাতি সব বিদেশ থেকে আমদানি হওয়ার কারণে তার স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা উভয়ই বেশ কষ্টসাধ্য। ফলে শিল্পকারখানার জন্য এই দূষিত তরল বর্জ্য শোধন বহুল আলোচিত সমস্যা হয়ে দেখা দিলেও দেশীয় উদ্যোগে এখনও শিল্পকারখানাগুলোতে সহজলভ্য সমাধান আসেনি। গবেষকরা বলছেন, এর বিপরীতে অনুজীব বর্জ্য শোধন একটি সহজ সমাধান হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি শোধন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ব্যবহার শেষে পানি আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এটির গুণমানকে উন্নত করা হয়। পানি পান, শিল্পে পানি সরবরাহ, সেচ, নদী প্রবাহ রক্ষণাবেক্ষণ, পানিতে বিনোদন বা অন্য অনেক ব্যবহার, যেমন- পানি নিরাপদে পরিবেশে ফিরে আসাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে। পানি শোধন দূষণকারী এবং অবাঞ্ছিত উপাদানগুলো সরিয়ে দেয়। পানীয় জল শোধনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অপরিশোধিত জল থেকে দূষণকারী উপাদান সরানো। যাতে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা যায় যা কোন প্রতিকূল স্বাস্থ্যের প্রভাবের স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি ব্যতীত মানুষের ব্যবহারযোগ্য হয়। পানীয় জল শোধনে যেসব পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাতিল কঠিন বস্তু, ব্যাকটেয়িা, শৈবাল, ভাইরাস, ছত্রাক এবং খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে নদ-নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জল সম্পদের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের আবহমান গল্পে যেসব খরস্রোতা নদী আর নানা রকম মাছের উল্লেখ পাওয়া যায় তার সঙ্গে একবিংশ শতাব্দীর চিত্রপট অনেকটাই ভিন্ন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে হাজারো কলকারখানা। এসব কারখানার বর্জ্য শোধন না করেই নির্দ্বিধায় ফেলে দেয়া হচ্ছে নদীতে, বিল বা অন্যান্য জলাশয়ে। জাতিসংঘের বিশ্ব পানি উন্নয়নের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত বর্জ্যরে মাত্র ১৭ শতাংশ শোধন করা হয়। যা এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এতে বলা হয়েছে, কলকারখান থেকে নিঃসৃত বর্জ্যরে অধিকাংশই নদীতে গিয়ে মেশে। এর প্রভাবে শুধু যে নদী ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি, কৃষি শস্যও। ভারি ধাতু ও বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে এসব উপাদানের মধ্যে। তুরাগ নদী এখন দেশে সবচেয়ে বেশি দূষিত নদী। বুড়িগঙ্গা তুরাগকে এখন আর নদী বলা যায় না। কালো পানি আর প্লাস্টিক পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্যরে নিষ্কাশনের মাধ্যম হয়েছে এখন এই নদীগুলো। অতিরিক্ত পানি দূষণের কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি যেমন মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এই পানি মানুষের গৃহস্থালি ও সেচ কাজের জন্য অব্যবহার্য। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বর্জ্যজলের অন্যতম উৎস শিল্পকলকারখানাগুলোতে মোটা অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগ সত্ত্বেও কেন তারা পরিশোধন ছাড়াই বর্জ্য নিঃসরণ করছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারখানা মালিকদের দিকে আঙ্গুল তোলা হলেও সেটাই একমাত্র কারণ নয়। তারা বলছেন, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কেমিক্যাল নির্ভর পরিশোধনকে পুরোপরি নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। অনুজীবের মাধ্যমে বর্জ্যজল শোধন করলে তা একটি টেকসই সমাধান দিতে পারে। বিশ্ব পানি সম্পদ গ্রুপের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০৩০ সালে গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা ভূগর্ভস্থ পানির তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি থাকবে। পানি সঙ্কটের এই বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করা যেতে পারে শিল্পকলকারখানাগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ও যত্রতত্র পানির ব্যবহার। যেহেতু এই প্লান্টের পরিশোধিত পানি কলকারখানায় ব্যবহার করা যেতে পারে সুতরাং পানি সঙ্কটের মতো সমস্যারোধে অনুজীব বর্জ্য পানি শোধনাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। ড. অধ্যাপক এসএম রফিকুজ্জামান বলেন, দেশে এই সময়ে টেকসই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে অনুজীব বর্জ্য শোধনাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু জলজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যকেই রক্ষা করবে না। পাশিপাশি পানির সুষ্ঠু ব্যবহারও নিশ্চিত করবে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ-বিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সিসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে। যুক্তরাজ্যের ওয়াটার পলিউশন গাইডের তথ্য অনুযায়ী পানি দূষণে সাময়িক প্রভাবের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব অনেক বেশি। বিশেষ করে শিল্প কলকারখানার বর্জ্য মানব দেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এই অবস্থায় দেশে দূষিত শিল্প কলকারখানা বর্জ্য শোধন একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবিত পদ্ধতি ‘অনুজীব বর্জ্যজল শোধন’ কাজে দিতে পারে।
×