ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে গর্ভবতীর জরায়ূ থেকে বিশাল আকৃতির টিউমার অপসারন

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

হবিগঞ্জে গর্ভবতীর জরায়ূ থেকে বিশাল আকৃতির টিউমার অপসারন

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ দু’টি প্রাণের মৃত্যু ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জরায়ূ অপারেশনের মাধ্যমে মায়ের কুলে এক ফুটফুটে শিশু সন্তানকে তুলে দিলেন হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ এস কে ঘোষ। রবিবার দুপুরে এই বিরল ঘটনাটি ঘটে শহরের কোর্ট স্টেশন সড়কস্থ হবিগঞ্জ (প্রাইভেট) হাসপাতালে। এ নিয়ে সংশ্লিস্ট হাসপাতাল সহ শহরের সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। জানা যায়, জেলার চুনারুঘাট উপজেলাধীন নিছন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক কবির মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২২) পেটে ব্যাথা অনুভব করেন। ফলে কবির মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং আলট্রাসনোগ্রাম করলে দেখা যায়, তিনি গর্ভবর্তী এবং তার পেটে ৩ মাসের সন্তান রয়েছে। সেই সাথে জরায়ূতে একটি টিউমারও রয়েছে বলে সনোলজিষ্ট দেখতে পান। পরবর্তীতে রাবেয়া ব্যাথা নাশক ওষধ সেবন করতে থাকেন। কিন্তু ৫ মাস অতিবাহিত হওয়ার সময় রাবেয়া আবারও পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন। যা সহ্য করার মতো ছিল না। ফলে কবির মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে নারায়নগঞ্জের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাকি এই মহিলাটির চিকিৎসায় এক রকম মেডিসিন প্রয়োগ করেন। যাতে ব্যাথা প্রশমিত না হয়ে বরং আরও বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় কবির মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন হবিগঞ্জে এবং গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস কে ঘোষের শনণাপন্ন হন। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই ডাক্তার কবির মিয়াকে বলেন, বিষয়টি জটিল হলেও অপারেশন ছাড়া জরায়ূ থেকে টিউমার অপসারন করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, এই অপারেশন করার সময় মা ও তার পেটের সন্তানের মৃত্যু ঝঁকি প্রায় শতভাগ। কারন প্রচুর রক্তক্ষরনতো হবেই সেই সাথে টিউমারটি বৃহৎ আকারে হওয়া সহ আরও কিছু জটিল সমস্যা রয়েছে। এমনকি জরায়ূও কেটে ফেলতে হতে পারে। আর যদি অপারেশন সফলও হয় তাহলে জরায়ূ কেটে ফেলার কারনে ভবিষ্যতে রাবেয়া আর মা হতে পারবে না। এমতাবস্থায় কবির মিয়া রাজী হলে প্রথমে গত ১৫ মে গর্ভবতী রাবেয়ার সন্তান পেটে রেখেই জরায়ূতে সফল তিনি সফল অস্ত্রপচার সম্পন্ন করেন এবং একটি বিশাল টিউমার অপসারন করে রাবেয়া ও তার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। যা ছিল অসম্ভব। সেই সাথে রাবেয়ার পরবর্তী চিকিৎসা অব্যাহত থাকে এবং মা-সন্তানের আবারও মৃত্যু ঝুঁকি থাকা সত্বেও আজ রবিবার দুপুর ১ টায় রাবেয়াকে নেয়া হয় উক্ত হাসপাতালের অপারেশন কক্ষে। ডাঃ এস কে ঘোষ তার সহকর্মী এ্যানেস্টেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাঃ কাউছার আহমেদ, ডাঃ রাজীব রায় ও ডাঃ ফাতেমাকে নিয়ে প্রায় অর্ধ ঘন্টায় অপারেশনে ৮’শ গ্রাম ওজনের ৩৮ সপ্তাহ পেটে থাকা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান বের করে মায়ের কুলে তুলে দেন ডাঃ এস কে ঘোষ।। এ নিয়ে ডাঃ ঘোষ তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার পেশাগত জীবনে মা-সন্তানকে বাঁচাতে এমন জটিল অপারেশন আর কখনও করতে হয়নি। এমনকি রাবেয়ার দেহের জটিল অংশে পরপর দুটি অপারেশন আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। তবে অপারেশনের আগে সফলতার ক্ষেত্রে আমি ছিলাম অনেকটা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু মা-সন্তানকে বাঁচিয়ে জরায়ূ থেকে কিভাবে টিউমার অপসারন করে অসম্ভববে সম্ভব হিসেবে প্রতিষ্টিত করা যায় সেটি ছিল আমার চিকিৎসক জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ একটি গুরু দায়িত্ব। তিনি বলেন, অনেক ডাক্তারই এই ধরনের রোগী আসলে সার্বিক দিক বিবেচনায় না নিয়ে প্রথমেই বলে দেন সিজার লাগবে নয়তো সিলেট বা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। এতে করে একজন রোগীর যেমন কস্ট বাড়ে, তেমনি সংশ্লিস্ট স্বজনদেরকেও মোটা অংকের অর্থ ব্যায় করতে গিয়ে রীতিমত হিমশীম খেতে হয়। অথচ আমাদের মতো ডাক্তাররা একটু ইচ্ছে করলেই এমন অপারেশন বা অন্য কোন ক্ষেত্রে ভূক্তভোগী রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তিনি বলেন, জটিল ওই রোগীর অপারেশনের সফলতায় আর ঢাকা বা সিলেটে নয় হবিগঞ্জেই এমন সমস্যা সমাধানে অনুপ্রেরনা যোগাবে।
×