ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাজু্যুয়েট পর্যায়ের ২৬ শতাংশ শিক্ষিত নারী ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

গ্রাজু্যুয়েট পর্যায়ের ২৬ শতাংশ শিক্ষিত নারী ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্রাজু্যুয়েট পর্যায়ের ২৬ শতাংশ শিক্ষিত নারী ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হচ্ছেন বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণার এক গবেষণায় উঠে এসেছে। শিল্পমন্ত্রী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং নারীদের বাদ দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে নারী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা ঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন কে এম হাবিব উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মুজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এছাড়া অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান, এসএমএই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তা ইসমত জেরিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ডিভিশনের কর্মকর্তা লীলা রশিদ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা মাসুমা বেগম, পাট পণ্য রফতানিকারক কোহিনুর ইয়াসমিন, সাংবাদিক সালাম জোবায়ের, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী, রূপান্তরিত নারী (তৃতীয় লিঙ্গ) আফরোজা বেগম মৌরি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং নারীদের বাদ দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ বিবেচনায় অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যকর গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যার সমাধান করছে। তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের বড় ধরণের গবেষণা চালালে শিল্প মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তিনি আরও বলেন, জাতিগঠনে বাংলাদেশের নারীদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। দেশের নারী জনগোষ্ঠী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন পেশায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে আগামী দশ বছর পর নারীদের আলাদা করে দেখার কোনো প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশিয় বাজারের বিপুল চাহিদা মেটাতে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে নারীরা ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসছেন। এ হার ১৭ থেকে ২৬ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ নারীরা শুধু চাকরি খুঁজছে না, তারা চাকরি দিচ্ছে। বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীরা উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হিসেবে আসছেন। এটা ভাল লক্ষণ। তিনি বলেন, নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারী উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গৃহিত যুগোপযোগী নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরফলে ব্যবসায়ে শিক্ষিত নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারীরা শিল্পায়ন ও ব্যবসায় অধিকহারে সম্পৃক্ত হয়েছেন। একই সময়ে একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে সামাজিক ও পারিবারিক সমর্থনও আগের চেয়ে অনেক জোরদার হয়েছে। ব্যবসায়িক ঋণ গ্রহণে নারী উদ্যোক্তারা বিশেষ সহায়তা পাচ্ছেন এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে তারা অনেক এগিয়ে গেছেন। গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ২০০৯ সালে গ্রাজ্যুয়েট পর্যায়ে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে ৪২ শতাংশ নারীকে পারিবারিকভাবে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করা হতো। ২০১৭ সালে তা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ নারীকে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে এটি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ট্যাক্স দিতেন, যা ২০১৭ সালে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতেন, যা ২০১৭ সালের বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসবই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত রেখে নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এ লক্ষ্যে উদ্যোক্তা হবার পেছনে অঞ্চলভিত্তিক সাংস্কৃতিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি রূপান্তরিত নারীদের (তৃতীয় লিঙ্গ) জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়িয়ে তাদেরকে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
×