ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ক্যানভাসে শান্তির প্রত্যাশা ‘ওপেন ডোর’

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

ক্যানভাসে শান্তির প্রত্যাশা ‘ওপেন ডোর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ণের বৈভবে উজ্জ্বল এক ক্যানভাস। আছে রঙের সঙ্গে রেখার সমন্বয়। কালো জমিনের চিত্রপটে মন্দিরের মাঝে ধ্যানমগ্ন আসনে গৌতম বুদ্ধ। তার পেছনের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে আলোকরশ্মি। আলোর প্রতিফলনে মেঝেতে ঝরছে অজ¯্র রঙের ধারা। সূর্যালোকের সেই আভা ছড়িয়ে পড়েছে তপস্বী বুদ্ধর চারপাশে। অন্ধকারের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বর্ণিল আলোকরেখার সমষ্টি প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেছে শান্তির বার্তা। ত্রিভুজাকৃতির আরেকটি চিত্রপটে বৃত্তাকারভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে অনেকগুলো নৌকা। ঘাটে ভেড়া নৌকাগুলোর কেন্দ্রবিন্দু থেকে আকাশপানে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। নৌকানির্ভর ওই উড়ন্ত পতাকার আশ্রয়ে প্রতীকীভাবে প্রকাশিত হয়েছে সম্মিলিত মানবিক সংহতি। সকল ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যের ছায়াতলে শান্তি ও সমৃদ্ধিময় বাংলাদেশের কথা বলে যায় ছবিটি। শান্তি-সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির বার্তাবহ এমন বেশ কিছু চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে গুলশান এভিনিউয়ের রেডিয়াস গ্যালারিতে। ছবিগুলো এঁকেছেন চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ। সেসব চিত্রকর্মে সাজানো শিল্পীর একত্রিশতম একক শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘ওপেন ডোর’। অধিকাংশ ছবিতেই পুরনো ঘর, পুরনো দালান, পুরনো দরজার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে মানব অবয়ব। প্রাচীন অবকাঠামোর সঙ্গে মানুষের সম্মিলনে ঘটেছে শিল্পীর আপনার ভাবনার প্রকাশ। কাঁটাতারের প্রাচীরহীন বিশ্ব দেখার প্রত্যাশায় বারংবার চিত্রিত হয়েছে তালাবিহীন বা কড়ামুক্ত খোলা দরজা। শ্যাওলা জমে থাকা সবুজের আস্তর পড়া তেমন এক দরজায় শৈল্পিক ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত হয়েছে নিরাভরণ তিন নারী। আরেক ছবিতে পেছন থেকে দৃশ্যমান হয়েছে সাদা শাড়িতে ঢাকা কলসি কাঁখে রাখা এক রমণী। তার ঠিক সামনেই প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্যখচিত রঙিন এক বন্ধ দরজা। সংকোচিত হয়েছে তার মুক্ত বিশ্বের পথ পরিভ্রমণ। প্রদর্শানলয়ের দেয়ালে ঝুলে থাকা কিছু মুখচ্ছবি বিশেষভাবে নজর কাড়ে। সাদা-কালোর আঁচড়মাখা প্রতিটি মুখে উদ্ভাসিত বয়সের বলিরেখা। কারও কপালে লাল তিলক, আবার কারও গাল বেয়ে নেমে গেছে ঘন সাদা দাড়ি-গোঁফ। যে কোন দিগন্তে ছুটে চলা মুক্ত বিশ্বের মানুষের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে সাধু-সন্তদের ছবিগুলো। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে কথা হয় প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধর সঙ্গে। আলাপচারিতায় এই চিত্রকর জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি ছবির মাধ্যমেই আমি কোন না কোন বার্তা দিতে চেয়েছি। রং-তুলির আঁচড়ে বলতে চেয়েছি শান্তির কথা। মানুষের মানুষে দ্বন্দ্বহীন পৃথিবীর প্রত্যাশায় সাজিয়েছি চিত্রপট। রেখা আর অবয়বের মাঝে বলতে চেয়েছি বিদ্বেষহীন বিশ্বের কথা। সেই ভাবনার সমান্তরালে প্রকাশ করেছি কাঁটাতারের বেড়ামুক্ত রাষ্ট্রের কথা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিতে পাখিদের যেমন ভিসা লাগে না তেমনি সাধু-সন্তরাও কেমন করে যেন এখান থেকে সেখানে চলে যায়। সীমানা থামাতে পারে না তাদের পথচলা। তাদের মতো আমিও বিধি-নিষেধ আর বিদ্বেষের পরিবর্তে মানবিক সমাজ ও সম্প্রীতির বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখি শিল্পিত পথরেখায়। এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে আঁকা ২৭ চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। মাসব্যাপী চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ২০ অক্টোবর। সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×