ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্জন ও ভাল কাজ বিশ্বজুড়ে তুলে ধরতে হবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশের অর্জন ও ভাল কাজ বিশ্বজুড়ে তুলে ধরতে হবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি অর্জনে আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে যথাযথভাবে বিশ্বজুড়ে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি আরও বলেন, প্রচলিত আইনের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত আরও দরিদ্র করে রাখা হচ্ছে। সবকিছু পরিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও কিছু করা যাচ্ছে না। রাজধানীর পরিসংখ্যান ভবনে বুধবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনডেক্সেস ইন এচিভিং এসডিজিস’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম এবং ইউএনডিপি কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিএসএর উপসচিব ড. দীপঙ্কর রায় এবং এটুআই প্রকল্পের হেড অব ডাটা ম্যানেজমেন্ট রমিজ উদ্দিন। এমএ মান্নান বলেন, আন্তর্জাতিক সূচকে সার্বিকভাবে আমরা ভাল পর্যায়ে রয়েছি। বাংলাদেশ ফুরফুরে হাওয়া বইছে। তবে আমাদের ফুরফুরে হাওয়ায় থাকলে চলবে না। আমাদের কাজ করতে হবে। সক্ষমতার মাধ্যমে আমাদের সফলতা বের করে আনতে হবে। এক্ষেত্রে কাজের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের যেসব অর্জন ও ভাল কাজ রয়েছে সেগুলো বিশ্বজুড়ে তুলে ধরতে হবে। বিশ্বকে জানাতে হবে। আন্তর্জাতিক যেসব ইনডেক্স প্রকাশ হয় সেগুলোর মাধ্যমে হতাশা ছড়ানোর চেষ্টা থাকে তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, কত বিজ্ঞানী কত কিছু বের করে, তারা এটি করে খায়। তারা জানে তাদের ইনডেক্সে আমাদের মতো দেশগুলো পেছনে থাকবে আর তারা ওপরে থাকবে। তারপরও তারা এসব ইনডেক্স করেই যাচ্ছে। এর মাধ্যমে হতাশা ছড়ানোর চেষ্টা থাকে। আমাদের মূল কাজটা হবে নিজের কাজটা নিজে করে যাওয়া। দারিদ্র্য মোকাবেলায় নোবেল পাওয়া ভাল কিন্তু দরিদ্র থাকা ভাল নয়। আমাদের সমাজে অন্যায় গেড়ে বসেছে। ফলে দারিদ্র্য পুরোপুরি শেষ হচ্ছে না। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অন্যায়গুলো পরিষ্কার, দারিদ্র্যের অন্যায়ের কারণও পরিষ্কার। হঠাৎ করে তারা দরিদ্র হয়নি। কিভাবে তাদের আমরা আইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দরিদ্র করছি আরও, সেটাও কিন্তু আমাদের সামনে পরিষ্কার। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, গ্রামগঞ্জে খাল-বিল থাকে। সেখানে অল্প কিছু মাছ থাকে। গরিব মানুষগুলো ধরে খায়। সেটাকে পর্যন্ত আমরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে ইজারাদারদের হাতে তুলে দিই। প্রতি বছর ইজারা দিয়ে সামান্য কটা টাকা পায় সরকার। অথচ গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোকে আমরা বঞ্চিত করছি, তারা জাল নিয়ে বেরিয়ে দুটি মাছ খেতে পারে না। আরেকটি উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাড়ির কাছে বন আছে, সেখান থেকে দুটি কাঠ-পাতা আনবে গরিব মানুষগুলো, সেটাও তারা আনতে পারে না। সেখানে বন্দুকধারী ব্যক্তিরা আছে, তারা পাহারা দেয়। এ সময় তিনি ৩০ বছর আগের সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরতে পারে। এজন্য এসডিজিতে মনোযোগ দিলে ভবিষ্যতে গুণগতমান ভাল হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আন্তর্জাতিক সূচকে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পারফর্মেন্স ভাল। তবে রিপোর্টিংটা খারাপ। রিপোর্টটা আমাদের ভাল হতে হবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক সূচকগুলো এমন একটি প্ল্যাটফরম যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সেক্টরভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়নকে বিশ্ব দরবারের সামনে উপস্থাপন করে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থা সকলের সামনে তুলে ধরা যায়। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হব। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা যেমন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন-২০২১, নির্বাচনী ইশতেহার, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাবাহিকতা উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ই-গবর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ১১৫তম অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে, ২০১৪ সালে যেখানে এ অবস্থান ছিল ১৪৮-এ। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সূচকে সম্মানজনক ও শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছে। অনুষ্ঠানে ২৩টি ইনডেক্স নিয়ে আলোচনা হয়। সেগুলো হলো হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স, হিউম্যান ক্যাপিটাল, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট, গ্লোবাল ফাইন্ডডেক্স, লজিস্টিক পারফর্মেন্স, ই-কমার্স ইনডেক্স, ই-গবর্মেন্ট ডেভেলপমেন্ট, গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি, হিউম্যান এ্যাসার্ট, জেন্ডার ইনইক্যুয়ালিটি, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস, ওপেন ডাটা, নেটওয়ার্কে রেডিয়েন্স, গ্লোবাল ইনোভেশন, এসডিজিস ইনডেক্স, ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস, ই-পার্টিসিপিয়েন্স ইনডেক্স, গ্লোবাল কানেক্টটিভিটিম করাপশন পারসিফেশন, গ্লোবাল পিস, ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজম কমপিটিটিভনেস এ্যান্ড গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস ইনডেক্স।
×