ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইনফান্তিনোর কাছ থেকে কতটা এবং কী আদায় করতে পারবে বাফুফে?

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

ইনফান্তিনোর কাছ থেকে কতটা এবং কী  আদায় করতে পারবে বাফুফে?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯৮০ সালে ব্রাজিলের জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ। ২০০৬ এবং ২০১২ সালে সুইজারল্যান্ডের সেপ ব্ল্যাটার। ওপরের নামগুলো পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এরা সবাই বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন’ (ফিফা)-এর কর্ণধার বা সভাপতি। তবে সালগুলোর তাৎপর্য্য বুঝতে কিঞ্চিৎ সমস্যা হতে পারে। সেটাও খোলাসা করা যাক। এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সালে এই দুই ফিফা সভাপতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। পদধূলি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যালয়ে। এবার তাদের সঙ্গে যোগ করতে হবে আরেকটি নাম। বাংলাদেশে যিনি বুধবার দিবাগত রাতে (১টা ৫০ মিনিটে), এক সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা সফরে আসবেন, তৃতীয় ফিফা সভাপতি হিসেবে। তিনি সুইজারল্যান্ড এবং ইতালির দ্বৈত নাগরিক জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ১৯৭০ সালের ২৩ মার্চ (বয়স ৪৯) ইনফান্তিনো হচ্ছেন ফিফার নবম সভাপতি। ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি ফিফা সভাপতির দায়িত্ব নেন। কেননা তার পূর্বসুরী সেপ ব্লাটারকে তখন দুর্নীতির জন্য ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। দায়িত্ব নিয়েই স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিমুক্ত ফিফা গড়ার জন্য সচেষ্ট হন ইনফান্তিনো। সে লক্ষ্যে অনেকটাই সফল তিনি। ফিফার হারানো ভাবমূর্তি অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তিনি। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে তার। অথচ এজন্য তার হাতে বেশি সময় নেই। চার বছর পূর্ণ হতে বাকি আছে আর মাত্র কয়েক মাস। ২০২০ সালেই যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হবে ফিফার নির্বাচন। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির অধীনে সদস্য দেশের সংখ্যা ২১০। এত দেশ জাতিসংঘের অধীনেও নেই। ফিফার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশ অবস্থিত এশিয়ায়। এই অঞ্চলের ভোটগুলো ভীষণ প্রভাব ফেলে ফিফার নির্বাচনে। ইনফান্তিনো তাই আপাতত বের হয়েছেন এশিয়া সফরে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এটাকে নির্বাচনী সফর বলতে নারাজ, বরং এই সফরকে তিনি অভিহিত করছেন বিভিন্ন দেশের ফুটবল-কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখা এবং ফুটবল উন্নয়নে যেটুকু প্রয়োজন, যথাসম্ভব সেখানে সাহায্য করতে চেষ্টা করা। বুধরাতে রাতে ভ্রমণজনিত কারণে ফিফা সভাপতির কোন কার্যক্রম নেই। রাতে তিনি বিশ্রাম নেবেন। বৃহস্পতিবার তার ব্যস্ত শিডিউল। প্রথমেই তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন, সকাল সাড়ে ১০টায়। এরপর বেলা সোয়া ১২টায় তিনি বাফুফে ভবন পরিদর্শনের পাশাপাশি সেখানে বাফুফে কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সভায় মিলিত হবেন। এরপর ১২টা ৫০ মিনিটে তিনি বাফুফে ভবন ত্যাগ করবেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির থাকবেন তিনি। বিকেল ৩টায় বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে হোটল ছাড়বেন। বিকেল ৫টায় তিনি ও তার সফর সঙ্গীরা বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফিফা সভাপতির সফর সঙ্গী হিসেবে ফিফা চারজন কর্মকর্তাও ঢাকায় আসছেন। তারা হলেন : মাট্টিয়াস গ্রাফস্টর্ম (ডেপুট সেক্রেটারি জেনারেল), ওনোফ্রে কস্টা (চীফ অব কম্যুনেকেশন্স), সঞ্জিবান বালাসিংগাম (ডিরেক্টর অব মেম্বার এ্যাসোসিয়েশন এশিয়া এ্যান্ড ওশানিয়া) এবং ফেদেরিকো রাভিগ্লিওনে (প্রেসিডেন্টস’ অফিস ম্যানেজার)। ফিফা সভাপতি এখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সফর করছেন। বুধবার রাতে তিনি মঙ্গোলিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে বৃহস্পতিবারই লাওসের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফিফা সভাপতির আগমন উপলক্ষ্যে মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে। ভবনটি সাদা রঙে সাজানো হয়েছে। এমনকি বাফুফে ভবনের বাইরের গলির রাস্তায় যেসব অবৈধ টি-স্টলগুলো ছিল, সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাফুফে ফিফা সভাপতির এই সংক্ষিপ্ত সফরকে গুডউইল সফর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের আশা-ফিফার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। এখানে তিনি বাফুফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় করবেন। বাংলাদেশের ফুটবল কোন্ পর্যায়ে আছে, কেমন অবস্থা, এগুলো তিনি জানবেন। বিশ্ব তথা এশিয়ান ফুটবল নিয়ে তার যেসব লক্ষ্য বা পরিকল্পনা আছে, সেগুলোর সঙ্গে বাফুফে সম্পৃক্ত হতে চায়। ফিফা সভাপতি যেহেতু বাংলাদেশে এসেছেন শুভেচ্ছা সফরে, তিথি হয়ে; কাজেই তার কাছে কিছু সরাসরি চাইবে না বাফুফে। তবে ঘরোয়া ফুটবলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে কৌশলে ফিফা সভাপতির কাছে কিছু সাহায্য বা প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারে বাফুফে। তখন হয়তো ইনফান্তিনো নিজ থেকে কিছু দিলেও দিতে পারেন। এখন দেখার বিষয়, ফিফা সভাপতির কাছ থেকে কতটা এবং কী আদায় করে নিতে পারে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
×