ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিমাগারের আলুতে অঙ্কুর

ঠাকুরগাঁওয়ে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

ঠাকুরগাঁওয়ে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৫ অক্টোবর ॥ বেশি লাভের আশায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই অঙ্কুর গজাতে থাকায় আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার অসংখ্য চাষী ও ব্যবসায়ী। হিমাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করায় এবং দীর্ঘদিন মেশিন বন্ধ রাখায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদাগঞ্জে স্থাপিত এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি হিমাগারসহ অন্য আরো কয়েকটি হিমাগারে। জানা যায়, এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হিমাগারে সাধারণ ধারণক্ষমতা এক লাখ ৬০ হাজার বস্তা (৮৪ কেজি প্রতি বস্তা)। কিন্তু এখানে সংরক্ষণ করা হয় প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার বস্তা। সরকারী হিসাবে প্রতি বস্তা ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এই হিমাগার কর্তৃপক্ষ ২৪০ টাকায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংরক্ষণ করেন। ফলে ওই হিমাগার অল্প সময়ে আলুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে সতেজ থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন মেশিন বন্ধ থাকার কারণে অল্প সময়ে আলু অঙ্কুরোদগম (গজার) হয়ে যায়। এতে কম দামে আলু বিক্রি করে ক্ষতিপ্রস্ত হচ্ছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ঠাকুরগাঁও হিমাগার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমান উল্লাহ জানান, জেলায় ১৭টি হিমাগার রয়েছে এবং আরও কয়েকটি নতুন হিমাগার নির্মাণ হচ্ছে। তাই সংরক্ষণের সময় অনেক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত কত দাম নির্ধারণ করে তার হিমাগার তত দ্রুত ভর্তি হয়। শুনেছি এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কিছু আলু আগেই গজিয়ে গেছে। অন্য সব হিমাগারের আলু ভাল আছে। চাষী ও ব্যবসায়ীদের দাবি হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু সংরক্ষণের পর বিদ্যুত বিল বাঁচানোর জন্য হিমাগারের মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখে। ফলে অসময়ে আলুতে অঙ্কুর গজাতে শুরু করে। এতে বাজারদর থেকে প্রতি কেজি আলু ৩-৪ টাকা কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। বিশেষ করে বীজ আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলু চাষীরা। মাঠে রোপণের সময় আরও প্রায় দুই মাস বাকি। চাষী ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন ছিল বীজ হিসেবে আলু বপন মৌসুমে অনেক ভাল দামে বিক্রি করবে। কিন্তু আলু অসময়ে গজার কারণে বীজের মান নষ্ট হওয়ায় খাওয়ার আলু হিসেবে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক চাষী কম দামে আলু বিক্রি করেছেন। অন্যরা বিক্রি করছেন। সদর উপজেলার ফকদনপুর গ্রামের চাষী আহামেদ আলী বলেন, মাদাগঞ্জে অবস্থিত এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে ৩০০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। ১৩ টাকা প্রতিকেজি বিক্রিও করেছিলাম। কিন্তু ব্যবসায়ীকে আলু দেয়ার সময় গজানো আলু দেখে প্রতি কেজি তিন টাকা কম দাম দিয়েছে। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। ওই হিমাগারে চাষীদের থেকে আলু কিনে অনেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজে নিয়মিত ব্যবসা করি। এবার লোকসান হয়েছে। পেপারে নাম এলে হিমাগারের মালিকতো তার প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা নাও করতে দিতে পারেন। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আলু হিমাগারে রাখার ফলে সতেজ থাকে। বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে হিমাগার থেকে আলু বের করার পরে গজাতে শুরু করে। পরে জমিতে বপন করতে হয়। জেলায় গত মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। এ ব্যাপারে এসবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, কোরবানির ঈদের সময় প্রায় ২০ দিন বিদ্যুত না থাকার কারণে জেনারেটর দিয়ে মেশিন সবসময় চালানো সম্ভব হয়নি। সে কারণে কিছু আলুতে অঙ্কুর গজিয়ে যায়। অনেকে বিক্রি করে ফেলেছেন। কিছু চাষী ও ব্যবসায়ী তাদের আলুতে অঙ্কুর গজানোর বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। শুধু এস.বিতে নয় জেলার অনেক হিমাগারে এবার আলুতে অঙ্কুর গজিয়েছে। এটা নতুন কোন সমস্যা নয় বলে তিনি জানান । জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, বীজ আলু আগে গজানোর কারণে মান কিছুটা নষ্ট হয়। বীজ আলু খাওয়া ঠিক নয়। কারণ বীজ আলু বিষ দিয়ে শোধন করা থাকে। খাওয়ার আলুতে অঙ্কুর গজালে তেমন সমস্যা নেই।
×