ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তুরস্কের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধবিরতির আহ্বান ট্রাম্পের

কুর্দী গ্রামে সিরীয় বাহিনী

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

কুর্দী গ্রামে সিরীয় বাহিনী

সিরিয়ার বাহিনী সোমবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামে প্রবেশ করেছে। ফলে ওই অঞ্চলে তাদের সঙ্গে তুর্কী বাহিনীর সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ল। এদিকে তুরস্কের সামরিক অভিযানের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র দুই তুর্কী মন্ত্রণালয় ও তিন জ্যেষ্ঠ সরকারী কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানকে ফোন করে সাময়িক যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন। পেন্স যত দ্রুত সম্ভব ওই অঞ্চল সফরে যাবেন বলে জানিয়েছে। এপি। মার্কিন মিত্র সিরীয় কুর্দী বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর তুর্কী সীমান্তে সিরীয় বাহিনী মোতায়নের ঘটনা ঘটল। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো তুর্কী আক্রমণ প্রতিরোধে কুর্দীদের সহায়তা করা। সিরিয়ার কুর্দী ও আসাদ সরকারের মধ্যে সমঝোতার ঘোষণা জোটের ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকবে এবং ক্রমে আরও কঠোর হতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তুরস্ক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না করবে, সংঘাত বন্ধ না করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী কোন শান্তি চুক্তিতে না আসবে। উত্তর সীমান্ত এলাকায় ব্যপাক বিশৃঙ্খলা অবস্থা ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই ওই এলাকা থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পর এ জোটের প্রকাশ ঘটল। এই পরিবর্তন তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করছে এবং আইএসের পুনরুত্থানের শঙ্কা বৃদ্ধি করছে যখন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ায় আসাদ এবং তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাশিয়ার প্রতি বাকি প্রভাব পরিত্যাগ করছে। যদি আইএসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা যায় তবে সিরিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বশাসিত কুর্দী এলাকাকয় সংঘর্ষ আরও বিপজ্জনক মাত্রায় রূপ নিতে পারে। এক সিরীয় সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সীমান্তে আমাদের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যাচ্ছি যেটা সীমান্ত এলাকায় বিরাজ করে। যুদ্ধরত কুর্দী কর্তৃপক্ষ উত্তরাঞ্চলের শহর ও গ্রামগুলো পুনর্দখলে নিতে সরকারকে আমন্ত্রণ জানায়। সিরীয় বাহিনী ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ বাসে ও পিকআপ ট্রাকে করে সোমবার উত্তরাঞ্চলীয় রাকা প্রদেশে পৌঁছেছে। তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় হামলার মাধ্যমে চাপ বৃদ্ধি করেছে, ইউরোপে নেটো মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রকে তার পথে বাধা না হয়ে দাঁড়াতে সতর্ক করেছে। তুর্কী বাহিনী ও সিরিয়ার বাহিনী দৃঢ়ভাবে দক্ষিণ সীমন্ত অতিক্রম করেছে, ২০০ কিলোমিটার এলাকায় কুর্দী যোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে। সংঘর্ষে অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে। এরদোগান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার বাহিনী সিরিয়ার মানবিজ শহরে হামলার জন্য প্রস্তুত। এ শহর থেকেই কুর্দী দলগুলো সিরীয় সরকারকে পুনরায় প্রবেশের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং শহরটিকে রক্ষার কথা বলেছে। মার্কিন স্টিভেন নুচিন সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বেশ শক্তিশালী এবং তা তুরস্কের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এক বিবৃতিতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বলেছে, তুরস্কের সরকারের কর্মকা সিরিয়ার ওই অঞ্চলের নিরপরাধ নাগরিকদের জীবন যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, তেমনি পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। আবার সেই সঙ্গে ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার গৌরবকেও ম্লান হয়ে পড়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাদের সৈন্যদের মানবিজ শহরে ঢোকার খবর নিশ্চিত করেছে। এছাড়া দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর ও গ্রামগুলোতে দ্রুত সিরীয় সেনারা ছড়িয়ে পড়ছে। তুরস্কের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে দ্রুতই তাদের সংঘর্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। কুর্দী নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির পেক্ষাপটেই সিরীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কুর্দী বাহিনী গত সপ্তাহ পর্যন্ত মার্কিনীদের মিত্র ছিল। এর আগে সোমবার ইইউ নেতারা তুরস্কে অস্ত্র রফতানি বন্ধ করার বিষয়ে একমত হন। জবাবে তুরস্ক বলে, ‘বেআইনী এবং পক্ষপাতমূলক’ আচরণের জন্য ইইউয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।
×