ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা না হওয়ায় দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

মামলা না হওয়ায় দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা না হওয়ায় দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা না করার দায়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট এ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে দুদক বা দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘অবশ্যই, আমি এ কারণে গতকাল একটি সভায় বলেছি, দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন, তিনি কোন প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। যদি তিনি মনে করেন, তিনি কারও কথায় প্রভাবিত হবেন না তাহলে আমরা মনে করি, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ নেবে দুদক। প্রসঙ্গত, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অন্তত ৫৬ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এমনকি এ ঘটনায় প্রথমে ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করা হয়। পরে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আবদুল হাই বাচ্চু অর্থমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতেও দেখেছি, তদন্তপূর্বক দেখেছি বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে, ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মূল ব্যক্তি হলেন ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। যার কারণে সরকার তাকে সেই পদ থেকে অপসারণ করেছে। কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি শুধুমাত্র কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের সেই মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু তার বিরুদ্ধে আজ অবধি কোন দুর্নীতির মামলা আনা হয়নি। আব্দুল হাই বাচ্চুকে নিয়ে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েক দফা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন মামলা করা হয়নি। তাই আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন, শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের এ বিষয়ে জবাবদিহিতা দরকার। কেন এখন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে কোন মামলা করা হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা জানা দরকার।’ এদিকে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুদক চেয়ারম্যান একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান। ওনার চেয়ারম্যানশিপ নির্ধারণ করা হয় সুপ্রীমকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে ও বাছাই কমিটির মাধ্যমে। চেয়ারম্যান পদত্যাগ করবেন কিনা এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়’। তিনি বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যকে আমরা এ্যাপ্রিশিয়েট করছি। উনি চাচ্ছেন বেসিক ব্যাংক মামলার চার্জশীট হোক। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বা একজন সচেতন আইনজীবী হিসেবে উনি চাইতে পারেন। এটা এ্যাপ্রিশিয়েট করি।’ খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন এখানে চার হাজার কোটি টাকার বিষয়। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে। মানিলন্ডারিং মামলার প্রধান বিষয় টাকার উৎস এবং টাকাটা কোথায় গেছে তা খুঁজে বের করা। এখন টাকার যদি গন্তব্য বের করা না যায় তাহলে তো এ চার্জশীট আদালতে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তার মানে এই না যে, অনন্তকাল পর্যন্ত চার্জশীট হবে না। আমি যতটুকু জানি টাকার গন্তব্য খুঁজে বের করা হলে চার্জশীট হয়ে যাবে।’চার্জশীটে আবদুল হাই বাচ্চুর নাম থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, তার সংযুক্তি থাকলে অবশ্যই নাম থাকা উচিত। যদি গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ থাকে তাহলে অবশ্যই নাম আসবে।
×