ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌর প্যানেলের চুক্তি নবায়নে বিদ্যুতের দাম কমবে

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

সৌর প্যানেলের চুক্তি নবায়নে বিদ্যুতের দাম কমবে

রশিদ মামুন ॥ উৎপাদনে আসতে না পারা সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রর উদ্যোক্তারা চুক্তি নবায়ন করতে চাইলে দাম কমিয়ে নতুন চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনের জন্য বেসরকারী কয়েকটি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময় পেরিয়ে গেলেও এসব কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। তবে এখনও এসব উদ্যোক্তা বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময় বৃদ্ধির জন্য দেন-দরবার চালাচ্ছেন। বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জনকণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, এমন যেসব কেন্দ্র রয়েছে যারা সময় পেরিয়ে গেলেও উৎপাদন শুরু করতে পারেনি তাদের চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে নতুন দরে চুক্তি করতে হবে। তিনি বলেন, শুরুতে আমরা যখন সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র করার কাজ দিয়েছি তখন ১৭ থেকে ১৮ সেন্টে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে সৌর প্যানেলের মূল্য হ্রাস ও সৌর প্যানেলের বিদ্যুত উৎপাদন দক্ষতা বেড়েছে। এখন গড়ে ১০ সেন্টের নিচে দেশে প্রতিকিলোওয়াট বা ইউনিট বিদ্যুত ক্রয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে নতুন করে এসব উদ্যোক্তা তাদের কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার সময় বৃদ্ধি করতে চাইলে অবশ্যই নতুন দরে চুক্তি করতে হবে। নতুন করে কারও সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে কাউকে দিচ্ছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সোলারের সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে ‘নো ইলেক্টিসিটি নো পেমেন্ট’ অর্থাৎ আমি বিদ্যুত নিলেই কেবল তাকে টাকা দেব, তাদের কোন ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে না। এতে আমি তাদের সঙ্গে ১০ সেন্টে চুক্তি করলেও বছরশেষে দেখা যাবে ওই বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৫ সেন্ট। ফলে দিনের বেলায় সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে। সঙ্গতকারণেই কেউ চুক্তি নবায়ন করতে চাইলে এখন যে দামে সৌর বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে ওই দামেই তাদের দেয়া হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সেল সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ২১ প্রকল্পের ১২২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত নিয়ে তারা কাজ করছেন। এর মধ্যে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে ১১ প্রকল্পের। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬৮৫ মেগাওয়াট। এলওআই ইস্যু করা হয়েছে ১২ প্রকল্পের, যার মোট ক্ষমতা ৭৬০ মেগাওয়াট। প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির বিবেচনায় ২৫ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র রয়েছে। তবে দুটি প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার, যার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৫০ মেগাওয়াট। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু বা শেষ কিছুই করতে পারেনি ওই কোম্পানি দুটি। আর সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, দুটি প্রকল্পর কোন অগ্রগতিই নেই। সঙ্গতকারণেই প্রকল্প দুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে কেবল সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই এর বিস্তার ঘটবে। তবে সৌর বিদ্যুতে গত কয়েক বছরে মাত্র চারটি গ্রিড সংযুক্ত মেগাওয়াট ক্ষমতার প্ল্যান্ট উৎপাদনে এসেছে। এই চার কেন্দ্র হচ্ছে টেকনাফÑ ২০ মেগাওয়াট, জামালপুর ৩ মেগাওয়াট, কাপ্তাই ৭ মেগাওয়াট ও পঞ্চগড় ৮ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, হাওড় বাংলা সোলার কোম্পানির সুনামগঞ্জ ৩২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা ছিল ’১৭ সালের ১৫ আগস্ট। কেন্দ্রটি থেকে প্রতিসেন্ট বিদ্যুত ১৭ সেন্টে কেনার চুক্তি করেছিল পিডিবি। পরে দফায় দফায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময় দুই বছর বাড়িয়ে গত ১৪ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। তবে কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসা দূরের কথা বাস্তবে কোন অগ্রগতি নেই। ময়মনসিংহ ৫০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুত কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময় শেষ হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। এর আগে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার জন্য গত বছর ১৮ এপ্রিল নির্ধারিত ছিল। তবে এখন পর্যন্ত জমি উন্নয়নের কিছু কাজ করা ছাড়া আর কোন অগ্রগতি নেই এখানেও। কেন্দ্রটিও ১৭ সেন্টে বিদ্যুত বিক্রির চুক্তি করেছিল। একইভাবে রংপুরে ইন্ট্রাকো সোলার পার্কের ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার সময় শেষ হয়েছে গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির চুক্তি ১৬ সেন্টে করেও তারা উৎপাদনে আসতে পারেনি। গাইবান্ধায় দুই শ’ মেগাওয়াট সোলার পার্কের উৎপাদনে আসার সময় নির্ধারিত ছিল গত ২৬ এপ্রিল। তাদের প্রতিকিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ছিল ১৫ সেন্ট। তবে এখনও কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে পারেনি। মানিকগঞ্জের ৩৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার সময় শেষ হচ্ছে আগামী ৪ নবেম্বর। অথচ এখনও কোম্পানিটি কেন্দ্র নির্মাণের অর্থায়নই সংস্থান করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখন সৌর বিদ্যুতের দাম কমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ এখনও কেন্দ্র নির্মাণ করতে না পারলে অবশ্যই তার বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। কারণ এখন সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১০ সেন্টের নিচে নেমে এসেছে।
×