ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবরার হত্যার চার্জশীট নবেম্বরের শুরুতে

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

আবরার হত্যার চার্জশীট নবেম্বরের শুরুতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র ছিলেন মেহেদী হাসান তামিম ও আবদুল্লাহ আজমির। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেও পেশাগত জীবন বেছে নেননি তামিম। উল্টো জড়িয়ে পড়েন জঙ্গী কর্মকাণ্ডে। নব্য জেএমবির সদস্য হয়ে সম্প্রতি গুলিস্তান ও সায়েন্স ল্যাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে আইইডি হামলা চালান জঙ্গীরা। রবিবার গভীর রাতে ওই দুই জঙ্গীকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এদিকে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে আগামী মাসেও (নবেম্বর) শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে। সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগ (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম জানান, আটক তামিম গুলিস্তান ও সায়েন্স ল্যাবে পুলিশের ওপর বোমা হামলায় সরাসরি জড়িত। তিনি নিজেই বোমা বহন করে ছুড়ে মারার কাজ করেছেন। আর সরাসরি জড়িত না থাকলেও আজমির বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত। সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর না’গঞ্জের তক্কার মোড়ে জঙ্গী আস্তানা থেকে ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিককে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন রফিক। এখানে তিনি ছাড়া আরও চার জন জড়ো হন। ওই চার জনের দুজন হলো তামিম ও আজমির। দু’জনই কুয়েট থেকে পাস করে বের হয়েছেন। এ দুজনের সঙ্গে না’গঞ্জ থেকে আটক রফিকও কুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়া। মনিরুল ইসলাম জানান, আইএস নামে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটিও এই চারজন মিলে তৈরি করেন। এর একজন হলেন আজমির। আজমির একটি কর্পোরেট কোম্পানি সহকারী প্রকৌশলী। তিনি একটি ওয়াকিটকি ব্যবহার করেন। ওই ওয়াকিটকি নিয়েই ভিডিও তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, এই গ্রুপের মোট ৬ জন অনলাইনের মাধ্যমে র‌্যাডিক্যালাইজড হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়েছেন। তারা আইএসের সঙ্গে কানেক্টেড হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল পুলিশের ওপর হামলার উদ্দেশ্য। তারা ভিন্ন মতাদর্শ বিষয়ে ব্যাপক ধারণা নেয়ার পর নব্য জেএমবিই বেস্ট জেনেই একটি গ্রুপ তৈরি করে। এক সময় তারা ৫ সদস্যের একটি সামরিক শাখা গঠন করেন। সামরিক শাখার সদস্যদের তিনজন (রফিক, তামিম ও আজমির) গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান জানান, সেপ্টেম্বরে আরও একটি হামলার চক্রান্ত করেছিলেন তারা। এজন্য তারা না’গঞ্জে দুটি আইইডি বোমা প্রস্তুত করেন। একটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছিল, আরেকটি আংশিক। এরই মধ্যে তক্কার মোড়ে সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। এছাড়া বোমা দুটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ফলে হামলার চক্রান্ত ভেস্তে যায়। সিটিটিসি সূত্র জানায়, ’১৪ সালে কুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বের হওয়ার পর অনলাইনে জঙ্গীবাদের বই পড়া শুরু করেন তারা। ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন মতাদর্শের বই পড়েন। আজমিরের বাড়ি ভোলা, তার নেতৃত্বে ’১৮ সালে ভোলার একটি দুর্গম চরে বাড়িভাড়া করে তারা প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে আজমির তামিম রফিক ও অপর একজন পলাতক। পরে তারা সিদ্ধান্ত নেন নব্য জেএমবির আদর্শই বেস্ট। এরপর ’১৯ সালে দিকে রুমির ছোট ভাই রফিকের নেতৃত্বে ওরা একটি সামরিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। অনলাইনের মাধ্যমে বোমা তৈরির বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করেন এরা। এরা নিজেরাও একটি বোমা তৈরির ম্যানুয়াল বানায় ও সেটা ভিডিও করে রাখে। ওখানকার তৈরি বোমা দিয়েই রাজধানীর বেশ কয়েক স্থানে হামলা চালায় জঙ্গীরা ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে, ৩১ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবে বোমা (আইইডি) হামলায় এরা প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া মালিবাগ, পল্টন ও খামারবাড়ির বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমা তৈরিতেও বন্ধু রফিককে সহায়তা করেন। ‘শিবির’ সন্দেহে পিটুনি ॥ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে নবেম্বরের শুরু দিকে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করা হতে পারে। তিনি জানান, আটক জঙ্গীদের আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে উঠে আসে, তারা ‘শিবির’ সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে মারপিট করছিল। একপর্যায়ে তার মৃত্যু ঘটে। হত্যার মোটিভ জানা সম্ভব হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ১৯ জন গ্রেফতার আছেন। ১৫ জন এজাহারনামীয় ও চারজন এজাহারবহির্ভূত। আটক ৪ জঙ্গী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন, তারা শিবির সন্দেহে আবরারকে মারধর করেন। জবানবন্দীর পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্তে আসা যায় যে তাকে কি হত্যার উদ্দেশ্যেই ওরা মারধর করছিলেন, নাকি মারার জন্য মেরেছিলেন। ‘শিবির’ সন্দেহে পিটুনি, না অন্যকিছু- সেটা আরও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। আদালতে দেয়া তারিখের আগেই অর্থাৎ নবেম্বরের শুরুর দিকে তদন্ত শেষ হবে। তখন পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। ঘটনার সময় রাত তিনটা পর্যন্ত বুয়েট এলাকায় পুলিশের একটি টিম টহল দেয়। কিন্তু তারা এ সময় কোন হৈ চৈ শুনতে পায়নি। যদিও ওই রাতেই আবরারকে হত্যা করা হয় । উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার। এরপর রবিবার রাতে আবরারকে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে ২০১১ নম্বরে নিয়ে বেধড়ক পেটান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাকে ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করা হয়। নির্মম পিটুনিতে আবরার অবশেষে মারা যান।
×