ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বেগ কাটিয়ে বুয়েটে শান্তিপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষা

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

উদ্বেগ কাটিয়ে বুয়েটে শান্তিপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্বেগ কাটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। নির্বিঘেœ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিটিগুলো কাজ করছে। এদিকে আবরার হত্যার ঘটনায় আটক বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এর আগে সম্প্রতি শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি জুড়ে দেয়। তাদের দাবি মানা না হলেও ভর্তি পরীক্ষা হতে দেয়া হবে না বলেও জানায় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি দাওয়া মেনে নিতে শুরু করলে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করে আন্দোলনকারীরা। সোমবার সকাল ৯টায় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ১২টায়। এরপর স্থাপত্য বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের দুপুর ২টায় অঙ্কন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। স্থাপত্য বিভাগের অঙ্কন অংশের পরীক্ষাও নির্বিঘেœ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিভাগে মোট এক হাজার ৩৯৮ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। আবেদন করেছেন ১০ হাজার ৭৬৩ জন। ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা বলেছেন, পরীক্ষা ভাল হয়েছে। কোন রকম সমস্যায় পড়তে হয়নি। এর আগে সকাল থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় ছিল বুয়েট ক্যাম্পাসে। সকাল ৯টায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে কক্ষে প্রবেশ করলে অভিভাবকরা বাইরে অবস্থান নেন। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ফ্রি পানির ব্যবস্থা করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অভিভাবকদের জন্য বসার সুব্যবস্থাও রাখে কর্তৃপক্ষ। বুয়েটে রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে ৬০, ধাতব প্রকৌশলে ৫০, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৫, পানিসম্পদ প্রকৌশলে ৩০, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৮০, নৌস্থাপত্য ও সামুদ্রিক প্রকৌশলে ৫৫, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশলে ৩০, বৈদ্যুতিক ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলে ১৯৫, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ১২০, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০, স্থাপত্য বিভাগে ৫৫ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ৩০টি আসনে ভর্তির সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম)। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আমরা কাজ করছি। আবরার হত্যার প্রতিবাদের আন্দোলন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি। ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিটিগুলো কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হয়েছে বলে আমরা ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমাদের সন্তানরা আমাদের কথা শুনেছে, এটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। তবে আমার বিশ্বাস তারা আমাদের বাকিটুকুও শুনবে। ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য যতটুকু পারছি আমরা করছি। নির্দেশনা অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের বের করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। পরীক্ষার জন্য সন্তানদের নিয়ে আসা অভিভাবকরাও সার্বিক অবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বুয়েট নিয়ে আশাবাদী। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী রাব্বির বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্র হত্যার ঘটনায় অভিভাবক হিসেবে উদ্বেগ অবশ্যই আছে। তবে কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা সেটিতে আশাবাদী। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় অনেকেই খুশি। তবে এতেই যে ভাল কিছু হয়ে যাবে এমনটা মনে করেন না এ অভিভাবক। এদিকে আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন আন্দোলনকারীরা। ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচী পালিত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছেন। সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। অমিত সাহাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ ॥ আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অমিত সাহাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে এই তথ্য উঠেছে এসেছে, অমিত সাহা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথোপকথনের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো। হত্যার বিচার চেয়ে নটরডেম শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ॥ আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চেয়ে রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ড্রেস পরে নটরডেম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি শাপলা চত্বরে এলে সেখানে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শাপলা চত্বরে রাস্তার ওপর বসে ও দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই,’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাইরে,’ ‘এ্যাকশন এ্যাকশন, ডাইরেক্ট এ্যাকশন’, ‘আর নয় অনাচার, এবার চাই সুবিচার’- শিক্ষার্থীদের এ ধরনের স্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল এলাকা। শাপলা চত্বর মোড়ে পুলিশ পাহারায় মিনিট দশেক বিক্ষোভ করার পর শিক্ষার্থীরা আবার মিছিল করতে করতে নটরডেম কলেজের সামনে ফিরে যান। বিক্ষোভে অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা ক্লাস শেষ করে আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুতই এ বিচার করতে হবে। বিক্ষোভ দেখে সেখানে উপস্থিত হন নটরডেম কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জিত কুমার গুহ। ছাত্রদের দাবির বিষয়ে সঞ্জিত কুমার গুহ বলেন, ছাত্রদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এই হত্যাকা-ের বিচার দাবি করছি পাশাপাশি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছি তারা যেন ক্লাসে ফিরে যায়। নটরডেম কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ব্রায়ন রোজারিও বলেন, আবরার ফাহাদ নটরডেম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। এই অনুভূতির জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা হয়তো রাস্তায় নেমেছে। বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত, আমরাও এর বিচার দাবি করছি। তবে ছাত্রদের কর্মসূচীর কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়টি আমরা দেখেছি।
×