ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল

বাংলাদেশ-ভারত মহারণ আজ কলকাতায়

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ-ভারত মহারণ আজ কলকাতায়

জাহিদুল আলম জয় ॥ ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই ভিন্ন আবহ। দু’টি দেশের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করে টানটান উত্তেজনা। এখন অবশ্য ক্রিকেটসহ প্রায় সব খেলাতেই একই অবস্থা। ভারতের বিরুদ্ধে খেলা হলেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে। এমন আরেকটি উপলক্ষ দুয়ারে উপস্থিত। কেননা ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল ও ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের হাইভোল্টেজ ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৮টায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে স্টার স্পোর্টস ১ ও স্টার স্পোর্টস ২ চ্যানেল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ভারতের বিরুদ্ধে ফুটবলে জয় যেন ভুলেই গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেই ২০০৩ সালে সর্বশেষ ভারতের বিরুদ্ধে জিতেছে লাল-সবুজের দেশ। এরপর ছয়বার মুখোমুখি হলেও জয় আসেনি একবারও। যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই আক্ষেপ ঘোচানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুধু তাই নয়, বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত জয় দূরে থাক, দু’টি ম্যাচ খেলে একটিতেও ড্র করতে পারেনি বাংলাদেশ। যে কারণে ভারতকে হারাতে পারলে সবদিক দিয়েই ষোলোকলা পূর্ণ হবে কোচ জেমি ডে’র দলের। সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রিতদের কাবু করতে পারলে ১৬ বছর পর ভারতকে হারানোর তৃপ্তির পাশাপাশি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ মিলবে। এ লক্ষ্যেই ময়দানী লড়াইয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় জামাল, রানা, সাদ, ইয়াসিনের মতো তরুণরা। কলকাতায় খেলা হওয়ায় অনেকে বলছেন, লড়াইটা হতে যাচ্ছে দুই বাংলার। অর্থাৎ এপার বাংলার সঙ্গে ওপার বাংলার। এই লড়াইয়ের আগে ঘুরেফিরে আসছে অনেক স্মৃতি। কেননা দীর্ঘ ৩৪ বছর পর যুবভারতীতে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত খেলেছিল ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। সেটাও ছিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ভারত। প্রায় তিন যুগপর একই মঞ্চে মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিবেশী দেশ। এ কারণে কলকাতার দর্শকদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। মাঠে খেলা দেখতে মুুখিয়ে আছেন তারা। তাই তো টিকেটের জন্যও হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার দর্শকদের ম্যাচটি দেখতে মুখিয়ে থাকার আরেকটি বড় কারণ আছে। ভারত জাতীয় দল প্রায় ৯ বছর পর কলকাতায় ফুটবল ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। আজকের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও ভারত মুখোমুখি হয়েছে ২৪ বার। এর মধ্যে ভারতের জয়ের পাল্লা অনেক বেশি। তারা জিতেছে ১১ ম্যাচ। আর বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। বাকি ১০ ম্যাচ ড্র হয়। অবশ্য এই পরিসংখ্যান নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। আরেক পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, দু’দেশ মুখোমুখি হয়েছে ২৮ বার। এতে বাংলাদেশের মাত্র ২ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ১৫ ম্যাচে। বাকি ১১টি ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে ভারত। যেখানে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ১৮৭ সেখানে ভারতের ১০৪। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের আগে পরিসংখ্যানও চোখ রাঙানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। কেননা দীর্ঘ ১৬ বছর ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে বেঙ্গল টাইগার্সরা সর্বশেষ জিতেছিল ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি। মঞ্চটা ছিল সাফ ফুটবলের সেমিফাইনাল। সেবার মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে জিতেছিল বাংলার ছেলেরা। ওই জয়ের পর একযুগ চার বছর কেটে গেলেও ফুটবলে জাতীয় দল আর একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ছয়বারের দেখায় একবারও জয়ের হাসি হাসতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। অবশ্য দু’দলের সর্বশেষ দুই দ্বৈরথে কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। দু’টি ম্যাচই ড্র হয়। এখন পর্যন্ত দু’দলই গ্রুপে দু’টি করে ম্যাচ খেলেছে। পাঁচ দলের মধ্যে দুই ম্যাচেই হেরে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে সবার তলানিতে বাংলাদেশ। আর এক হার ও এক ড্রয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে ভারত। গত ১০ সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তানের দুশানবেতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগানিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। আর গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মাঠ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গোল মিসের মহড়া করে পরবর্তী বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারের কাছে হারতে হয় ২-০ গোলে। দু’টি ম্যাচেই বাংলাদেশ ভাল খেলেও সুযোগ মিসের খেসারত দিয়ে হেরেছে। অন্যদিকে ভারত তাদের প্রথম ম্যাচে ওমানের কাছে ২-১ গোলে হারের পর গত ১০ সেপ্টেম্বর কাতারের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে চমক দেখায়। তবে পরিসংখ্যান নিয়ে পড়ে থাকতে চান না ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। তিনি বরং ময়দানী লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করছেন। তেমনি বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে জানিয়েছেন, যেহেতু ভারত স্বাগতিক সেহেতু তারা চাপে থাকবে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে। ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে বলেন, মাঠে অনেক দর্শক থাকবে। ছেলেরা দারুণ অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। আশাকরি গত ম্যাচগুলোর মতো ভাল খেলবে দল। ব্রিটিশ কোচ আরও বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে ভারত ভাল খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে রক্ষণে ভাল করা। দ্রুত গোল না খাওয়া। আমার বিশ্বাস, স্বাগতিক হিসেবে ভারতই চাপে থাকবে। এই সুযোগটাই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ম্যাচটি খেলতে মুখিয়ে আছেন। ডেনমার্কের লীগে খেলা এই তারকা মিডফিল্ডার বলেন, দু’দলের খেলোয়াড়রাই অধীর আগ্রহে ম্যাচটির জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক বড় ম্যাচ এটা। আমরা ভারতের হৃদয় ভেঙ্গে দিতে চাই। আমাদের ওপর কোন চাপ নেই। চাপ থাকবে ভারতের ওপর। বাংলাদেশ অধিনায়ক আরও বলেন, ম্যাচটি জিততে পারলে আমাদের ফুটবলে কিছু পরিবর্তন আসবে। দেশের ফুটবলের আরও উন্নতির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জেতা দরকার। মর্যাদার লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশেকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ও দলটির ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ। ৫২ বছর বয়সী ইগর বলেন, কাতারের কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচেও বাংলাদেশ তাদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে। ওই ম্যাচে যদি সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারত তাহলে ওরা জিততে পারত। তাই আমি চাই না কেউ বাংলাদেশ দলকে হাল্কা করে দেখুক। এটা মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশেরও অনেক প্রত্যাশা আছে। তারা কিন্তু এখানে হারতে আসেনি; জিততেই এসেছে।
×