ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাইফুল্লাহ মনসুর ইসহাক

অদম্যদের অণুবীক্ষণ

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

অদম্যদের অণুবীক্ষণ

সালটা ২০১৬, হিমু, শাহরিয়ার, বদরুল কৈশোরে ছুটে চলা টগবগে তিন তরুণ। তখন সদ্য মাধ্যমিক শেষ করে কলেজের গ-িতে পা দেয়া এই তরুণদের সাধ্য সীমিত হলেও স্বপ্নের আকাশ ছিল অনেক বিশাল। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে শুরু হয় সামাজিক সংগঠন ‘অণুবীক্ষণ’ এর যাত্রা। এই কয়েকটি বছরের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়েও সংগঠনটি তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে অণুবীক্ষণে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা সবাই কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী। অণুবীক্ষণের মাধ্যমে সমাজের তথা দেশের জন্য নিজ জায়গা থেকে সাধ্যমতো কাজ করার মনোবল নিয়েই সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা তাদের। বাকি আর দশজনের মতো হৈচৈ আর আড্ডার বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা অণুবীক্ষণের ডাকে ছুটে চলে সমাজের অবহেলিতদের দ্বারে দ্বারে। আর এই তরুণদের স্বপ্ন আর কাজের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে অণুবীক্ষণ। সুশিক্ষাই একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম। তাই সমাজের অবহেলিত আর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই হলো তাদের মূল উদ্দেশ্য। সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি সম্প্রতি সিলেটের খাদিমনগর চা বাগানে মুন্ডা সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য একটি স্কুল করে দিয়েছে তারা। আর সেই স্কুলের বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষকদের বেতনও দিচ্ছে এই সংগঠন। আর এর মাধ্যমে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে চা বাগানের পিছিয়ে পড়া মুন্ডা সম্প্রদায়। অণুবীক্ষণের সকল সদস্যদের দেয়া চাঁদা ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদানের টাকায় চলছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার খরচ। সম্প্রতি বৃক্ষরোপণ নিয়ে তাদের একটি প্রজেক্ট ‘অণুবীক্ষণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী’ চলমান রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বৃক্ষরোপণ করা হবে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফুল, ফল ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হবে। চলতি বছরের ৭ আগস্ট থেকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে শুরু হয় এই প্রজেক্টের প্রথম কাজ। আবার প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের সময় পথশিশুদের ঈদের নতুন জামা বিতরণ করা হয়। আমাদের সমাজের বেড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও অপরাধের ইস্যুতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে। নিজ শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে ‘সিটি গ্রীন সিলেটে’র সঙ্গেও সম্পৃক্ত। অংশ নিচ্ছে শহরের পরিচ্ছন্নতা কাজে। সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে ঈজও এর তথ্য মতে অণুবীক্ষণ দেশের সেরা ৫০টি সামাজিক সংগঠনের মধ্যে স্থান পায় এবং পুরস্কার হিসেবে অর্জন করে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড-১৮’। একটি সংগঠন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ফান্ডিংয়ের। আর সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্রে কাজের ও ফান্ডের ভারসাম্য রাখা অনেকটাই কঠিন। তাই অন্যসব সংগঠনের মতো অণুবীক্ষণের কাজ মূলত পরিচালিত হয় সদস্যদের নির্ধারিত চাঁদার টাকায়। আবার বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজের জন্য অণুবীক্ষণ তার শুভাকাক্সক্ষীদের দ্বারস্থ হয়। অণুবীক্ষণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আরও অনেকগুলো প্রজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু কার্যক্রম রয়েছে। শুধু সিলেটের হয়ে নয় পুরো দেশের হয়ে সামাজ সংস্কার ও উন্নতিমূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর এই সংগঠন। আর এজন্য সচেতন সব মহলের সহযোগিতার দ্বারা এগিয়ে যেতে চায় তারুণ্যের শক্তিতে।
×