ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪ বছর পর যুব ভারতীতে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

৩৪ বছর পর যুব ভারতীতে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব পথ যেন এক জায়গায় মিশে গেছে; ভারতের কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের এই মঞ্চেই কাল মঙ্গলবার ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে সফরকারী বাংলাদেশ। বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। ফুটবলে সবসময়ই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও ভারত। দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবসময়ই উত্তেজনা বিরাজ করে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটাই আলাদা। কেননা লড়াইটা হতে যাচ্ছে কলকাতায়। যেখানে বাংলাভাষীর সংখ্যাই বেশি। এ কারণে অনেকে বলছেন, লড়াইটা হতে যাচ্ছে দুই বাংলার। অর্থাৎ এপার বাংলার সাথে ওপার বাংলার। এই লড়াইয়ের আগে ঘুরেফিরে অনেক স্মৃতিই ফিরে আসছে। কেননা দীর্ঘ ৩৪ বছর পর যুব ভারতীতে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত খেলেছিল ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। সেটাও ছিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ। ওই ম্যাচে ২-১ জিতেছিল ভারত। প্রায় তিন যুগ পর একই মঞ্চে মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিবেশী দেশ। এ কারণে কলকাতার দর্শকদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। মাঠে খেলতে দেখতে মুুখিয়ে আছেণ তারা। তাইতো টিকেটের জন্যও হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার দর্শকদের ম্যাচটি দেখতে মুখিয়ে থাকার আরেকটি বড় কারণ আছে। ভারত জাতীয় দল প্রায় ৯ বছর পর কলকাতায় ফুটবল ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে ফুটবল উন্মাদনায় ভুগছে গোটা কলকাতা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের জন্য ৬৫ হাজার টিকিট ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ দর্শকদের জন্য ৪৫ হাজার। যার মধ্যে ৩৫ হাজার টিকেট অনলাইনে ছাড়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। বাকি ২০ হাজার টিকিট ভারতীয় ফুটবল সংস্থার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও রাজ্য সরকারের জন্য বরাদ্দ। তবে সেখান থেকেও সাধারণ দর্শকদের জন্য কিছু টিকিট বুথে দেওয়া হয়েছিল। সেটাও মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আরেকটি ভারত-বাংলাদেশ মহারণ সামনে রেখে দুই বাংলার সমর্থকদের মধ্যে এখন তুমুল আলোড়ন। জামাল ভূঁইয়াদের সাথে সুনীল ছেত্রীদের লড়াইয়ে কে হারবেন, কে জিতবেন সেটা দেখতে মুখিয়ে আছেন সবাই। তবে পরিসংখ্যানে দৃষ্টি দিলে লাল-সবুজের দেশকে হতাশই হতে হবে! কেননা দীর্ঘ ১৬ বছর ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে বেঙ্গল টাইগার্সরা সবশেষ জিতেছিল ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারী। মঞ্চটা ছিল সাফ ফুটবলের সেমিফাইনাল। সেবার মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে জিতেছিল বাংলার ছেলেরা। ওই জয়ের পর এক যুগ চার বছর কেটে গেলেও ফুটবলে জাতীয় দল আর একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ছয়বারের দেখায় একবারও জয়ের হাসি হাসতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। অবশ্য দু’দলের সবশেষ দুই দ্বৈরথে কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। দু’টি ম্যাচই ড্র হয়। আজকের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও ভারত মুখোমুখি হয়েছে ২৪ বার। এর মধ্যে ভারতের জয়ের পাল্লা অনেক বেশি। তারা জিতেছে ১১ ম্যাচ। আর বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। বাকি ১০ ম্যাচ ড্র হয়। অবশ্য এই পরিসংখ্যান নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে! আরেক পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, দু’দেশ মুখোমুখি হয়েছে ২৮ বার। এতে বাংলাদেশের মাত্র ২ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ১৫ ম্যাচে। বাকি ১১টি ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। দুই দলের লড়াইয়ে বাংলাদেশ গোল করেছে ১৮টি। বিপরীতে গোল হজম করেছে ৩৪টি। যে কারণে এবারের মহারণে পরিসংখ্যানে অন্তত এগিয়ে থেকে মাঠে নামছে ভারত। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে তারা। যেখানে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ১৮৭ সেখানে ভারতের ১০৪। এ কারণে বলা চলে সব দিক দিয়েই বাংলাদেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। তবে পরিসংখ্যানে নিয়ে পড়ে থাকতে চাননা ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। তিনি বরং ময়দানী লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করছেন। তেমনি বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে জানিয়েছেন, যেহেতু ভারত স্বাগতিক সেহেতু তারা চাপে থাকবে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে। এখন পর্যন্ত দু’দলই গ্রুপে দু’টি করে ম্যাচ খেলেছে। পাঁচ দলের মধ্যে দুই ম্যাচেই হেরে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে সবার তলানীতে বাংলাদেশ। আর এক হার ও এক ড্রয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে ভারত। গত ১০ সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তানের দুশানবেতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগানিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। আর গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মাঠ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গোল মিসের মহড়া করে পরবর্তী বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারের কাছে হারতে হয় ২-০ গোলে। দু’টি ম্যাচেই বাংলাদেশ ভাল খেলেও সুযোগ মিসের খেসারত দিয়ে হেরেছে। সমশক্তির ভারতের বিরুদ্ধে তাই প্রথম পয়েন্টের খোঁজে মাঠে নামছেন জামাল, রবিউল, রহমত, ইয়াসিনরা। অন্যদিকে ভারত তাদের প্রথম ম্যাচে ওমানের কাছে ২-১ গোলে হারের পর গত ১০ সেপ্টেম্বর কাতারের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে চমক দেখায়।
×