ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিছু একটা ঘটছে-চোখ কান খোলা রাখুন ॥ নির্দেশ তারেকের

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

  কিছু একটা ঘটছে-চোখ কান খোলা রাখুন ॥  নির্দেশ তারেকের

শংকর কুমার দে ॥ ‘কিছু একটা ঘটছে, চোখ-কান খোলা রাখুন’- এ নির্দেশ লন্ডনে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ নেতারা। ওই বৈঠকে টেলিফোনে যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। টেলিফোনে তারেক জিয়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এই মেসেজ দেন। এই নিয়ে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই তৎপর হয়েছে বিএনপি। আর এ নির্দেশ এসেছে খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে- যিনি নাশকতামূলক বহু কর্মকান্ডের হোতা। আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনার পর ছাত্রদের গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফায়দা লুটতে চায় বিএনপি, বিশেষ করে তারেক রহমান। সরকারের বিরুদ্ধে কোন ইস্যু না পেয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রদের কোঠা আন্দোলনের সময়ে বিএনপিও যে তৎপরতা চালিয়েছিল তারেক রহমান প্রদত্ত ওই ফোনের অডিও সংলাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সেই চক্রান্ত অবশ্য ভেস্তে যায়। এবারও ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে টেলিফোনে যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান। গোয়েন্দা সংস্থার মতে, লন্ডন থেকে তারেক রহমান বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির শীর্ষ নেতাকর্মীদের বলেছেন, ‘কিছু একটা ঘটছে। চোখ-কান খোলা রাখুন।’ দলের নেতাকর্মীদের দলের কর্মসূচী এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি। তারেক রহমান একইসঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কর্মসূচী গ্রহণ, সর্বক্ষণ চোখ-কান খোলা রাখার নির্দেশ দেন। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হন বিএনপির শীর্ষ নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজউদ্দিন। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দলের ‘সংস্কারপন্থী’ অংশের মহাসচিব ছিলেন হাফিজ। এর আগে ছিলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পানি সম্পদমন্ত্রী। গ্রেফতারের পর জামিনও লাভ করেছেন মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন। কিন্তু মেজর হাফিজের গ্রেফতার, জামিনে মুক্তিলাভ ও তার বিরুদ্ধে যে মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির সহ-সভাপতি মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদকে (বীরবিক্রম) শনিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মেজর (অব) হাফিজকে গ্রেফতার করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮ এর ২৭/৩১/৩৫ ধারায় পল্লবী থানায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২ মে বেলা এগারোটা ৫৭ মিনিটের দিকে কর্নেল (অব) ইসহাক মিয়ান (৬৩) তার মিরপুর ডিওএইচএসের বাসা থেকে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে একটি বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি ’১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব ও পুলিশসহ অন্যান্য সরকারী সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পাঠান, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। ওই বার্তায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আসামির এমন কার্যকলাপ সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির হীনচেষ্টা। গ্রেফতার হওয়া হাফিজ উদ্দিন ও ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেনের রিমান্ডের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেকেই তাদের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দেবে। অপরদিকে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল কুষ্টিয়া যায় বুয়েটে খুন হওয়া আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। রবিবার বেলা এগারোটা ৪০ মিনিটের দিকে পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের লালন শাহ সেতুর ভেড়ামারা অংশের টোল প্লাজা থেকেই পুলিশ তাদের ফেরত পাঠায়। পুলিশী বাধায় আবরার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি ঢাকা থেকে প্রেরিত বিএনপি প্রতিনিধি দল। ঢাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির ওই প্রতিনিধি দল কুষ্টিয়া যাচ্ছিল। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন নাজিম উদ্দিন আলম, মেহেদী রুমি ও সোহরাব উদ্দিন। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানে কোনঠাসা অবস্থায় আছে বিএনপি। দলের অনেক নেতা-কর্মীই আতঙ্কে রয়েছেন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাঠ দখল করতে চায় বিএনপি। ওই সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর তারেক রহমান। যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘের বিবৃতি প্রদানে তার নেপথ্য ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা। এ জন্য তাকে সহযোগিতা করছে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টাকারী অশুভ মহলও। তারেক রহমান শুদ্ধি অভিযানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু একটা করা যায় কি না সে রকম একটি নীলনক্সা প্রণয়ন করে বিএনপিকে মাঠে নামাচ্ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি এখন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়েছে। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেশি মনোযোগী বিএনপি। কারণ তারেক জিয়া কখনও সুস্থ ধারার রাজনীতির কথা চিন্তা করেন না, সব সময় তারেকের মাথায় থাকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সেই পরিস্থিতি কাজে লাগানো। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযান, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ যুবলীগের কোণঠাসা অবস্থান, আবরার হত্যা নিয়ে অন্য কোন অরাজনৈতিক খেলায় তারেক জিয়া তৎপরতা চালানোর ষড়যন্ত্রে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যেমনটা কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে তারেক রহমান তার ক্যাডারদের মাঠে নামিয়েছিলেন। ওই আন্দোলনের মাধ্যমে একটা পরিস্থিতি তৈরি করে সরকার ফেলে দেয়ার একটা নীলনক্সা প্রণয়ন করেছিলেন। ঢাবির বিএনপিপন্থী এক শিক্ষকের সঙ্গে লন্ডন থেকে তারেক রহমান টেলিফোনে কিছু একটা করার জন্য নির্দেশও দেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
×