ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দুর্নীতি দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

ধনী-দরিদ্রের আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

ধনী-দরিদ্রের আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘দুর্নীতি দমনে’ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ধনী ও দরিদ্রের আয়বৈষম্য কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সঠিকভাবে পরিচালনা করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে দ্রুত গতি আনা হবে। বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপে দেশে-বিদেশে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে, যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতি দমনের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে বলা হয়েছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠাই হবে আওয়ামী লীগের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সুশাসন ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক মুক্তি একেবারেই অসম্ভব। ইতোমধ্যে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবাসী বাঙালীরা। এছাড়া ধনী-গরিবের আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে লক্ষ্যে দুর্নীতি দমনে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আয় বৈষম্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক এই সমস্যার কারণে দেশে দুর্নীতি বাড়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে তার সরকার। দেশের প্রত্যেকটি মানুষই যাতে খেয়েপরে ভালভাবে বসবাস করতে পারে সেলক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বন্ধ হলে দুর্নীতি উন্নয়নে আসবে গতি’। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভাগীয় কার্যালয় ৬টি থেকে ৮টি এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয় ২২টি থেকে ৩৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ হতে এক প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ দুর্নীতি দমন কমিশনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রাপ্ত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ যথাযথভাবে পরিবীক্ষণের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এটি ব্যবহার করার জন্য ২০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণ দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি যথাযথ কার্যকর কমিশন হিসেবে দেখতে চায়। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতি দমনের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলেও এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দশটির অন্যতম একটি কর্মসূচী হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ কারণে বর্তমান সরকারের চলমান অভিযানকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনী ইশতেহার ও বাজেট ঘোষণার বাস্তবায়ন। সরকারের এই অভিযান ও কর্মকান্ডে প্রবাসী বাঙালীরা খুশি। এমনকি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এক ধরনের স্বস্তি তৈরি হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বাবুল মোহাম্মদ সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে প্রবাসীরা স্বাগত জানায়। শুধু তাই নয়, দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগের ফলে ইতোমধ্যে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রবাসীরা এখন দেশে নতুন বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সুশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কারণে সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি দমনে আওয়ামী লীগের ঘোষণা ॥ গত ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতজোট সরকারের আমলে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে কলঙ্কিত হয়েছে। বিশেষ করে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে প্রকাশিত রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীদের অতীতের দুর্নীতির লোমহর্ষক কাহিনী জাতিকে লজ্জিত করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের দুর্নীতির কলঙ্কমোচন এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, করখেলাপী ও দুর্নীতিবাজদের বিচার করে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সুশাসনেরও অন্যতম পূর্বশর্ত। এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার ৪টি পূর্বশর্ত যার অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। অন্য তিনটি শর্ত হচ্ছে, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা বিধান, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রচর্চা নিরঙ্কুশ করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দলীয় সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে জনহিতে নিবেদিত নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি জবাবদিহিতামূলক, পেশাদারি ও দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলা। দুর্নীতি দমন কমিশনকে জনগণের আস্থাভাজন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে এর ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারী ক্রয়, প্রকল্প নির্বাচন, প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার এবং সম্পন্ন প্রকল্পের মান যাচাইয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ধারা সংহত ও অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করা হবে। ইতোমধ্যে এ ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ আদালত, শিক্ষাঙ্গন ও স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা এনে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি প্রশমনের যে ধারা সূচিত হয়েছে তাকে আরও বেগবান করা হবে। খেলাপী সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বেসরকারী খাতে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ প্রক্রিয়ায় কোনভাবেই মূলধন রেয়াত দেয়া হবে না। বার বার পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ রহিত করা হবে এবং রুগ্ন শিল্পকে গুটিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংকের লেনদেন বা জনশক্তি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করা হবে। প্রকল্প মূল্যায়ন ও ঋণ পর্যবেক্ষণকে আরও বস্তুনিষ্ঠ ও উন্নত করা হবে। বন্ধ কল কারখানা চালু করার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা রয়েছে। এছাড়া আমাদানি-রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েজ, ওভার ইনভয়েজ, শুল্ক ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচার, হুন্ডি, সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে অতি মুনাফা প্রভৃতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
×