ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভেসে যেতে চায় মন ফেলে যেতে চায় এই কিনারায়...

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

ভেসে যেতে চায় মন  ফেলে যেতে চায়  এই কিনারায়...

মোরসালিন মিজান ॥ আমার যায় বেলা, বয়ে যায় বেলা...। বেলা সত্যি খুব দ্রুত বয়ে যায়। এই সেদিন শুরু হলো ভাদ্র। আর এখন আশ্বিনও প্রায় ফুরিয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার শরতের শেষ দিন। বিদায়ের সুর বাজছে প্রকৃতিতে। প্রিয় ঋতু এবারও বাংলার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। দারুণ মুগ্ধতায় কেটেছে প্রতিটি দিন। বছরের অন্যান্য সময় আকাশের দিকে চোখ তুলে না তাকালেও চলে। শরত শুরু হতে না হতেই অন্য ছবি। চোখ আপনি চলে গেছে আকাশের পানে। ‘নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই- লুকোচুরি খেলা...।’ প্রকৃতিপ্রেমীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে এ খেলা প্রত্যক্ষ করেছেন। এত নীল, এত সাদা, এত মাখামাখি ভাল না লেগে উপায় কী! একই সময় নদীর দুই ধারে দৃশ্যমান হয়েছে কাশফুল। এখনও মৃদু মন্দ হাওয়ায় দুলছে। একই দোলা অনুভূত হচ্ছে মনে। কবিগুরুকে তাই হয়তো লিখেছিলেন- ‘আজি শরতপবনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।/ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো...।’ শরতের সকালটিও উপভোগ্য ছিল। এখনও শিউলি ফুলের ঘ্রাণে সকাল শুরু হচ্ছে। নজরুল থেকে বললে- ‘শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।/শেফালি ফুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা...।’ অন্যত্র কবি লিখেছিলেন, ‘এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে...। শিউলি বিছানো পথ দেখা যাচ্ছে এখনও। আনন্দ যোগ করার পাশাপাশি হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে রাখা প্রাচীন বেদনাকে খুঁড়ে বের করে এনেছে শরত। সে কথা জানিয়ে নজরুল লিখেছিলেন, ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই...।’ একইরকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছিলেন, দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।/শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়...।’ শিউলি ফোটানো শরতের বন্দনা হয়েছে দুই মাস। ভাদ্র মাসের প্রথম দিনই রাজধানীর চারুকলার বকুলতলায় শরত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সঙ্গীত নৃত্য কবিতার ভাষায় প্রিয় ঋতুর রূপ বর্ণনা করেন আয়োজকরা। একই স্থানে কয়েকদিন আগে শরতকে বিদায় জানিয়েছে বাঙালীত্বের গৌরব নিয়ে এগিয়ে চলা ছায়ানট। এ আয়োজনে শহর ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। অন্যান্য মঞ্চ থেকেও শরতের বন্দনা করা হয়েছে। রচিত হয়েছে নতুন নতুন কবিতা। আর তার পর বিদায় লগ্ন। ‘ভেসে যেতে চায় মন,/ফেলে যেতে চায় এই কিনারায় সব সব চাওয়া সব পাওয়া...।’ সব চাওয়া পাওয়া ভুলে বিদায় নিচ্ছে শরত। প্রকৃতির নিয়মেই বিদায়। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই ফিরবে আবার। সে পর্যন্ত অপেক্ষা।
×