ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে বরইতলায় একাত্তরের নিহত শহীদদের শোক শ্রদ্ধায় স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

কিশোরগঞ্জে বরইতলায় একাত্তরের নিহত শহীদদের শোক শ্রদ্ধায় স্মরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ ॥ শোক ও শ্রদ্ধায় কিশোরগঞ্জে বরইতলা গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। একাত্তরের ১৩ অক্টোবর সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইল বরইতলায় স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের ৩৬৫ জন মানুষকে কাতারবন্দি করে একসঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। একদিনে একসঙ্গে এতগুলো মানুষকে হত্যার ঘটনা খুবই বিরল। এরপর থেকেই দিবসটি ‘বরইতলা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আজ রবিবার সকালে বরইতলায় শহীদদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মোস্তফা, সদরের ইউএনও আব্দুল কাদির মিয়া, কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আসাদ উল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের স্বজনেরা। পরে প্রবীণ শিক্ষাবিদ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়েছে। জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের বরইতলাটি ময়মনসিংহ-ভৈরব-ঢাকা রেলপথের পাশেই এর অবস্থান। একাত্তরের ১৩ অক্টোবর বিশেষ ট্রেনযোগে পাকিস্তানী সেনারা স্থানীয় দোসরদর সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বরইতলা এলাকায় পৌঁছে। আগে থেকেই স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আল-শামসরা আশপাশের দামপাড়া, চিকনিরচর, কালিকাবাড়ি, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর, ভুবিরচর, কড়িয়াইলসহ কয়েক গ্রামের অন্তত ৪০০ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জড়ো করে রেখেছিল হানাদারদের স্বাগত জানানোর জন্য। হানাদাররা বরইতলায় নামলে কিছু হানাদার সৈন্য রাজাকারদের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ঢুকে লুটপাটে মত্ত হয়। এরপর যখন এরা গ্রামগুলো থেকে ফিরে আসে তখন এক রাজাকার রটিয়ে দেয়, দু’জন হানাদার সেনাকে গ্রামবাসী গুম করে ফেলেছে। একথা শুনেই উন্মত্ত হানাদাররা সমবেত গ্রামবাসীর ওপর দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার, বেয়নেটের খোঁচা, রাইফেলের বাট, শাবল আর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কয়েক মুহুর্তে ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ সময় অনেকে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে গিয়ে নামাজের ভান করে রক্ষা পান। কেউ মরে গেছেন ভান করে রক্তাক্ত লাশের স্তুপে পড়ে থেকে রক্ষা পান। আবার কেউ কেউ আহত অবস্থায় মৃতের ভান করে রক্ষা পান। আহতদের কেউ কেউ এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শহীদদের স্মরণে বরইতলা এলাকাটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদনগর’। যদিও প্রচারণার অভাবে এ নামটি এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। এখানে তৈরি করা হয়েছে শোকের প্রতীক গাঢ় কালো সুউচ্চ স্মৃতিসৌধ। স্থাপন করা হয়েছে শহীদদের নামাঙ্কিত ফলক। ২০০০ সনে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৬৬৭ বর্গফুট এলাকা জুড়ে ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটির নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর নকশা প্রণয়ন করেন সজল বসাক। স্মৃতিসৌধের ফলকে খোদাই করা শহীদদের নাম মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই রক্তাক্ত ভয়াল দিনে। প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর স্মৃতিসৌধের বেদিতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পন করে।
×