ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র- ড. মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১২ অক্টোবর ২০১৯

সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র- ড. মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে করা চুক্তি বাতিল, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও অনুমতি না থাকায় পুলিশি বাধার কারণে তখন সমাবেশ করতে পারেনি। তবে পুলিশের মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর বেলা ২টার দিকে শুরু হয় বিএনপির সমাবেশ। যা চলে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড, খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন বর্তমান সরকার খাদে পড়ে গেছে। এ সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ড. মোশাররফ বলেন, ভারতের সঙ্গে করা প্রতিটি চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী, তাই দেশের জনগণ কোনদিন এসব চুক্তি মেনে নেবে না। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের রক্ত সরকার পতনের বীজ বপন করে গেছে। জনগণ আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দেবে না। এ সরকারকে জনগণ কখনো বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, শহীদ জেহাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার পতনের বীজ বপিত হয়েছিল। তেমনি আবরারের রক্তের বিনিময়ে এ সরকারের পতনের বীজ বপিত হয়েছে। এ সরকারের পতনের সময় হয়ে গেছে। ড. মোশাররফ বলেন, দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আবরার স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। এটা দেশের মানুষের প্রতিবাদ। মেধাবী ছাত্র বলেই আবরার সেটা করেছে। তার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো। আবরারের কথা এ দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করা হয়েছে। তবে দেশের ছাত্র সমাজ আবরার হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে ফেনী নদীর পানি উত্তোলনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিয়েছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে সম্মতি দিয়েছেন, উপকূলে যৌথ নজরদারির নামে ভারতকে ২০টি রাডার প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়েছেন। আর আমরা যে এলপিজি আমদানি করি তা ভারতে রফতানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এসব চুক্তির প্রতিটি দেশের স্বার্থবিরোধী। খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফেনী নদীর পানি উত্তোলনের অনুমতি দিলেন কিন্তু ভারত কতখানি উত্তোলন করবে তা পরিমাপ করার বিষয়ে চুক্তিতে কিছু নেই। এছাঢ়া ৩৬টি পাইপ দিয়ে ইতোমধ্যেই ফেনী নদীর পানি ভারত জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে চুক্তিতে কিছু বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভারত নেবে সামান্য পানি। কিন্তু এর ফলে ফেনী নদীর পাশের লোকজনের কৃষি কাজ ব্যহত হবে। মুহুরী প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত করেননি এবং মানবিক কারণে পানি দিয়েছেন। তাহলে কি ভারতের সাবরুম শহরের মানুষ এতদিন পানি পান করেছিল না? এটা নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, এমনিতেই দেশের ব্যবসযীরা সমুদ্রবন্দরে ক্ষতিগ্রস্থ হন। ভারতের পণ্য বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে খালাস হলে আমাদের ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আর যৌথ পর্যবেক্ষণের নামে বিদেশি রাডার স্থাপন হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিঘিœত হবে, হুমকির মুখে পড়বে। ড. মোশাররফ বলেন, শেখ হাসিনা একসময় আক্ষেপ করেছিলেন গ্যাস না দেয়ার জন্য নাকি ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তাহলে এবার কি শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তিনি চুক্তি করেছেন। অবিলম্বে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, তাঁর মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে খালেদা জিয়ারার মুক্তি নিশ্চিত হবে, গণতন্ত্রও মুক্ত হবে। এ জন্য রাজপথে লড়াই-সংগ্রামের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকার ও পুলিশের কঠোর সমালোচনা করলেও মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামকে অবহিত করেছি সমাবেশের বিষয়ে। আমরা তাদের বলেছি, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা চলে এসেছে তাই সমাবেশ করতে চাই। তখন তারা বলেছেন,ঠিক আছে আপনারা যান। শনিবার সকাল ৯টা থেকেই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির সেখানে আসতে শুরু করে দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতারা সমাবেশ শুরু করার চেষ্টা করলে পুলিশ অনুমতি ছাড়া রাস্তায় সমাবেশ করা যাবে না বলে তাদের জানায়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে পুলিশ সেখান থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক’জন নেতাকর্মীকে আটক করে। এর পর বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটে। এক পর্যায়ে আইনর্মংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সেখানে রাখা হয় সাঁজোয়া যান এবং জলকামানবাহী গাড়ি। পুলিশের মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় দলটির সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশটি শেষ করা হয় বিকেল পৌনে ৫টায়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। সমাবেশ চলাকালে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুটা দূরে অবস্থান করে। সমাবেশ থেকে আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার, ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাছিত আনজু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আলী আশফাক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
×