ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁয় শতবর্ষী বটগাছ

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ১২ অক্টোবর ২০১৯

 নওগাঁয় শতবর্ষী বটগাছ

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের পূর্ব পার্শ্বে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী একটি বটগাছ। রাস্তার দুই পাশে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির বিশাল শাখা-প্রশাখা। শিকড়-বাকরে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। শতবর্শী বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজা তরুণ আর চিরসবুজ হয়ে। যেন বার্ধক্যের ছাপ লাগেনি তার গায়ে। আর সে কারণেই এ বটগাছকে ঘিরে নানা রহস্যেঘেরা গল্প-কাহিনী এলাকায় বিদ্যমান। ‘কি শোভা, কি ছায়া গো, কি স্নেহ, কি মায়াগো, কি আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের এই চরণে গ্রামবাংলার অপরূপ শোভা, ছায়া-মায়া ও স্নেহের আঁচল বিছানো স্থান যেন আমাদের বটবৃক্ষের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শের শাহ্ সম্রাটের আমলে গ্র্যান্ডটাংক রোড নির্মাণকালে আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম সংলগ্ন বটগাছটি রোপণ করা হয়েছিল। যার বয়স এখন শত বছর পেরিয়ে গেছে। এই বটবৃক্ষের গা ঘেঁষে একটি কদম গাছের জন্ম হয়। আর সে কারণেই এ জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল কদমতলা। এখন সে কদম গাছটি আর নেই। কিন্তু কালের আবর্তে যুগ যুগ ধরে আজও তার স্মৃতিটুকু রয়ে গেছে। শের শাহ্ সমাট্রের আমলে এই এলাকা বিলাঞ্চল ছিল। রোদ-বৃষ্টির মাঝে কৃষাণ-কৃষাণি তাদের কষ্টের ফসল ফলাতো। রাখালেরা দিগন্তজুড়ে মাঠে ঘাস খাওয়ানোর জন্য গবাদিপশুকে ছেড়ে দিয়ে ক্লান্ত শরীরে শীতল ছাঁয়ার প্রতীক্ষায় থাকত। আর সে কারণেই এই বটবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। তাই গ্রীষ্মের দাবদাহে কৃষক যখন অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই একটু শীতল ছাঁয়ার আশায় এ বটবৃক্ষের নিচে জমা হতো তারা। এই বটবৃক্ষ সম্পর্কে আলাপচারিতায় ভবানীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, আমার জন্মের পর থেকেই এ বটগাছটি দেখে আসছি। এই বটগাছের কত বয়স হবে তা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব না। বর্তমানে বটগাছের নিচে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সমাগম ঘটে। এ বটগাছটি যেন সেই আদিম সনাতন সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সারকথা আজও সবার সামনে তুলে ধরে আছে। এদিকে অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বটগাছটি দেখতে আসে লোকজন বছরের প্রায় প্রতিদিন। তাদের জন্য বিশ্রাম বা বসার জায়গাটুকুও এখানে নেই। তবে বিশ্বায়নের যুগে ডিজিটাল দেশ গঠনের পাশাপাশি ক্লান্ত কৃষাণের প্রাণ জুড়ানো সবুজ প্রকৃতির বটের ছায়ার কোন বিকল্প নেই। তাই ইতিহাস- ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনকালে আমাদের বটের চারা রোপণ করা উচিত বলে প্রবীণদের অভিমত। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, এই বটবৃক্ষটি সংরক্ষণ এবং এই স্থানটিতে দর্শনার্থীদের বসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখানে আরও লোকের সমাগম ঘটবে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×