ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জেনেভা ক্যাম্প সরাতে ৬৪ একর জমিই যথেষ্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১২ অক্টোবর ২০১৯

জেনেভা ক্যাম্প সরাতে ৬৪ একর জমিই যথেষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে জেনেভা ক্যাম্প সরিয়ে নিতে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনায় কেরানীগঞ্জের আহাদীপুর মৌজায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে ৬৪ একর জমিই যথেষ্ট বলে মনে করছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। সম্প্রতি পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে আসবাবপত্র ও বালিশ; গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য বই এবং ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের জন্য পর্দা কেনায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগ ওঠে। ‘একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে’ এমন সমালোচনার ঝড় ওঠায় নড়েচড়ে বসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি প্রকল্প মূল্যায়নে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতেই ধরা পড়েছে ‘ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত অবাঙালীদের বসিলায় পুনর্বাসনের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় এই অনিয়ম। গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে ৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনায় বসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি)। ৩ অক্টোবর ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়। সেই কার্যবিবরণীর কপি সারাবাংলার হাতে এসেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, কেন এত জমির প্রস্তাব করা হয়েছে সে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা মেনেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হবে। কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে মোট ১১৬টি বিহারী ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে সাড়ে ১৪ একর জমির ওপর প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৫ হাজার। প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৪ বর্গমিটার জমি। তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে এবং জেনেভা ক্যাম্পের জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প নেয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১০ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘স্বল্প আয়ের মানুষের উন্নত জীবন ব্যবস্থা’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার সময় সিদ্ধান্ত হয় মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প নেয়া হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৬৪ একর জমির ওপর ১৪ তলা বিশিষ্ট ৫৮টি আবাসিক ভবনে ৬ হাজার ৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ৮শ’ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটসমৃদ্ধ এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। পরের বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সেই প্রস্তাবের ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পরে পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে আসে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। তাতে দেখা যায়, সভার সিদ্ধান্ত মেনে ৬৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ছোট আকারে ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। ওই বছরের ১ নবেম্বর পুনর্গঠিত ডিপিপির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই পর্যায়ে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মানা হয়নি, জানায় সূত্র। এই পর্যায়ে স্থান পরিবর্তন করে আরও বড় পরিসরে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্প ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বরের পিইসি সভায় ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয় পরিকল্পনা কমিশন। অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয় পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, বসিলায় প্রস্তাবিত স্থানে একটি প্রাইভেট ডেভেলপার কোম্পানি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। যে কারণে কেরানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান বসিলার পরিবর্তে তার এলাকায় প্রকল্পটি নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৬০টি ফ্ল্যাট ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ১০০ একর জমির প্রয়োজন হবে। অবশিষ্ট জমিতে পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গার বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় একটি টাউনশিপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে অতিরিক্ত জমির প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, একনেক সভার সিদ্ধান্ত ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারীদের পুনর্বাসন। সারাদেশের বিহারীদের একত্রিত করার পরিকল্পনা ছিল না। কেরানীগঞ্জে ইতোমধ্যে মডেল টাউন প্রকল্পের আওতায় টাউনশিপ গড়ে তুলছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাই এই প্রকল্পে নতুন টাউনশিপের প্রয়োজন নেই। সূত্র আরও জানায়, ছয়তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে প্রথম পর্যায়ে দুইতলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে প্রস্তাবিত ভবনের কোন নক্সা সংযুক্ত করা হয়নি। অন্যদিকে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দিয়ে বলেছিলেন, ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্পে নির্ধারিত ভিত অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভবন একবারে নির্মাণ করতে হবে। প্রথমবার পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় এক বছর পরে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পিইসি সভার পরে ডিপিপি আসতে সময় লাগে প্রায় ১০ মাস। জেনেভা ক্যাম্পের বিহারীদের পুনর্বাসনে ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেয়ার তিন বছর পার হয়ে গেলেও কার্যক্রম এখনও শুরুই হয়নি।
×