ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবরার হত্যার ১৯ আসামি বহিষ্কার, বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১১ অক্টোবর ২০১৯

আবরার হত্যার ১৯ আসামি বহিষ্কার, বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকালে বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক বৈঠকের শুরুতেই উপাচার্য তাদের এ দুটি দাবি পূরণের কথা জানান। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই আবরারের জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। অডিটটোরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শীক্ষাথীদের বৈঠকে অংশ নেয়ার কারনে। সভা পরিচালনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান। মঞ্চে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আছেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ এবং কয়েকজন ডিন। বুয়েটের ছাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে ভিসি বলেন, আমার নিজ ক্ষমতায় বুয়েটের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। এ সময় জোর করতালিতে এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানান শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবরারের বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে। হলগুলোয় র‌্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে দ্রুততম সময়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে ভিসি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের মধ্যে সিসিটিভি বসানো হবে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি। বলেন, ‘‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ ‘আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’ এর আগে আলোচনায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সারিবদ্ধভাবে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। অডিটোরিয়ামে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড দেন শিক্ষার্থীরা। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, বুয়েটের মেইন গেইট থেকে দুই দফা পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়ামের বৈঠক স্থলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। বিকাল ৩টার পর থেকেই লাইন ধরে আইডি কার্ড দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রবিবার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহ করান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নিরর্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি রয়েছে এই দশ দফার মধ্যে।
×