ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা

বিশ্বব্যাংক মনে করে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ

প্রকাশিত: ১২:১০, ১১ অক্টোবর ২০১৯

বিশ্বব্যাংক মনে করে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে জিডিপির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিলেও বিশ^ব্যাংক মনে করে তা হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। একই সঙ্গে নাজুক ব্যাংকিং খাতসহ দেশের অর্থনীতিতে ৪ ধরনের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এসব ঝুঁকি উত্তরণে আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কারসহ ৫ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বার্নাড হ্যাভেন। বক্তব্য দেন কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন। এ সময় অর্থনীতির এসব ঝুঁকির কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সংস্থাটির সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বার্নাড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতি, সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা, আমদানি ব্যয় ও বাজেট ঘাটতি প্রত্যাশার মধ্যে থাকা। কিন্তু এই সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি ঝুঁকিও। অর্থনৈতিক ঝুঁকিকে দু’ভাগে ভাগ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য কিছু বৈশি^ক ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে মন্দার কারণে বিশ^ রফতানি বাজার সম্প্রসারণ কম হওয়া, চীনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ, ব্রেক্সিট ইস্যু ও সৌদি-ইরানের ¯œায়ুযুদ্ধ অন্যতম। তবে যদি জ¦ালানি তেলের দাম না বাড়ে বৈশি^ক মূল্যস্ফীতি না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ৪ ধরনের ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের সুশাসনের অভাব, রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা, প্রকৃত মুদ্রা বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়া এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়া অন্যতম ঝুঁকি। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ বার্নাড হ্যাভেন বলেন, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আর্থিক চলমান সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনা, রাজস্ব আয় বাড়াতে করনীতির সংস্কার, সরকারী বিনিয়োগের মানসম্মত ব্যবস্থাপনা, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে উন্নয়ন ও মানব সম্পদের উন্নয়নে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেদনে বিশ^ব্যাংক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, সরকারী বিনিয়োগ, ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগ ও সেবা খাতের প্রভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তবে সেটা সরকারের ঘোষিত পূর্বাভাস ৮ শতাংশ হবে না। এটা হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষি খাতের অবদান হবে ৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। শিল্প খাতের ৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে হয়েছিল ১৩ শতাংশ। এবার জিডিপিতে সেবা খাতের অংশ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- ব্যক্তিখাতের ভোগ বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারী ভোগ ব্যয় ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে রফতানি কমবে এবং আমদানি বেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অনেক প্রশংসার। এক্ষেত্রে সংখ্যা কোন বিষয় নয়। ইতিবাচক উন্নতি যে হচ্ছে এটিই অনেক বড় ব্যাপার। তাছাড়া দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষতা বাড়াতে ডুয়িং বিজেনেস পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, তা মোকাবেলা করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্য রয়েছে, তা পূরণ করা কঠিন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে বিশ^ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। বর্তমানে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কার ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাতের এই বিদ্যমান ঝুঁকি কতদিনে শেষ হবে তা নির্ভর করবে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের ওপর। এই সময় দেখতে হবে- খেলাপী ঋণ ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সরকার কতটুকু সফল হয়েছে তার ওপর।
×