ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১১ অক্টোবর ২০১৯

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, দেশ এগোচ্ছে, বদলাচ্ছে সংস্কৃতি ও আমাদের জীবনধারা। আর এই নিয়ে বাড়ছে মানসিক জটিলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমান সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ও মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকার বা সুযোগের সমতা বিধানে বদ্ধপরিকর। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন নাজমা খাতুন, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, সরকার মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়া ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন সংশোধন এবং ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোন সমস্যা হলে তা দূর করার চেয়ে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ কাজে সবার সহযোগিতা চান প্রতিমন্ত্রী। সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব কামরুন নাহার বলেন, কোন দেশের মানুষ কতটা সক্রিয় ও উৎপাদনশীল হবে, তা নির্ভর করে তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সুষ্ঠু সমন্বয়ের ওপর। বর্তমান সরকার আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। মানসিক স্বাস্থ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা পরিবর্তনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ড. আবুল হোসেন বলেন, শারীরিক শান্তির মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও পরিচর্যা প্রযোজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে, বিশেষ করে নারী-শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয়, বিভাগীয় এমনকি জেলা পর্যায়ে ন্যাশনাল-রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বলেন, মানসিক চাপ, প্রতিযোগিতামূলক আচরণ, যথাযথ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে যেমন বাধা হিসেবে কাজ করছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি ও আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে একটি নয় বরং একাধিক কারণ থাকে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে সর্বস্তরের উদ্যোগ, সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পর্যায়ে সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা। কেবল কোন রোগের অনুপস্থিতি নয় ও মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে একটি সুস্থতার অবস্থা যেখানে কোন ব্যক্তি তার সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন, দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবেলা করতে পারেন, দৈনন্দিন কাজ সফলভাবে করতে এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। ভিন্নভাবে বলা যায় মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আবেগীয় এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা যা কিনা একজন মানুষকে স্বাভাবিকভাবে চিন্তা, অনুভব এবং আচরণ করতে সক্ষম করে। ঢাবিতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত ॥ ঢাবি রিপোর্টার জানান, ‘মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান দিনব্যাপী এসব কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সেমিনার, গোলটেবিল আলোচনা, র‌্যালি, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি (বিপিএ) আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। অনুষ্ঠানে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিপিএ সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ নিজামুল হক ভূঁইয়া, বিপিএয়ের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াস অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ফারুকুল ইসলাম। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে পরিপূর্ণ সুস্থ ও ভাল থাকা সম্ভব নয়। মানসিক অশান্তি ও হতাশার কারণে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমাজ ও পরিবারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করতে হবে। ঢাবি ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতর এবং এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র চত্বরে স্থাপিত প্রদর্শনী স্টলে সচেতনতামূলক কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মেহ্জাবীন হক। উল্লেখ্য, প্রদর্শনী স্টলে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সেলিং সেবা দেয়া হয়। এছাড়া মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিপিএয়ের আয়োজনে ছিল দুটি ওরিয়েন্টেশন সেশন ও গোলটেবিল আলোচনা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও সরকারের প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ দেন।
×