ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবরার হত্যা মামলায় অমিত, মিজানুর ও তোহা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১১ অক্টোবর ২০১৯

আবরার হত্যা মামলায় অমিত, মিজানুর ও তোহা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় অমিত সাহা, আবরারের রুম মেট মিজানুর রহমান ও এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে আলোচিত এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। জানা গেছে, মিজানুর রহমান বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আবরার ফাহাদের সঙ্গে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন মিজানুর রহমান। সেই কক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে আবরার হত্যার ঘটনায় বেলা ১১টার দিকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি। অমিত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এজাহারে নাম নেই, কিন্তু পরে তদন্তকালে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজও (বৃহস্পতিবার) ডিবির একাধিক টিম তাদের গ্রেফতার করেছে। অমিত সাহার বিষয়ে মনিরুল জানান, একজন মানুষ ঘটনাস্থলে থেকেও ঘটনা সংগঠিত করতে পারে, আবার দেখা যায় ঘটনাস্থলে না থেকেও করতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, অমিত সাহা ঘটনাস্থলে ছিল না। তবে এই ঘটনায় তার দায়-দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ দায়-দায়িত্ব রয়েছে, সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কারও কাছে কোন তথ্য থাকলে তা ডিবি পুলিশকে দিয়ে সহায়তা করার আহ্বানও জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। টর্চার রুমে কার কী ভূমিকা ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই বলতে পারব। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা একটা ক্লিয়ার পিকচার নেয়ার চেষ্টা করছি। পুরোপুরি ক্লিয়ার পিকচার পেতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল জানান, আবরার হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ নিয়ে যাদের দাঁড়িয়ে থাকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তদন্তের স্বার্থে ও প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আগ্রহী হলে তদন্তের অংশ হিসেবে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও সাক্ষী করা হবে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ডিবি দক্ষিণ বিভাগ করলেও ডিবির অন্য বিভাগ এবং ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ কাজ করছে। জড়িতদের গ্রেফতারে কে কী করছেন কিংবা কার কী সামাজিক অবস্থান সেসব দেখা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঘটনার সময় কার কী ভূমিকা ছিল বা কোনভাবে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে সকলের দায় উল্লেখ করে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করেন তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ যদি আগেই বুঝত যে রাতে বুয়েটের হলে এমন ঘটনা ঘটবে বা ঘটতে চলেছে তাহলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হতো। অতীতে ঘটনা ঘটার সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি যে, এ ঘটনা জানলে হয়তো আবরার হত্যার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতো না। জানলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার যে রেয়াজ তাও মানতাম না। আপনারা জানেন কেউ একজন ফোন করে বলেছিল হলে গোলমাল হচ্ছে। ওই তথ্যে স্থানীয় থানা পুলিশের একটি টহল টিম সেখানে যায়। আপনারা জানেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। ওই রাতে পুলিশ অনুমতি পায়নি যে কারণে ৪০ মিনিট পুলিশ থাকার পর চলে যায়। বাইরে থেকে ভেতরে এ ধরনের কোন ঘটনার লক্ষণ পায়নি। বোঝাও যায়নি ভেতরে কোন কোলাহল। এ ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে কোন গাফিলতি আমরা পাইনি। মনিরুল ইসলাম জানান, এজাহার দায়ের আগেই পুলিশ সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেন। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, আপনারা জানেন ডিবি অতীতে অনেক ক্লুলেস জটিল মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে চার্জশীট দিয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শিবির সন্দেহে মারধর করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে শিবির সন্দেহে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ওটা একমাত্র কারণ কি না তদন্তের এ পর্যায়ে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ আরও কারণ থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন, কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম ও ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান।
×