ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুযোগ নষ্টে দুর্ভাগ্যের হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১১ অক্টোবর ২০১৯

সুযোগ নষ্টে দুর্ভাগ্যের হার বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ প্রত্যাশা ছিল বৃষ্টির। প্রত্যাশা ছিল ভাল খেলার। প্রত্যাশা ছিল জয়ের কিংবা কমপক্ষে ড্রয়ের। প্রথম দুটি প্রত্যাশা পুরোপুরিই মিটেছে। কিন্তু তৃতীয়টি হয়নি। বৃহস্পতিবার হয়নি ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’! ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হাজির ১৫ হাজার ফুটবলপ্রেমীর মুখ থেকে খেলা চলার সময় শোনা গেল ‘ইশ, আহ্ ...’ এসব শব্দ। বাংলাদেশ জাতীয় দল যে অল্পের জন্য এড়াতে পারেনি যন্ত্রণাদায়ক-হতাশাময় হার! তাদের যে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ কাতার। বিজয়ী দল প্রথমার্ধে এগিয়েছিল ১-০ গোলে। ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এশিয়া জোনের ‘ই’ গ্রুপের এই ম্যাচটি দুই অর্ধের খেলা ছিল দুই রকম। প্রথমার্ধে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। আর দ্বিতীয়ার্ধে রাজত্ব করে লাল-সবুজবাহিনী। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে, উচ্চতায়, ক্ষিপ্রতায়, ফিটনেসে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে কাতার। কিন্তু বৃষ্টিভেজা ও পিচ্ছিল মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে দাপুটে ফুটবল খেলে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দর্শকরা দারুণ উপভোগ করেছেন তাদের আক্রমণাত্মক খেলা। বেশ কবার রোমাঞ্চিত হয়েছেন তাদের খেলা দেখে। কমপক্ষে হাফ ডজন গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। নইলে খেলার ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। মোট কথা, কাতার ম্যাচে জিতলেও তাদের পূর্ণ সমীহ আদায় করে নেয় জেমি ডে’র শিষ্যরা। তবে খেলার একেবারে শেষদিকে ইনজুরি সময়ে বাংলাদেশ দল আরেকটি গোল হজম করলে তাদের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। এই গোলটি না হলে সারাক্ষণই একটা আশা ছিল এই বুঝি গোল শোধ করে সমতায় ফিরবে বাংলাদেশ। তবে হারলেও বাংলাদেশের খেলা মুগ্ধ করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হেরেছিল আফগানিস্তানের কাছে। আর কাতার প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে একই দলকে উড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের রুখে দিয়েছিল ভারত (০-০)। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামী ১৫ অক্টোবর কলকাতায়। প্রতিপক্ষ ভারত। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে আছে কাতার। অথচ এএফসি এশিয়ান কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কিন্তু তারাই। এ রকম শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করেই খেলেছে বাংলাদেশ। ফিফা বিম্বকাপ বাছাইাপর্ব হলেও এটি একই সঙ্গে এএফসি এশিয়ান কাপেরও বাছাইপর্ব। ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক বিধায় কাতার ওই আসরে সরাসরি খেলবে। তবে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে থাকায় তাদের ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইয়েও অংশ নিতে হচ্ছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দলটি বাংলাদেশ থেকে ১২৫ ধাপ এগিয়ে। যেখানে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ১৮৭, সেখানে কাতারের অবস্থান ৬২ নম্বরে। শুধু তাই নয়, হেড টু হেডেও যোজন ব্যবধানে কাতারের চেয়ে পিছিয়ে আছে লাল-সবুজরা। এ পর্যন্ত ৪টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এর মধ্যে ৩টি ম্যাচেই জয়ী হয়েছে কাতার। ১টি ম্যাচে ড্র করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। কাতারের ফুটবল কাঠামো উন্নত। দলে ভাল ভাল ফুটবলার রয়েছে। যারা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইউরোপে খেলে। বার্সিলোনার সাবেক তারকা ফুটবলার জাভি হার্নান্দেজ একসময় কাতারের আল-সাদে খেলেছেন। পরে তিনি ওই ক্লাবের কোচও হন। জাভির অধীনে খেলা নয় ফুটবলার আছে বর্তমান কাতার দলে। মরুভূমির দেশ কাতার এ ধরনের ভেজা মাঠে খেলে অভ্যস্ত নয়। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, বৃহস্পতিবার মাঠ শুকনো থাকলে তারা আরও বেশি গোলে জিততো কি না। ২৭ মিনিটে ম্যাচে লিড নেয় কাতার। বাঁপ্রান্ত থেকে ফরোয়ার্ড ইউসুফ আবদুরিসাগ শট আটকাতে ব্যর্থ হন গোলরক্ষক রানা। প্রায় ফাঁকা পোস্টে চলে যায় বল (১-০)। ৪২ মিনিটে বাংলাদেশের পরপর তিনটি শট প্রতিহত হয়েছে কাতারের পোস্টে। ৬৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার মুসাবের শট বক্স থেকে ফিরিয়ে দেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। ৭১ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে রায়হানের থ্রু’র বলে মাথা ছুইয়েছিলেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন। বল ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক সাদ আল শিব। ফিরতি বলে আবারও হেড নেন ইয়াসিন। এবারও অল্পের জন্য বল জড়ায়নি জালে। ৭৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে সতীর্থর পাসে ছোট বক্স থেকে শট নেন জামাল ভুঁইয়া। এবারও অল্পের জন্য সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ৭৬ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের পাসে শট নেন বিপলু। ইনজুরি টাইমে (৯০+২ মিনিটে) বক্সের ভেতরে জটলার মধ্য থেকে বাংলাদেশের জালে বল পাঠান কাতারের মিডফিল্ডার করিম বাউদিয়াফ (২-০)। আর এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয় কাতারের। আর আক্ষেপে পোড়ে বাংলাদেশ।
×