ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি নেতার কবলে পাঁচ কোটি টাকার ভিপি সম্পত্তি

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১১ অক্টোবর ২০১৯

বিএনপি নেতার কবলে পাঁচ কোটি টাকার ভিপি সম্পত্তি

আবুল বাশার, শরীয়তপুর থেকে ॥ গোসাইরহাটে প্রায় ৫ কোটি টাকার সরকারী ভিপি সম্পত্তি দখল করে রেখেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা। ১ একর ৩০ শতাংশ সরকারী ভিপি সম্পত্তি দখল করে ওই বিএনপি নেতা ইতোমধ্যে সেখানে পাকা ভবনও নির্মাণ করেছেন। পুকুরের মাছ ও বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘদিনেও রহস্যজনক কারণে তাকে উচ্ছেদ না করায় রাজনৈতিক মহলসহ স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওই নেতার ভয়ে এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছে না। সরকারী ভিপি সম্পত্তি দখলকারী ওই বিএনপি নেতা বলছেন, সরকারী নিয়মনীতি মেনেই তিনি ভিপি সম্পত্তি ভোগ-দখল করছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা শীঘ্রই উচ্ছেদাভিযান পরিচালনা করবে এবং সে লক্ষ্যে কাগজপত্র প্রস্তুতির কাজ চলছে। গোসাইরহাট উপজেলা ভূমি অফিস ও ইদিলপুর ইউনিয়ন তহশীল অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলাধীন ৬৩ নং দাসের জঙ্গল মৌজার ২৭৯ নং এসএ খতিয়ানে ২৫৩ নং দাগে ৯২ শতাংশ বাড়ি ও ২৭৬ নং এসএ খতিয়ানের ৩৫৪ নং দাগের ৩৮ শতাংশ ভিটাসহ মোট ১ একর ৩০ শতাংশ জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ গ্রহণ করেন গোসাইরহাট থানা বিএনপি’র সভাপতি দাসের জঙ্গল গ্রামের মৃত খাদেম আলী সরদারের ছেলে আলাউদ্দিন সরদার। এরপর বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরদার অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তির লক্ষ্যে শরীয়তপুর জেলা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ৪৬/২০১২। কিন্তু চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখে আদালত উক্ত মামলা খারিজ করে দেন। এদিকে সরকারী ভূমি লিজের বিধি-বিধান তোয়াক্কা না করে পাকা ইমারত নির্মাণসহ লিজের শর্ত ভঙ্গ করায় গত ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার লিজ বাতিল করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাকে উক্ত সম্পত্তি থেকে সরানো হয়নি। বর্তমানে উক্ত জমির প্রতি শতাংশের মূল্য ৪ লাখ টাকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। সেই হিসেবে কোন প্রকার বৈধতা ছাড়াই প্রায় ৫ কোটি টাকার সরকারী ভিপি সম্পত্তি ভোগ-দখল করে রেখেছেন ওই বিএনপি নেতা। সম্প্রতি তিনি সরকারী এই বাড়ির পুকুর থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মাছ ও বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গাছ কেটে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্তকালে ইদিলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মামুন হোসেন প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। ওই কর্মকর্তা তার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে আলাউদ্দিন সরদারের বিরুদ্ধে গোসাইরহাট থানায় ২৯ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ১১ দিন অতিবাহিত হলেও গোসাইরহাট থানা পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরদারের মেয়ে-জামাই পুলিশ কর্মকর্তা বিধায় এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কালক্ষেপণ করছে। আলাউদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এই সম্পত্তি আমার পিতার নামে লিজ বন্দোবস্ত রয়েছে। বর্ণিত অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় উপজেলা ভূমি অফিস আমাদের কাছ থেকে লিজের টাকা গ্রহণ করছে না। আমাদের লিজ বাতিল হয়নি। আমরা অর্পিত সম্পত্তি থেকে কোন গাছ বা মাছ বিক্রি করিনি। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরদারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ বলে জানান। এ বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মতিউর রহমান বলেন, সরকারী সম্পত্তি থেকে গাছ ও মাছ চুরি করা গ্রহণযোগ্য অপরাধ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই অভিযোগে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারে। হয়ত বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ আইনের সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, লিজকৃত সম্পত্তির কোন শ্রেণী বা আকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। আলাউদ্দিন সরদার নামে সেই ব্যক্তি লিজকৃত জমিতে পাকা ইমারত নির্মাণ করে লিজের শর্ত ভঙ্গ করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে তার লিজ বাতিল করেছেন। সরকারী ভিপি সম্পত্তি থেকে তাকে উচ্ছেদ করার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে আমার নিকট কাগজপত্র প্রেরণ করলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
×