ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে এরা কারা?

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১১ অক্টোবর ২০১৯

সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে এরা কারা?

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। অপরাধ ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলছে এলাকার নানা কর্মকা-। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চিহ্নিত অপরাধীরা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেলওয়ের টেন্ডারবাজি, জুয়া ও মাদকের কারবার গড়ে তুলেছে। এলাকায় ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে অনেকে এখন কোটিপতি বনে গেছেন। সম্প্রতি এই চক্রটিই ওই এলাকায় মিছিল করে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দিয়েছে- এ নিয়ে এলাকায় চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য যারা চিহ্নিত মাদক কারবারি, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজি করে কোটিপতি বনেছেন তারা কিভাবে সমাজে সস্ত্রাস, মাদক নিয়ন্ত্রণ করবে। সর্বশেষ বুধবার এ চক্রটির ব্যানারেই ওই ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি মিছিল। সাধারণ মানুষের অনেকে না বুঝে সে মিছিলের ব্যানার দেখেই অংশ নেয়। রাজশাহী মহানগর যুবলীগ এ সংক্রান্ত কোন কর্মসূচী এখনও গ্রহণ না করলেও যুবলীগের নগর সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবুর নিজস্ব ব্যানারে এ মিছিলটি বের করা হয়। ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে সরকারের চলমান দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাস দমনকে স্বাগত জানানো হয়। তবে এ মিছিলের অগ্রভাগে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপরাধের অভিযোগ। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। মহানগর যুবলীগের একাধিক সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা আশরাফ বাবুর নেতৃত্বে নগরের শিরোইল কলোনি এলাকা থেকে দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী একটি র‌্যালি বের করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যায় মাদক ও সন্ত্রাসের হোতা হিসেবে পরিচিত জাকির হোসেনকে। বিএনপি-জামায়াত শাসন আমলে তৎকালীন মনির কাউন্সিলরের হাত ধরে রাজশাহী নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিরোইল কলোনি ও বনগ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা মাদক, জুয়া, ছিনতাই ও অসামাজিক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করত এই জাকির। সে দুইবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেছে। ২০০৮ সালের পর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে অপরাধীদের অভয়াশ্রম খ্যাত এই ওয়ার্ডটিতে সাধারণ মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। তবে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার কারণে আবারও মাদক, জুয়াসহ সব ধরনের অপকর্মের ডেরায় পরিণত হতে শুরু করেছে ওই ওয়ার্ডটি। এরই মধ্যে এই চক্রটি টেন্ডারবাজিসহ মাদক ও জুয়ার অবৈধ কার্মকা-ে অল্পদিনেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বনে গেছে কোটিপতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিরোইল কলোনি, হাজরা পুকুর, ডাবতলা ও পাবনা পাড়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, জাকির এই এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। সে এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও তার নিয়ন্ত্রণে এই এলাকাগুলোতে নিয়মিত বসে জুয়ার বোর্ড। সেই জাকিরকে এখন যুবলীগের বিভিন্ন সভা সমাবেশে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যার ব্যানারে এ মিছিল বের করা হয় সেই আশরাফ বাবু নিজেই নজরদারিতে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে গত কয়েকদিন আগে তাকে শোকজ করাও হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যুবলীগ নেতা আশরাফ বাবুর নেতৃত্বেই নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকা থেকে দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী একটি র‌্যালি বের করা হয়। মহানগর যুবলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছে, নিজের করা টেন্ডারবাজি ঢাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে এই মিছিল আয়োজন করে আশরাফ বাবু। মিছিলে টাকার বিনিময়ে লোক ভেড়ানো হয়। এ কারণে মিছিলে নগর আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের অন্য শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই আশরাফ বাবু পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা ও প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। সরাসরি টেন্ডারের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এলটিএম এর মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে টাকা লুটপাট করেছে। মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবু নগরীর ডাবতলা হাজরা পুকুর এলাকায় ছোট্ট একটি ওষুধের দোকানের ব্যবসায়ী ছিল। সেই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। নগরীর শিরোইল এলাকায় নিজের ব্যক্তিগত আলিশান কার্যালয়ে রয়েছে সিসি ক্যামেরাও। নগরীর আসাম কলোনি এলাকায় রয়েছে তার বিলাসবহুল বাড়ি। এ বিষয়ে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, ওয়ার্ডে কে কোন মিছিল করেছে তা জানা নেই। কেউ করে থাকতে পারে তবে তাদের সঙ্গে নগর যুবলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কোন অপরাধীর যুবলীগে স্থান হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
×