ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১০ অক্টোবর ২০১৯

মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বের এই চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোনো সময় প্রায় ৬ লাখ মানুষের প্রশমন সেবার প্রয়োজন। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রাপ্যতার বিচারে পৃথিবীর ৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম। সারা দেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এই সেবার প্রচলন আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার ২০০৮ সাল থেকে এ সেবা প্রদান করে আসছে। বিশ্ব হসপিস এ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্য্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মোঃ জিলন মিঞা সরকার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ, লেখিকা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শারমিন লাকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আগামীকাল শনিবার পালিত হবে বিশ্ব হসপিস এ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার হ্রাস করতে পারে নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্ত অন্তিমশয্যায় শায়িত রোগীদের শারীরিক বেদনা। জোগাতে পারে মানসিক সমর্থন, স্বস্তি ও বাস্তবকে মেনে নেওয়ার শক্তি, আধ্যাত্মিক শান্তি। আর সেই সঙ্গে রোগীর পরিবারের জন্যও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি তাদের জীবনে নতুন দিন আনে না; কিন্তু তাদের প্রতিটি দিনে যোগ করে নতুন জীবন। উপাচার্য বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার স্বাস্থ্যসেবা এমন একটি ক্ষেত্র, যার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি এমন একটি উদ্যোগ যা জীবন সংশয়ী রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের পরিবারের জীবনের মানোন্নয়ন করা, যা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্তরণ এবং দক্ষ নির্ণয়ের মাধ্যমে ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ সমূহের চিকিৎসা এবং শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকে। উপাচার্য আরও বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগী এবং রোগীর পরিবারের ব্যথা নিরাময়, উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদানে জোর দিয়ে থাকে। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগের শেষ পর্যায়ে যেমন, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, বৃক্ক এবং যকৃত ও ক্যান্সার রোগীদের কষ্ট হতে মুক্তি প্রদানে মূল ভুমিকা পালন করে থাকে। প্যালিয়েটিভ সেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় বিষয়ে তুলে ধরে প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে হাতে কলমে শেখানো হবে প্রান্তিক রোগীদের ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, উপযুক্ত কথোপকথন এবং সার্বিক সেবার বিভিন্ন বিষয়। চিকিৎসাসেবা কর্মীরা নিরাময় অযোগ্য রোগীদের যে গভীর কষ্ট এবং দুর্দশা পর্যবেক্ষণ করেন, তার যথাযথ যত্ম নেয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, তাদের দক্ষতা শুধুমাত্র ব্যথা কমানো নয়, বরং এর গভীরে কী হচ্ছে, তা কিভাবে বর্ণনা করতে হবে এবং রোগী ও তার পরিবারকে কিভাবে আশা যোগাতে হবে সে ক্ষেত্রেও দক্ষতা বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় চরম আরোগ্য-নির্ভরতার সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে নতুন আশার সম্ভাবনা নিয়েই এগিয়ে এসেছে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ অথবা ‘প্রশমন সেবা’র দর্শন। যখন কোনও রোগীর রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তখন তার রোগ সংক্রান্ত উপসর্গগুলো নিরাময় বা সুরাহা করাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলে। সমাজসেবা ও চিকিৎসাব্যবস্থার একটি যথাযথ সম্মিলনে কতিপয় উন্নয়নশীল দেশে যে ‘কমিউনিটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার’-এর ধারণা গড়ে উঠেছে, তা বাংলাদেশেও বহু পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয় সেসব রোগীদের যাদের দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুরোগ। যেমন- স্ট্রোক, প্যারালাইসিস আছে। অথবা যারা এইডস বা ক্যান্সারের মত জটিল রোগে আক্রান্ত। যেসব রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। কিন্তু এসব রোগের উপসর্গগুলোর অন্যতম হচ্ছে তীব্র ব্যথা, যা অনেক কষ্টকর। এ রোগীরা যেহেতু জানতে পারে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তার মানসিক কষ্টও কম নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা শারীরিকভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন। অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দীন আরো বলেন, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কষ্ট লাঘব করে চিকিৎসাসেবা এবং সহানুভূতি ও মমতার সমন্বয়ে রোগীকে পরিচর্যা করাই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের লক্ষ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ার বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবাখাতে তুলনামূলক নতুন একটি ধারণা। ‘ভাল হবার নয়’ এমন রোগী ও তার পরিবারকে চিকিৎসা সেবা ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এর মাধ্যমে যেসব রোগের কোনো চিকিৎসা নেই মৃত্যু অবধারিত সেই সব রোগের রোগীদেরকেও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেবা-যতœ করা তথা রোগীর একটি ব্যাথামুক্ত মৃত্যু নিশ্চিত করা। প্যালিয়েটিভ কেয়ার এর ধারণামতে ‘কিছু করার নেই’ একটি ভুল, পলায়নপর মনোবৃত্তির বাক্য। একজন মানুষের মানবিক দায়িত্ব হিসেবে কিছু না কিছু নিশ্চয়ই করার আছে। এই রোগীদের বেঁচে থাকার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা বা সমাজসেবা ব্যবস্থায় পরিচর্যা করতে হবে। ওদের কষ্ট, সমস্যা লাঘবে সচেষ্ট থাকতে হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস বি ব্লকের সামনে থেকে একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া স্যারের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।
×