ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাশেদুল হক

রোহিত যেখানে ইতিহাসে প্রথম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ৯ অক্টোবর ২০১৯

রোহিত যেখানে ইতিহাসে প্রথম

বিশাখাপত্তমে ১৭৬ ও ১২৭ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দিয়েছেন রোহিত শর্মা। গড়েছেন নতুন ইতিহাস। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪২ বছরের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নেমেই দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির এমন কীর্তি আর কারও নেই। আর গত ৪১ বছরে কোন ভারতীয় ওপেনারের এমন কীর্তি এই প্রথম। সর্বোপরি ওপেনিং কিংবা যে কোন পজিশন মিলিয়ে ষষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে দুই ইনিংসে অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন রোহিত। এর মধ্যে এমন কীর্তি তিনবার আছে সুনীল গাভাস্কারের। দুবার রাহুল দ্রাবিড়ের। ভারতের হয়ে প্রথম যিনি এই কীর্তি গড়েছিলেন সেই বিজয় হাজারের পাশে বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে ও রোহিতের নাম আছে একবার করে। সবশেষ ১০৭৮-১৯৭৯ মৌসুমে গ্রেট সুনীল গাভাস্কার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমন কীর্তি গড়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি রোহিতের ক্যারিরের পঞ্চম সেঞ্চুরি। ১৪৯ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১২৭ রান করেছেন। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ২৪৪ বলে ১৭৬ রান। প্রথম ইনিংসে হাঁকিয়েছিলেন ২৩ চার ও ৬ ছক্কা। অর্থাৎ দুই ইনিংসে তার মোট বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মোট ৪৮টি। এটিও নতুন রেকর্ড। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন পূর্বসূরি নভ্যেজিত সিং সিধুকে। রোহিত ১৩ ছক্কা মেরে রেকর্ডের পাতায় ঠাঁই করে নেন। এক টেস্টে কোন নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড ছিল ওয়াসিম আকরামের, ১২টি। ওপেনিংয়ের অভিষেকে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও এখন রোহিতের। দুই ইনিংস মিলিয়ে রোহিতের রান ৩০৩। ২০০৯ সালে গল টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার তিলকারতেœ দিলশানের ২১৫ রান ছিল আগের রেকর্ড। এ ছাড়া রোহিত প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান যিনি টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০Ñ ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরির হাঁকালেন। আর সর্বোপরি ইতিহাসের সপ্তম ক্রিকেটার এমন কীর্তি গড়েন। আগের ছয়জন হলেন ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, মার্টিন গাপটিল, আহমেদ শেহজাদ, শেন ওয়াটসন ও তামিম ইকবাল। রোহিত চতুর্থ ভারতীয় যিনি টেস্টে ওপেন করতে নেমেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। অন্যরা হলেন শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল ও পৃথ্বি শ। রাহুল দ্রাবিড়ের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ঘরের মাঠে টানা সাতটি সেঞ্চুরির মালিক এখন রোহিত। রঙিন পোশাকের ওয়ানডে ও টি২০তে ভারত তো বটেই আধুনিক বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার রোহিত শর্মা। ব্যাট হাতে রানের ফল্গুধরা বইয়ে দিচ্ছেন, গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। কিন্তু পাঁচ বছরে ২৭টি টেস্টে তাঁকে মিডলঅর্ডারে খেলানো হয়েছে। সাদা পোশাকে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে বার বার দল থেকে বাদ পড়েছেন। রোহিত যে আজন্ম এক ওপেনার, অবশষে সেটি বুঝতে পারল ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট। ক্যারিয়ারের ২৮তম টেস্টে এসে প্রথম ওপেনিংয়ের সুযোগেই বাজিমাত করলেন ৩২ বছর বয়সী তারকা। মুগ্ধ অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেন, ‘টেস্টে প্রথম ওপেন করতে নেমে রোহিত সত্যি অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। আমরা জানতাম ও পারবে। বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম। অবশেষে পাওয়া সুযোগ সে শতভাগ কাজে লাগিয়েছে। সঙ্গে মায়াঙ্ক আগারওয়ালও দারুণ খেলেছে। ওপেনিংয়ে ওদের দুর্দান্ত ব্যাটিং আমাদের কাজটা সহজ করে দেয়।’ ওয়ানডেতে রোহিতের সঙ্গে শিখর ধাওয়ান মোটামুটি সেট। দু’জনই চমৎকার ব্যাটিং করছেন। কিন্তু টেস্টে ওপেনিং নিয়ে বেশ ভুগছিল ভারত। মুরলি বিজয়, শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, পৃথ্বি শ’ অনেকেই এসেছেন থিতু হতে পারেননি। এবার তাই নবীন আগারওয়ালের সঙ্গে ওয়ানডের সফল ওপেনারকে নামিয়ে দেয়া হয়। তবে টেস্টেও রোহিতকে দিয়ে ওপেন করতে পারেন, এমন ইঙ্গিত নাকি তিনি আরও দুই বছর আগেই পেয়েছিলেন। প্রথম টেস্টে জয়ের নায়ক বলেন, ‘বছর দুই আগে আমাকে এটা জানানো হয়েছিল যে, ভবিষ্যতে কখনও আমি ওপেন করতে পারি। সেই কারণে নেটে আমি নতুন বলেও অনেক প্রাকটিস করতাম। তাই এখন ওপেন করার দায়িত্ব পেয়ে অবাক হয়েছি, বলব না।’ ধারণা করা হয় বছর দুয়েক আগে থেকেই তাঁকে প্রস্তুত করেছিলেন আসলে প্রধান কোচ রবিশাস্ত্রী। এবার ঘরের মাটিতে অধিনায়ক কোহলির সমথর্নে সেটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। হিটম্যান এখন টেস্টেও ধারবাহিকতা ধরে রাখতে চান, ‘একটা নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে খেলা আমার কাজ। ওরা (টিম ম্যানেজমেন্ট) আমার থেকে সেটাই আশা করে। সেই দায়িত্ব যাতে পূরণ করতে পারি, ভবিষ্যতে তার যথাসাধ্য চেষ্টা আমি চালিয়ে যাব।’ রোহিতের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের হাত ধরে দলীয় ছক্কার রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছে ভারত। বিশাখাপত্তমে দু’দলের ব্যাটসম্যানরা মিলিয়ে মোট ৩৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। একক কোন টেস্টে যেটি সর্বোচ্চ ছক্কার নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এতদিন এক টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড ছিল ৩৫টি। ২০১৪ সালে শারজায় পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে এতগুলো ছক্কা মেরেছিল দু’দেশের ব্যাটসম্যানরা। এবার সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। এর মধ্যে রোহিত শর্মা দুই ইনিংসে একাই মেরেছেন ১৩টি ছক্কা। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন ১২৭ রান। আর ভারতের মাটিতে এর আগে কোন টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কার মার ছিল ২০টি। ২০০৯ সালে মুম্বাইয়ে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ওই ছক্কাগুলো মারা হয়েছে। এ ছাড়া ওই বছরই রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারতের ব্যাটসম্যানরা মিলেও হাঁকিয়েছিলেন ২০টি ছক্কা। এবার মারা হলো আরও ১৭টি বেশি। রোহিত শর্মা ১৩ ছক্কা মেরেও রেকর্ডের পাতায় ঠাঁই করে নেন। এক টেস্টে কোন নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড ছিল ওয়াসিম আকরামের, ১২টি। ছক্কা বৃষ্টির এই ম্যাচে কীর্তি গড়েছেন মোহাম্মদ শামিও। ১৯৯৬ সালের পর আর কোন ভারতীয় বোলার চতুর্থ ইনিংসে বোলিং করে ৫ উইকেট নিতে সক্ষম হয়নি। সর্বশেষ ’৯৬ সালে জাভাগাল শ্রীনাথ আহমেদাবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ২৩ বছর অপেক্ষার পর তার পাশে নাম লিখিয়েছেন শামি। এ ছাড়া বাঁহাতি বোলার হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত ২০০ উইকেট নেয়ার নতুন রেকর্ড গড়েন রবিন্দ্র জাদেজা। এতদিন রেকর্ডটা ছিল রঙ্গনা হেরাথে। ২০০ উইকেট নিতে সাবেক শ্রীলঙ্কান বাঁহাতি স্পিনারের লেগেছিল ৪৭ ম্যাচ। জাদেজা মাইলফলক ছুঁয়েছেন নিজের ৪৪তম টেস্টে। এ তালিকায় পরের দুটি স্থানে আছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল জনসন ও মিচেল স্টার্ক। জনসনের লেগেছিল ৪৯ টেস্ট, স্টাকের্রর ৫০। বিষেন সিং বেদি ও ওয়াসিম আকরামের লেগেছিল সমান ৫১ ম্যাচ। বিশাখাপত্তমে ৮ উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুত ৩৫০Ñশিকারে লঙ্কান গ্রেট মুত্তিয়া মুরলিধরনের পাশে নাম লিখিয়েছেন। বিশাখাপত্তমে প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রানের বিনিময়ে ৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। সাড়ে তিন শ’ শিকারে আশ্বিনের লাগল ৬৬ টেস্ট। এ ল্যান্ডমার্কে পা রাখতে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক মুরলিকেও সমান ম্যাচ খেলতে হয়েছিল। অর্থাৎ দ্রুত ৩৫০Ñ শিকারে রেকর্ডটা এখন যৌথভাবে দু’জনের দখলে।
×