ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল কারিগরি শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৪ অক্টোবর ২০১৯

বেহাল কারিগরি শিক্ষা

যে কোন দেশের কারিগরি শিক্ষার মূল লক্ষ্যই থাকে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। পরবর্তীতে যা কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সঙ্কটের কারণে এ শিক্ষার মান যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা শুধু অপ্রতুলই নয়, এর আনুষঙ্গিক কার্যক্রমেও রয়েছে হরেকরকম ঘাটতি। মানসম্মত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি, শ্রেণীকক্ষের বেহাল দশায় যে দৃশ্য সামনে আসে তাতে যথার্থ মানোন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তার কোনটাই দেখা যায় না। সরকারী তথ্য অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর হার মাত্র ১৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মাত্রা বিবেচনায় এই সংখ্যা নাকি মাত্র ৮.৪৪ শতাংশ। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার স্বল্পতায় যে দৈন্যদশা প্রতীয়মান, তাতে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক কর্মসংস্থানে যাওয়া তো দূরের কথা, নিজ দেশের অভ্যন্তরেও দক্ষতার পরিচয় দিতে হিমশিম খেতে হয় সনদ পাওয়া অদক্ষ শিক্ষার্থীদের। সরকারী বিভিন্ন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে শিক্ষক সঙ্কট এত বেশি, এক শিফটের শিক্ষককে অন্য শিফটেও কোনরকমে কাজ চালাতে হয়। আবার শিক্ষকদের গুণগতমান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। আর এমন দূরবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী কারিগরি বিদ্যা আয়ত্ত করে তা নিম্নমানের। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭ হাজার কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ লাখের ওপরে শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করলেও হরেকরকম সমস্যার আবর্তেও পড়তে হয়। এছাড়াও ৩ থেকে ৬ মাসের সংক্ষিপ্ত কোর্সেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। তার ওপর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্তও কারিগরি বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকে। তবে আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদের ৩-৬ মাস সনদপত্র মূল কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে কোনভাবেই মানানসই নয়। এমন অনেক অসঙ্গতি মূল শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে বিপাকে ফেলছে। বাংলাদেশের প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ছাত্রদের তুলনায় দিন দিন ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায়ই সমান। সেখানে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশ নেয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমই শুধু নয়, আরও নিচের দিকে যাচ্ছে। কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ২০১৩ সালে মেয়েদের হার ছিল ২৮.২৮ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ২৪.৭৬ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এমনিতেই কম। সেখানে মেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, সরকার ইতোমধ্যে ২০২১ সাল থেকে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি টেকসই উন্নয়ন ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষার অন্তত একটি বিষয় যুক্ত করার ব্যাপারে সরকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেন। যাতে কোন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে না পারলেও তার টেকনিক্যাল দক্ষতায় কর্মসংস্থান পেতে পারে। তেমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এই নতুন কর্ম প্রকল্পকে বিবেচনায় আনা হয়েছে। দেশের আগামী প্রজন্মকে দক্ষ ও পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যথার্থভাবে অগ্রাধিকার দিতে পারলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান অনেক সঙ্কট নিরসন হবে। দেশও পাবে দক্ষ ও উন্নত এক মানবসম্পদ।
×