ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৩ অক্টোবর ২০১৯

  মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারাদিয়ে জীবনবাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেও বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আকবর মোল্লাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি আকবর মোল্লার সহযোদ্ধাসহ তার পরিবারের সদস্যরা। তাই সকলের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকবর মোল্লাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আধুনা গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে টানা ১৫ মাস শষ্যাশয়ী থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা আকবর মোল্লার একটাই দাবি ছিলো-ভাতার জন্য যুদ্ধ করিনি, মৃত্যুর পরে যেন আমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়”। বুধবার বিকেলে শষ্যাশয়ী আকবর মোল্লার মৃত্যুর পর তার পরিবারেরও আশা ছিলো তাকে (আকবর মোল্লা) শেষ সম্মানটুকু জানানো হবে। যেকারণে মৃত্যুর পর স্বজনরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেও শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই আকবর মোল্লাকে দাফন করেছেন। এতে করে শোকাহত পরিবারের পাশাপাশি জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধা আকবর মোল্লার সহযোদ্ধা অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ের যাচাই বাছাইতে আকবর মোল্লার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকা সত্বেও এখনও গেজেটভূক্ত হয়নি। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, দেশ স্বাধীনের পর কর্মস্থলের সুবাদে আকবর মোল্লা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি। সম্প্রতি সময়ের বাদ পরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে আকবর মোল্লার নাম থাকলেও নানাকারণে সরকারীভাবে তা স্থগিত থাকায় এখনও গেজেটভূক্ত হয়নি। ফলে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও শুধু গেজেট না হওয়ার অজুহাতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই আকবর মোল্লাকে দাফন করা হয়েছে। এতে তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) চরমভাবে ব্যথিত হয়েছেন। গৌরনদী উপজেলার আধুনা গ্রামের ধনু মোল্লার পুত্র আকবর মোল্লা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মে সর্বপ্রথম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাক সেনাদের সাথে একাধিকবারের সম্মুখ যুদ্ধে তিনি (আকবর মোল্লা) বীরত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। নিজের জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে আকবর মোল্লা সেদিন বিজয় পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। গৌরনদীর সীমান্তবর্তী মুলাদী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা বীর প্রতীক ও তার সহযোদ্ধাদের নামের একটি স্মৃতিফলকেও আকবর মোল্লার নাম উল্লেখ রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর জীবিকার তাগিদে আকবর মোল্লা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। কর্মস্থলের সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি। সম্প্রতি সময়ের বাদ পরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে আকবর মোল্লার নাম টিকে থাকলেও নানাকারণে সরকারীভাবে তা স্থগিত থাকায় এখনও গেজেটভূক্ত হয়নি। মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিজবাড়িতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শষ্যাশয়ী থাকা অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর মোল্লা এ প্রতিনিধির কাছে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলেছেন, ভাতার জন্য যুদ্ধ করিনি। স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চাই। জীবিত অবস্থায় আমার নাম তালিকাভূক্ত হিসেবে দেখে যেতে পারবো না, এটাই বড় কস্ট। তবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৃত্যুর পর আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়, এটাই আমার দাবি। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, আকবর মোল্লার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করেছি। আকবর মোল্লা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও এখনও তার নাম গেজেটভূক্ত হয়নি। তাই তার জীবনের শেষইচ্ছা মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি নিজেও খুব কস্ট পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ আকবর মোল্লা (৭৩) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বুধবার বিকেলে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ৩ কন্যা রেখে গেছেন। আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা মরহুমের নিজবাড়িতে কুলখানি উপলক্ষে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। তার মৃত্যুতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদীন, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু, আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ লিটন, সাংবাদিক খোকন আহম্মেদ হীরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
×